চারিদিকে বাজতে শুরু করেছে ভোটের দামামা! এরই মধ্যে খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়ে গেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দুয়ারে হাজির হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। বসে নেই রাজনৈতিক দলগুলোও। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সরকার গঠনের পর নানা পরিকল্পনা নিয়েও চলছে তাদের ইশতেহার প্রণয়ন।
এদিকে, খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পঞ্চানন বিশ্বাস (খুলনা-১), শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল (খুলনা-২), মন্নুজান সুফিয়ান (খুলনা-৩), আবদুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪), নারায়ণ চন্দ্র চন্দ (খুলনা-৫), আকতারুজ্জামান বাবু (খুলনা-৬)।
অপরদিকে খুলনার দু’টি আসনে আ’লীগের নতুন চ্যালেঞ্জ। বিতর্কে জড়িয়ে বাদ পড়লেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শেখ মো. নুরুল হক। দু’জনেই আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেও এবার দলীয় ‘মনোনয়ন বঞ্চিত’ হয়েছেন।
সংশি¬ষ্টরা মনে করছেন, কৌশলগত কারণে এ দুটি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। ফলে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলায় নতুন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছে দলটি। জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়াসহ স্থানীয়ভাবে বিতর্কিতদের এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
এদিকে খুলনা-২ সদর আসনে দলকে সংগঠিত করা, নেতাকর্মীদের চাঙা রাখার ক্ষেত্রে মিজানের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। দশম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় মানুষের কাছে মিজানের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়।
রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুস্পুত্র শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। এরই মধ্যে তিনি কর্মী-সমর্থকদের সাথে মতবিনিময় শুরু করেছেন।
অপরদিকে খুলনা-৬ আসনে শেখ মো. নুরুল হক চারবার নির্বাচন করেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ ও ২০১৪ সালে তিনি বিজয়ী হন। এবার অনেকটা চমক দেখিয়ে সেখানে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু। এখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থীর সাথে তাকে ভোটযুদ্ধে নামতে হতে পারে। মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম সোহাগ বলেন, দলকে বিজয়ী করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী ঘোষণার পরই নৌকার পক্ষে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়েছেন। বিভিন্ন আসনে যারা মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন সকলকে সাথে নিয়েই এক সাথে প্রচারণা শুরু করা হবে। দলের কৌশল নির্ধারণ করতে দলীয় সভা আহবান করা হয়েছে।
অপরদিকে ইশতেহার বিষয়ে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি মহাসচিব শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অধিকাংশ সময়েই ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ভুলে যান রাজনৈতিক নেতারা। ক্ষমতায় টিকে থাকা ও বিরোধী দল দমন হয় তখন তাদের মূল ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও দাবি করবো এবার ইশতেহারে রাজনৈতিক দলগুলো খুলনায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে এক হাজার বেডে উন্নীতকরণ, আবু নাসের হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা, জেনারেল হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগসহ খুলনার উন্নয়নের দিকগুলো উল্লেখ রাখার।
‘খুলনায় নতুন নতুন কলকারখানা তৈরি হচ্ছে। সেগুলোতে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের বিষয়টি থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষের বিষয়টি ইশতেহারে উঠে আসা উচিত,’ বলেও মনে করেন তিনি।
খুলনার নাগরিক নেতা অ্যাড. কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, রূপসা ও ভৈরব নদের তীর ঘেঁষে শহররক্ষা বাঁধ, পরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণসহ খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের বিষয়ে ইশতেহারে থাকতে হবে। এছাড়া ধীর গতিতে চলমান খানজাহান আলী (র.) বিমান বন্দরের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে বিমান বন্দরটি চালুর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে ইশতেহারে থাকা প্রয়োজন। খুলনায় আইটি ভিলেজ বাস্তবায়নের বিষয়টির স্পষ্ট উল্লেখ প্রয়োজন।
খুলনা উন্নয়ন ফোরামের মহাসচিব এম এ কাশেম বলেন, আমরা ইশতেহারের মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ ও পরিকল্পিত খুলনা চাই। উন্নয়নশীল দেশের একটি বিভাগীয় শহরের যেসব সুবিধা থাকে, তার সবই খুলনায় চাই। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) কয়েক বছর পরপর পরিকল্পনা করে, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করে না।
‘সমপ্রতি যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তার বাস্তবায়নের ব্যাপারে যেন রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে উল্লেখ থাকে। খুলনার তেরখাদা ও বটিয়াঘাটার দু’টি অর্থনৈতিক জোনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ইশতেহারে যেন উল্লেখ থাকে।’ খুলনার অর্থনৈতিক উন্নয়নে কলকারখানায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের কথা ইশতেহারে উল্লেখের দাবিও করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন