বর্তমান সরকারের সাজানো প্রশাসনে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্ভব নয় বলে দাবি করেছে বিএনপি। নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হতে যাচ্ছে দাবি করে দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার, ইউএনও, এসপিদের কর্মস্থলের বাইরে বদলিসহ ছয় দফা লিখিত দাবি করা হয়। এবারের নির্বাচন হচ্ছে জাতির জন্য শেষ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবো না বলে মনে করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ কথা বলেন। মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে দলটির আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিকাল তিনটা থেকে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তারা গণগ্রেফতার বন্ধ ও প্রশাসনের রদবদলসহ ছয় দফা দাবি তোলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ বর্তমানে নেই। দিন দিন পরিবেশের আরও
অবনতি ঘটছে। সরকার যেভাবে নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন তা রোধ করতে সক্ষম হচ্ছে না। আমরা যাদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচন করি আমাদের সেই নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার চলছে। সাতজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সাবেক আইন মন্ত্রী বলেন, বিচারিক আদালত পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে, যার কারণে গ্রেফতারকৃতদের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। বিচারকি আদালত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সরকারের সাজানো পুলিশ প্রশাসন, সিভিল প্রশাসন দলীয় ভুমিকায় অবর্তীন হয়েছে। উচ্চ আদালত বিভিন্ন সময়ে জামিন দিলেও বিচারকি আদালনত নানা অজুহাতে তা আটকে রাখছে। এসব বিষযে প্রতিকার চেয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছি। কমিশন বক্তব্য আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। তারা এব্যাপারে ইসি প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন সেই ডিসি, এসপি, ইউএনও সরকারের অধীনে কাজ করছে। বর্তমানে যারা সংসদ সদস্য তিনি আবার এমপি প্রার্থী। এ অবস্থায় কোনোভাবেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্জন করা সম্ভব নয়। আমরা ন্যূনতম পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণগ্রেফতার বন্ধ করার দাবি করেছি। গণগ্রেফতার বন্ধ হলে কাঙ্খিতভাবে না হলেও নির্বাচন করার সামান্য একটা পরিবেশ সম্ভব হতো।
প্রশাসনের বদবদলের দাবি করে তিনি বলেন, ৯১, ৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনকালীন প্রশাসনের রদবদল করা হলেও এবার তা না করায় সরকারের আনুগত্য প্রশাসন নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কোনো ভাবেই সম্ভব না। বর্তমান প্রশাসনের বদলি করে নির্বাচনে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করা না হলে নির্বাচন দুরূহ ব্যাপার হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হবে। মওদুদ আহমদ বলেন, এবারের নির্বাচন হচ্ছে জাতির জন্য শেষ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবো না।
মওদুদ জানান, কমিশন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। আশা করি তারা সফল হবেন। যত দ্রæত সম্ভব নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার, ইউএনও, এসপিদের কর্মস্থলের বাইরে বদলিসহ ছয় দফা লিখিত দাবি করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ছাড়াও, নির্বাচন কমিশন কবিতা খানম, রফিকুল ইসলাম, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নেতৃত্বে বিএনপির প্রতনিধি দলে মধ্যে ছিলেন,স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, মুশফিকুর রহমান ও বিজন কান্তি সরকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন