গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলন হয় ভোটবাক্সে। তাই নির্বাচন ভীষণভাবে মানুষকে আলোড়িত করে তোলে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে আশা আকাঙ্খার স্বপ্নিল ছবি। কখনো তা দৃশ্যমান হয়, আবার কখনো হয় না। তবুও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া আমজনতার উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা উৎসাহ জাগায়। তাই সারাদেশের মতো স্বাধীনতার প্রবেশদ্বার আন্দোলন সংগ্রামের পীঠস্থান যশোর খুলনা ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ভোটে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন। নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোট পন্ডিতরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির দাবাখেলায় কে কখন ওঠে আর কে নামে বলা মুশকিল। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে নানা হিসাব নিকাশ হচ্ছে। চলছে ভোট রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশেষ করে প্রধান দু’টি নির্বাচনী জোট আওয়ামী লীগসহ মহাজোট এবং বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত বিশ্লেষণ করেই প্রার্থী মনোনয়ন দিচ্ছে। নির্বাচনী মাঠেও নেতারা নামছেন কৌশলী হয়ে। এ অঞ্চলের মোট ৩৬টি আসনের মধ্যে ৩২টিতে আওয়ামী লীগ ও বাকিটা শরিকদের দিয়ে মনোনয়ন চুড়ান্ত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে কোন আসনে কোন দলের কোন প্রার্থীর কি অবস্থান ছিল, বর্তমানে কার কি অবস্থান এবং আগামীতে কোথায় কার অবস্থান হবে-এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অঙ্ক কষছেন। সরল অঙ্কের মতো দৃশ্যতঃ রাজনীতির হিসাব মনে হয় সহজ কিন্তু বাস্তবে বড়ই গরল। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুল হলে সহজ সরল ভোটাররা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমর্থন দিতে কার্পণ্য করেন না। আবার কোনো কারণে আহত হলে সেইসব সহজ সরল মানুষ যদি একবার বেঁকে বসেন তাহলে তাদের সোজা করা হয় কঠিন। একথা খুব ভালো করেই জানেন ভোট রাজনীতির ধারক বাহকরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় আসন সংখ্যা আগে ছিল ৩৭টি। সাতক্ষীরার ১টি আসন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির পালাবদলের আনন্দে মাতোয়ারা জনগণ অপ্রতিহত গতিতে অবিস্মরণীয় স্বতঃস্ফুর্ততা ও খুশীর বন্যায় ভেসে ভোটবাক্সে একরাশ প্রত্যাশার ছাপ ফেলে। আওয়ামী লীগসহ মহাজোট আসন পায় ৩৪টি। বিএনপির ভোট বাক্সে অতীতের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ ভোটাররা প্রতিবাদের চিহ্ন এঁকে দেয়। সে বার বিএনপি পায় মাত্র ২টি। অথচ এর আগে অবশ্য ছিল একেবারেই উল্টো চিত্র। নির্বাচন অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৯১সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩৭টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৬টি, বিএনপি ১৩টি ও জামায়াত ৮টি আসন পায়। সে বার যশোর সদর ও মাগুরার শালিখার উপ-নির্বাচনে বিএনপি আরো ২টি আসন পেয়ে দাঁড়ায় ১৫টিতে। আর আওয়ামী লীগের দু’টি কমে হয় ১৪টি। পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম সংসদ নির্বাচনে ৩৭টির মধ্যে আওয়ামীলীগ ২২টি, বিএনপি ১২টি, জাতীয় পার্টি ১টি, জামায়াত ১টি ও স্বতন্ত্র ১টি আসন পায়। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আসন সংখ্যা কমে যায়। তারা পায় মাত্র ৮টি। ভোট রাজনীতিতে জোট ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগসহ মহাজোট ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের মতোই অভাবনীয় ফল পায়। তারা ৩৬টির মধ্যে আসন পায় ৩৪টি। এটি এই অঞ্চলে ছিল আওয়ামীলীগসহ মহাজোটের চমক। সে বার ওয়ান ইলেভেনের পর পালাবদলে মাতোয়ারা হয়ে ভোটাররা এ অঞ্চলে মহাজোটের পক্ষে রায় দেন। সর্বশেষ একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৬টি আসনের মধ্যে ৩৩টি আওয়ামী লীগ ও বাকি ৩টি দখলে নেয় মহাজোটের শরিক দল। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ অঞ্চলে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে তার হিসাব নিকাশ করা এখনই কঠিন হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন