মনোনয়নযুদ্ধ মোটামুটি শেষ। এখন ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে জোরোশোরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ৩৬টি আসনে। ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা। ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে’ এমন হাবভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে মূল প্রতিদ্ব›দ্বী দলের মধ্যে। প্রতিদিনই চিত্র পাল্টাচ্ছে।
অন্যদিকে, এখনো পুরোপুরি কাটেনি ভোটের মাঠের ধোয়াশা। নানামুখী আলোচনা চলছে নির্বাচন নিয়ে। ভোট রাজনীতির সরল পাটিগণিত এখন অনেকটাই গরল। সহজে হিসাব মেলানো কঠিন। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্পষ্টত প্রতীয়মান হচ্ছে নির্বাচন ঘিরে প্রায় একযুগ পর রীতিমতো গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন বিরোধীদলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা। তাদের মনোভাব দারুণ চাঙ্গা।
এবারের নির্বাচনকে প্রতিদ্ব›দ্বীরা অনেকটা ‘বাঁচা-মরার’ লড়াই হিসেবে দেখছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতি সচেতন মানুষ নির্বাচনের সামগ্রিক বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছেন। রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতা, শিক্ষক, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ। দুই পক্ষই অস্তিত্বের লড়াই হিসেবেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাবনা থেকে একটা বিষয় পরিস্কার এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল হবে না। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। স্থানীয় প্রশাসন থেকেও দফায় দফায় এ ধরণের আশ্বাসবাণীও শোনানো হয়েছে প্রার্থীদের। অভিযোগ দিলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাঠচিত্রও পাল্টে যাচ্ছে। একপক্ষীয় শক্তির মহড়া, মাসলম্যানদের আনাগোনা এখনো পর্যন্ত কোনো এলাকায় পরিলক্ষিত হয়নি।
এদিকে ভোটের মাঠের যে ধোয়াশা তা আর এক সপ্তাহের মধ্যে কেটে যাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই ১০ জেলার ৩৬টি আসনের মধ্যে অধিকাংশেই কোন আসনে কার কার সঙ্গে মূল লড়াইটা হবে এটি মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেছে। বাকিগুলোও মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট হচ্ছে, মূল লড়াইটা হয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। একবার বিএনপি, আরেকবার আওয়ামী লীগ আসন সংখ্যা বেশী পায়। এবার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে ভোটের মাঠে পক্ষ বিপক্ষের আলোচনার ঝড় উঠছে চায়ের কাপে। রাজনীতি সচেতন মানুষের ভাবনায় জোরশোরে উচ্চারণ হচ্ছে দেশ ও জাতির উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভোটাররা যাতে অবিস্মরণীয় স্বতঃস্ফুর্ততা ও খুশীর বন্যায় ভেসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য দক্ষ ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রলোভন জয় করা পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারেন সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। সবারই কথা, লোভজর্জর ব্যক্তি যেন অন্তত জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ না পায়। অবশ্য একটা ম্যাসেজ ভোটের মাঠে ভেসে বেড়াচ্ছে সেটি হলো, ভোটাররা ভাবাবেগে নয়, সচেতনভাবেই দেখেশুনে বুঝে যাচাই বাছাই করেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এমন মানসিকতা বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতাই পারে সাধারণ মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে। তাই নির্বাচন নিয়ে সচেতন প্রতিটি মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। এদিকে, দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের বক্তব্য বাহ্যিক দৃষ্টিতে নির্বাচন নিয়ে সবখানে জোরদার আলোচনা হলেও ভেতরে ভেতরে কেন যেন একটা গুমোটভাব বিরাজ করছে। অনেক প্রশ্ন জনসাধারণের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন