একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের আসন বন্টনের এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। হাতে গোনা কিছু আসন বাদে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে আছে তারা। কিন্তু শরিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে এখনও সমাধানে আসতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। সর্বশেষ মহাজোটের বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ৫৩৪ জন। শেষ মুহূর্তে বিশাল সংখ্যক এই প্রার্থী জটের সুরাহা করতে হবে আওয়ামী লীগকে।
এদিকে ৯ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত এ দরকষাকষি চালানোর জন্য মহাজোটের শরিক দলগুলো ছাড় দেয়া আসন বাদেও বিভিন্ন আসনে দলীয়ভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছে। আবার অনেক প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবেও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, দলের শরিকদের জন্য ৩৬টি আসনে ছাড় দিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। এরপর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে দলের তিন প্রার্থী বাতিল হওয়ায় ৩৯টি আসনে প্রার্থী নেই আওয়ামী লীগের। এসব আসন থেকেও কয়েকটি আসন ছাড় দেবার ব্যাপারে শরিক প্রার্থীদের গ্রিন সিগনাল দেয়া হয়েছে। কিন্তু ছাড় দেয়া আসনের সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় শরিকরা।
ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টিকে ৪০টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৫টি, জাসদ (ইনু) ৩টি, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) ২টি, তরিকত ফেডারেশন ২টি, জাতীয় পার্টি (জেটি) ১টি, জাকের পার্টি ১টি আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ দলগুলো এ সংখ্যক আসনে সন্তুষ্ট নয়, তারা আরো আসন চায় আওয়ামী লীগের কাছে। এদিকে মহাজোটের অনেক দলই কোন আসন পায়নি জোটের কাছ থেকে। ফলে সকলেই আরো আসন ছাড় পাবার আশায় নিজ নিজ দলের ব্যানারে এবং স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র যাচাই শেষে আওয়ামী লীগের ২৬১ আসনে প্রার্থী সংখ্যা ২৭৮ জন। ৩৯টি আসনে প্রার্থী নেই দলের। এবার রেকর্ড সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী বাতিল হয়েছে। ৪৯৮ জনের মধ্যে ৩৮৪ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে বৈধ প্রার্থী রয়েছেন ১১৪ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৯৫ জন বিদ্রোহীর বেশিরভাগের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। বাছাই শেষে বাকি মহাজোটের শরিক দলগুলোর বৈধ প্রার্থীর অবস্থা হল: জাতীয় পার্টির (জাপা) ২১০ আসনে ২৩৩টির মধ্যে ১৯৫টি, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৭টির মধ্যে বৈধ ১৩টি, সাম্যবাদী দলের ৩টির মধ্যে ২টি, গণতন্ত্রী পার্টির ৮টির সবগুলো বৈধ, ন্যাপের ১৪টির মধ্যে ১১টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩টির মধ্যে ৩২টি, জাসদের ৫৩টির মধ্যে ৩৯টি, সাংস্কৃৃতিক মুক্তিজোটের ৩টি, তরীকত ফেডারেশনের ২০টির সবগুলোই বৈধ, বিকল্প ধারার ৩৭টির মধ্যে ২৪টি, জাকের পার্টি ১০৮টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৩টি, ইসলামী ঐক্যজোটের ৩২টির মধ্যে ২৭টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের ১২টির মধ্যে ৯টি, বিএনএফের ৭১টির মধ্যে ৫৬টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২২টি মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।
মহাজোটের নেতারা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে মহাজোটের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জটিলতার সমাধান না হওয়ায় দলীয়ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে প্রার্থীরা। এখন পর্যন্ত আসন নিয়ে সমঝোতা হয়নি।
ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আনিসুর রহমান মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। কয়েকটি আসন বাড়তে পারে। তবে এ বিষয়ে কোন সিগনাল দেয়া হয়নি।
সূত্র জানায়, জোটের মনোনয়ন না পেলে অনেক প্রার্থী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন। এছাড়া দলগুলোর অনেক প্রার্থী ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা নির্বাচন করার চিন্তা রেখেই দলীয়ভাবে মনোনয়ন জমা দেননি।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে এই সমস্যার সমাধান হবে। যেহেতু জোটের প্রার্থীরা সবাই নৌকা মার্কাতেই নির্বাচন করবেন, ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে জোটের দলগুলোকে ডেকে যা আসন দেবার তা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। সর্বোচ্চ ১০টি আসনে ছাড় দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহাজোটের আসন নিয়ে সমাধান হবে প্রত্যাহারের শেষ মুহূর্তে। তখন সকল জটিলতা কেটে যাবে।
২৮ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। সেদিন সব মিলিয়ে ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি। এর বাইরে স্বতন্ত্র ৪৯৮টি মনোনয়নপত্র মিলিয়ে মোট সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫। ২ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিন। ওইদিন ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। স্বতন্ত্র বৈধ প্রার্থী আছেন ১১৪টি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন