বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া) আসনের নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটাররা হতাশায় ভুগছেন। এ আসনে ৫ বারের নির্বাচিত এমপি ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় তিনি ১০ বছরের সাজা খাটছেন।
তারপরও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার জন্য দলের মনোনয়ন জমা দেন।
এদিকে ফেনী-১ আসনে ২৮ নভেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দেন কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানু ও জেলা বিএনপির নেতারা। কিন্তু ২ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালে হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে খালেদা জিয়ার প্রার্থীতা বাতিল করেন ফেনী জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। এতে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় উপস্থিত বিএনপির নেতারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বিএনপি নেত্রীর মনোনয়ন বাতিল করা নজিরবিহীন। এ আসনে খালেদা জিয়া ছাড়া কেন্দ্রের নির্দেশে মনোনয়ন জমা দেন ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি মুন্সি রফিকুল ইসলাম মজনু ও ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহাম্মদ। যাচাই বাছাইয়ে বিএনপির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে টিকে যান মজনু। তার বিরুদ্ধে প্রায় ২২টির মতো মামলা রয়েছে। এরমধ্যে তাকে গ্রেফতার না করতে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে তার কি হয় বলা যাচ্ছেনা। এদিকে খালেদা বিহীন ফেনী-১ আসনের নির্বাচনী মাঠ জমে উঠবেনা বলে জানান সাধারণ ভোটার ও নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে এক প্রতিক্রিয়ায় এলাকার ভোটার মো. ইব্রাহীম, সাইফুল ইসলাম ও মোবারক হোসেন বলেন, এই এলাকার এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী সবই হলেন খালেদা জিয়া। তার প্রার্থীতা বাতিল হবার কারণে এলাকার ভোটার বিশেষ করে মহিলা ভোটাররা হতাশ। হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার ভোট ব্যাংকের কথা চিন্তা করে রফিকুল ইসলাম মজনুকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে, আ.লীগে নেতারা পুড়ছে শূন্যতার দহনে। দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিয়ে মহাজোট প্রার্থী জাসদ নেত্রী শিরিন আখতারকে মনোনয়ন দেয়ায় তারা সীমাহীন নাখোশ। ফেনীর আ.লীগ বর্তমানে আলাউদ্দিন নাসিমের ইশারায় চলে। নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক হিসেবে জানতো নাসিমকে। এবার এ আসন থেকে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্ছিত হন। মহাজোট গঠনেও তার অবদানের কথা শোনা যায়। কিন্তু শিরিনের প্রার্থীতা টলাতে পারেনি নাসিমের ক্ষমতা। তাই আবারো শিরিন আখতার মহাজোট থেকে দলের মনোনয়ন পেয়ে তার নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। জনশূন্য ও নেতাকর্মীবিহীন এ আসনে আ.লীগের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত ও অবাঞ্চিত শিরিন। তাই তিনি স্থানীয় আ.লীগের কোন সহায়তা পাচ্ছেন না। ফলে বিএনপি প্রার্থীর কাছে তার পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত বলে মনে করছেন এলাকার সাধারণ জনগণ। দলের মনোনয়ন না চাইলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন জেলা আ.লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, ফেনী সমিতি ঢাকার সভাপতি ও বর্তমানে ফেনী-১ আসনের জন্য হ্যাভিওয়েট প্রার্থী এলাকার মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় শেখ আবদুল্লাহ। ইতোমধ্যে তিনি এলাকার মাঠে ময়দানে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ মহূর্তে আমার দল থেকে নির্বাচন করার কোন ইচ্ছা ছিলনা শুধু আমার এলাকার জনগণ, দলীয় নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা ভালোবাসা ও তাদের অনুরোধে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোন চিন্তা আমার নেই। আমি চাই এই এলাকার উন্নয়ন। অতীতে এই এলাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এ আসনে ৫ বার এমপি ছিলেন, জাসদ থেকে শিরিন আখতার ১ বার এমপি ছিলেন। কিন্তু ফেনী-১ আসনে কেউই কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখাতে পারেননি। জনগণ যেহেতু আমাকে দাঁড় করিয়েছে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো ইনশাআল্লাহ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুলগাজী উপজেলা আ.লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এলাকার উন্নয়ন ও দলীয় কর্মকান্ডকে গতিশীল করতে হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর বিকল্প নেই। এ আসনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি খাইরুল বাশার তপন। এছাড়াও এ আসনে যারা নির্বাচন করতে পারবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেক হ্যাভিওয়েট প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম গোলামা মাওলা চৌধুরীকে জাতীয় ঐক্যফ্র্ট থেকে এ আসনের জন্য মনোনীত করেছেন। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার বৃহৎ উন্নয়নের মধ্যে ফেনী নদীর সমস্যা, বিরোধপূর্ণ মহুরীর চর ও বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সংস্কারসহ আরো অনেক সমস্যা নিরসনে তিনি কাজ করবেন । খেলাফত আন্দোলনের আনোয়ার উল্লাহ ভূইয়া, বিএনএফের শাহরিয়াহ ইকবাল, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া, ইসলামী ফ্রন্টের কাজী নুরুল আলম ও তারেকুল ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন