একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে ৩টিতে কাদের সিদ্দিকীসহ তার পরিবারের পাঁচজন সদস্য ভোটে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গত বুধবার জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ নিজ এলাকায় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এই আসনগুলো হলো টাঙ্গাইল ৪, ৫ ও ৮।
টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন সিদ্দিকী পরিবারের তিন ভাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা সাবেক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) ও করটিয়া সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) আজাদ সিদ্দিকী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসনে সিদ্দিকী পরিবার থেকে বাবা-মেয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার কুঁড়ি সিদ্দিকী এই আসন থেকে লড়বেন বলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
অপরদিকে, টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসন থেকে কাদের সিদ্দিকীর ভাই মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়পত্র জমা দিয়েছেন।
লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী আসন থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের বিজয়ী হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব পান তিনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ, মহানবী (সা.), তাবলীগ জামায়াত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ আনা হয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে ২২টি মামলা হয়। এরমধ্যে ১৭ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। আইনি প্রক্রিয়ায় এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান তিনি। দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলনের মুখে তার মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন লতিফ সিদ্দিকী।
২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি তার আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী এমপি নির্বাচিত হন। এবারও এ আসনে নৌকার মাঝি রয়েছেন হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী। নির্বাচনী এলাকায় লতিফ সিদ্দিকীর এখনও রয়েছে জনপ্রিয়তা। তারপর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে লতিফ সিদ্দিকীর বিপরীতে রয়েছেন আপন দুই ভাই কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী।
কাদের সিদ্দিকী (বীরোত্তম) ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) আসন থেকে নৌকা নিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে তিনি কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ দল গঠন করার পর ২০০১ এবং ২০০৮ সালে নিজ দলের হয়েই ভোটে লড়েন। এর মধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসন থেকে তিনি মোট দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তার দল ঐক্যফ্রন্টের শরিক। এর আগে ঋণখেলাপির অভিযোগে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। একই কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে না পরলে যাতে তার বিকল্প হিসেবে তার মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী অংশ নিতে পারেন; সে কারণেই মেয়েও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
কাদের সিদ্দিকীর অপর ভাই মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে নৌকা ও ধানের শীষের বিপরীতে লড়বেন। এর আগে ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন মুরাদ সিদ্দিকী। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের রাজনীতিতে তিনি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা শোনা গেলেও অবশেষে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই লড়ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন