শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

নরসিংদীতে হেভিওয়েট প্রার্থীরা

সরকার আদম আলী নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের কাছে হেভিওয়েট প্রার্থীদের একটি বিশেষ গুরুত্ব থাকে। ব্যক্তিগত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, দলীয় পদমর্যাদা এবং লোকপ্রিয়তা বিবেচনায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে নরসিংদী জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি আসনে রয়েছে আওয়ামী লীগ বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব:) নজরুল ইসলাম হিরু, সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। বিএনপি মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। এরমধ্যে নরসিংদী -১, সদর আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু এবং বিএনপি মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন। এই ভোট যুদ্ধে জনগণ কার পক্ষে থাকবেন তা নিশ্চিত করে বলার এখনো সময় হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দাবি হচ্ছে কোন একজন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য সরকার থাকে বীর প্রতীক সম্মান দিয়েছেন। চাকরি শেষে রাজনীতিতে এসেও তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন। অর্থনৈতিকভাবে তিনি একজন সৎ ব্যক্তি হিসেবে ইতিমধ্যেই ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন। নরসিংদীতে তার বিশেষ উন্নয়ন হচ্ছে মেঘনা ব্রিজ। এই ব্রিজটি নির্মাণের মাধ্যমে তিনি নরসিংদী চরাঞ্চলের মানুষের অর্ধশতাব্দীকালের একটি দাবি পূরণ করেছেন। এছাড়া তিনি নরসিংদী নদ-নদীগুলো সংস্কারে কয়েক শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। জনগণের কাছে তার ভোট চাওয়ার একটি নৈতিক শক্তি তিনি অর্জন করেছেন । নরসিংদীর সার্বিক উন্নয়ন তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
পক্ষান্তরে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী খায়রুল কবির খোকন ই জয়লাভ করবে। তাদের যুক্তি হচ্ছে নরসিংদী সদর আসনটি বিএনপির একটি স্বীকৃত ঘাঁটি এলাকা। এই আসনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয়লাভ খুব কম। বিএনপির প্রার্থী ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন একজন জাতীয় বীর। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তার রয়েছে ব্যাপক অবদান। ৯০ ‘র গণ আন্দোলন মূলত: তার একটি বিশাল অর্জন। ডাকসুর জিএস হিসেবে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে তিনি যেভাবে গণআন্দোলনে পরিণত করেছেন তা অতীতে কোন ছাত্রনেতা করতে পারেনি। নরসিংদী রাজনীতি যোগ দিয়ে তিনি প্রথম উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি নরসিংদীর এমপি থাকাকালে অবহেলিত চরাঞ্চলে প্রথম বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষ এখন সেই সুবিধা ভোগ করছে। এছাড়াও তিনি নরসিংদীতে কয়েকশো কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেন।
নরসিংদী-২, পলাশ আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী হচ্ছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান। তিনি একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এই আসনের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনগুলোতে তিনি চারবার বিএনপি মনোনয়ন নিয়ে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের কোন হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। স্বাধীনতা-উত্তরকালে পলাশ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী একবারই বিজয়ী  হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন ডাক্তার আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের শাসনামলে ডাক্তার দিলীপ একবার এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে এই আসনে আওয়ামী লীগের সংগঠন যেমন দুর্বল ছিল তেমনি ভোটেও তারা ছিল অনেক পিছিয়ে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, পলাশে যত উন্নয়ন হয়েছে প্রায় সব উন্নয়নই করেছেন ড. আব্দুল মঈন খান। বিশেষ করে ডক্টর মঈন খান পলাশের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন। পলাশের এমন কোন গ্রাম নেই, যেখানে পাকা রাস্তা নেই। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে গাড়ি, রিকশা দিয়ে যাওয়া যায় না। পলাশের ঘোড়াশালের ময়েজ উদ্দিন সড়ক সেতু ডক্টর মঈন খানই নির্মাণ করেছেন। তিনি যে সব রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছেন,  পরবর্তী সরকারগুলো সেই রাস্তাগুলো সংস্কারও করতে পারেনি। তারা বলছে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারলে ড. মঈন খান হবেন পলাশের পরবর্তী এমপি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা জানিয়েছেন, পলাশে বিএনপির সংগঠন দুর্বল হয়ে গেছে। পলাশে আওয়ামী লীগ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। পলাশ উপজেলা ঘোড়াশাল পৌরসভাসহ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। তবে সৌখিন রাজনীতিকদের মতে, পলাশ জোট গত কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন না হলে এই আসনে ভোট যুদ্ধ হবে একজন’ ডক্টর ‘আর একজন ‘ডাক্তার ‘এর মধ্যে।
নরসিংদী-৩, শিবপুর আসনে আওয়ামী লীগের কোন হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। বর্তমানে আওয়ামী লীগের এমপি হলেও সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এ বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। দলীয় পদমর্যাদা অনুযায়ী তিনি যুবলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং দেশের একজন খ্যাতনামা ব্যবসায়ী। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শেরপুর আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। পক্ষান্তরে বিনপির যে তিনজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাদের তিনজনই জনপ্রিয়তা, দলীয় পদমর্যাদা এবং ব্যবসায়ীক ক্যারিয়ারে হেভিওয়েট প্রার্থী বলে দাবি করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদের একজন হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, একজন হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এবং অপরজন হচ্ছেন নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির চরম দুর্দিনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব মনজুর এলাহী। অনেকে এদেরকে ‘মিডল ওয়েট ‘প্রার্থীও বলে থাকেন। বিএনপি প্রার্থীদের মতে, এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক মোহন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগি হবে। জাতীয় রাজনীতির প্রভাব এবং ভোটারদের আঞ্চলিকতা বাদী বিএনপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। এ আসনে বিএনপিরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মনোনয়ন স্থির করতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এরা বলছে জহিরুল হক মোহন একজন যোগ্য প্রার্থী তিনি মান্নান ভূইয়াকে পরাজিত করে শিবপুরে এমপি হয়েছিলেন। গ্রাম থেকে থানা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা মোহন এর পেছনে ঐক্যবদ্ধ। ভোটযুদ্ধে জহিরুল হক মোহন ই বিজয়ী হবেন। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সমর্থক যুবলীগ নেতাকর্মীরা জানান, জহিরুল হক মোহন মান্নান ভূইয়া কে পরাজিত করে এমপি হয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সিরাজুল ইসলাম মোল্লা শিবপুরে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত পাঁচ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছেন। গড়ে তুলেছেন বিশাল কর্মী বাহিনী। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিরাজ মোল্লার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
নরসিংদী-৪, মনোহরদী -বেলাব আসনে ভোটের ক্যারিয়ারে দুইজন এবং দলীয় পদমর্যাদায় একজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। এদের একজন হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং অপর দু’জন হচ্ছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। জুয়েল ছাড়া হুমায়ূন এবং বকুল দুজনেরই রয়েছে ব্যাপক ভোটের ক্যারিয়ার। মনোহরদীর জনগণ এই দুজনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। যদিও আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের ভিতরে রয়েছে ব্যাপক কোন্দল। বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এবং ভোটাররা স্বচ্ছন্দে ভোট দিতে পারলে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী জয় পাবে বলে আশা করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করে যে এ বছরও অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনই হবে আওয়ামী লীগের এমপি।
নরসিংদী-৫ রায়পুরা আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী একজন। আর তিনি হচ্ছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। এই আসন থেকে তিনি পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভের পর তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছিলেন। এই আসনে বিএনপি’র কোন হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। বিএনপির সচেতন নেতাকর্মীদের মতে এখানে বিএনপি’র মিডল ওয়েট প্রার্থী লাইট ওয়েট প্রার্থীও নেই। এই আসনে ভোটযুদ্ধে হবে অসম। এই আসনের বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে অ্যাডভোকেট নেসার আহমেদ নামে একজন কর আইনজীবী ও আশরাফ উদ্দিন বকুল নামে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে। এরা দুজনই সম্পূর্ণ নতুন প্রার্থী। রায়পুরায় বিএনপিকে তৃণমূলের সংগঠিত করেছিলেন সাবেক এমপি আব্দুল আলী মৃধা। নরসিংদী জেলার আনাচে-কানাচে বিএনপির প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তার ছিল বিশাল অবদান। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া দলের মহাসচিব থাকাকালে আব্দুল আলী মৃধার সকল সদস্য পদ স্থগিত করে দেন। এরপর বিএনপি’র বর্তমান নেতৃত্ব সেই আদেশ আর প্রত্যাহার করেনি। নরসিংদী জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য একাধিকবার কেন্দ্রকে চিঠি দেয়ার পরও এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্লিপ্ততা কাটেনি। যার ফলে এ আসনটিতে বিএনপির জয় লাভ দুরূহ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বিগত ১০ বছর রায়পুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে উন্নয়ন সাধন করেছেন তাতে রায়পুরার জনগণ এখন রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ বলে দাবি করেছে সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তারা বলেছে বিগত ১০ বছরে এমপি রাজু বিএনপি’র বেশিভাগ নেতাকর্মীকেও আওয়ামী লীগ বানিয়ে ফেলেছেন। যারা আওয়ামী লীগ হয়নি তাদের অধিকাংশই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বিএনপি’র পক্ষে বড় ধরনের গণজোয়ার সৃষ্টি না হলে এই আসন থেকে বিএনপির কোন প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন