বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির মূল চেতনায় ছিল ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস এবং আঞ্চলিক বৈষম্য ও আধিপত্যবাদের অবসান। বর্তমানে দেশের দক্ষিণÑপূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে আকাশ-পাতাল অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বৈষম্য বিদ্যমান। এ উন্নয়ন বৈষম্যের অন্যতম প্রধান কারণ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অতি দুর্বল যোগাযোগ অবকাঠামো। এর ফলে দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে এখনো বিরাজমান ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেজ। চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব নাগরিক সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলা (খুলনা, বরিশাল বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলো)।
সুষম যোগাযোগ ব্যবস্থা সুষম উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কেবল পদ্মা সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রতি সব বৈষম্যের অবসান হবে না, একই সাথে হরিণা ফেরিঘাট দিয়ে চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের মধ্যে ‘পদ্মা-মেঘনা বহুমুখী সেতু/টানেল’ নির্মাণ করা হলে এ বৈষম্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। বর্তমানে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে চলাচলকারী যাত্রীদের ভায়া ঢাকা পথে গন্তব্যে পৌঁছার দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয় ভায়া চাঁদপুর পথের দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয়ের দ্বিগুণ।
পদ্মা সেতু চালু হলে ভায়া ঢাকা পথে শুধু ভ্রমণকাল ১ ঘণ্টা হ্রাস পাবে। কিন্তু দূরত্ব, পরিবহন ব্যয় ও জ্বালানি ব্যবহার অপরিবর্তিত থাকবে। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকাÑমাওয়া পথে চলাচলরত যানবাহনের সাথে যুক্ত হবে ঢাকা-পাটুরিয়া পথে চলাচলকারী যানবাহন। এর সাথে যখন বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে আগত দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনও পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করবে, তখন এ সেতুর ওপর পড়বে অস্বাভাবিক চাপ। সেতুর উভয় প্রান্তে সৃষ্টি হবে অকল্পনীয় যানজট। পদ্মা সেতুর স্থায়িত্বের ওপর পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। গত শতকের নব্বইর দশকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্মিত মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুটির মেয়াদ প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল একশত বছর। কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সেতু দুটি চালু হওয়ার পরবর্তী সিকি শতকেরও কম সময়ের মধ্যেই জরাজীর্ণ ও নড়বড়ে হয়ে পড়ে। বর্তমানে সেতু দুটির পাশে আরো ২টি সেতু নির্মাণ জরুরি। ইতোমধ্যে সরকার অনুমোদনও দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে স্বল্প সময় ব্যবধানে একই স্থানে বার বার সেতু নির্মাণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এর ফলে দেশের অন্যান্য উন্নয়ন খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দে ঘাটতি দেখা দেয়। অনেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবি করছেন। এ দাবির পক্ষে ভৌগোলিক অবস্থানও বিবেচনায় আনতে হবে। গুলিস্তান থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৩৮ কিলোমিটার, অন্যদিকে পাটুরিয়ার দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। রাজধানী থেকে একই সময় দুটি গাড়ি, একটি মাওয়া পথে অপরটি পাটুরিয়া পথে যাত্রা শুরু করলে দ্বিতীয়টি পাটুরিয়ায় পৌঁছার পূর্বেই প্রথমটি মাওয়া-জাজিরা পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্রয়োজন আছে, কিন্তু কোনোক্রমেই অগ্রাধিকার নয়। পদ্মা-মেঘনা নামটি যথার্থ, যেহেতু হরিণা ফেরিঘাটের পাশ দিয়ে পদ্মা-মেঘনার মিলিত ¯্রােত বহমান। বিপুল জলরাশির সত্তর শতাংশই পদ্মার কন্ট্রিবিউশন। চাঁদপুরের মেঘনার মধ্যবর্তী চরের পশ্চিমাংশের ¯্রােতধারাও পদ্মা নামেই পরিচিত। চাঁদপুরের সাথে যেমন মেঘনা নামটি একাত্ম হয়ে আছে, তেমনি বৃহত্তর ফরিদপুরসহ গাঙ্গেয় বদ্বীপের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে পদ্মা নামটি। মেঘনা নামে বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকটি সেতু আছে। ভবিষ্যতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্পটে একই নামে আরো সেতু নির্মাণ হবে। গঠনশৈলী বিবেচনায় দেশের প্রধান যোগাযোগ অবকাঠামোটির স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পদ্মা-মেঘনা নামকরণই যৌক্তিক।
অনেকেই এ সেতু/টানেল নির্মাণের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। হরিণা ফেরিঘাট দিয়ে নদীটি প্রায় ৬ কিলোমিটার প্রশস্ত। একুশ শতকের প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার দিনে এ সেতু/টানেল নির্মাণের বাস্তবতা প্রশ্নাতীত।
এম.এ. শাহেনশাহ
সহযোগী অধ্যাপক
পদার্থবিজ্ঞান
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আই.ই.আর)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ও মহাসচিব বাংলাদেশ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন ফোরাম
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত কেন?
নতুন পে-স্কেল অনুযায়ী সবশ্রেণির সরকারি চাকরিজীবী বৈশাখী ভাতা পেয়ে নতুন বাংলা নববর্ষ উদযাপন করলেও বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বৈশাখী ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য মূল স্কেলের ২০% হারে বৈশাখী ভাতা প্রদান করা হয়েছে। সবাই ২০% হারে বৈশাখী ভাতা পেলেও পায়নি শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সমাজের একটি অংশকে বঞ্চিত করে নতুন বাংলা নববর্ষ উদযাপন মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। সত্যিই বড় বিচিত্র ও আজব দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ! মনে প্রশ্ন জাগে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা কী মনেপ্রাণে বাঙালি নয়। যদি মনেপ্রাণে বাঙালি হয় তাহলে একই দেশে দুই রকম নিয়ম কেন? এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করলে নাকি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় কিন্তু শিক্ষকরা বঞ্চিত হলে কী তাদের ক্ষতি হয় না? এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আজ সর্বোতভাবে অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার।
অতএব, দেশ ও জাতির মঙ্গলের তাগিদে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈশাখী ভাতা বকেয়াসহ পরবর্তী মাসের বেতনের সাথে প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
মোঃ মোশতাক মেহেদী
শিক্ষক, কুষ্টিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন