একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সংশয়-সন্দেহ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে ও নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে বিরাজ করছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের শান্ত পরিবেশ। প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং প্রার্থীদের সহনশীলতায় এখানে সৃষ্টি হয়েছে একটি সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বাপর সময় থেকে এই আসনটিতে এ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিএনপি বা কোন বিরোধী দল ও প্রার্থীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। জেলা উপজেলার সিভিল প্রশাসন কিংবা জেলা ও থানা পুলিশের বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ ওঠেনি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জহিরুল হক মোহন এবং বিএনপির প্রার্থী আলহাজ্ব মনজুর এলাহী যার যার ভোট কর্মী নিয়ে মাঠে ময়দানে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এদের কেউ একে অপরের বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। তিন প্রার্থীর ভোট কর্মীদের মধ্যেই সহনশীলতা বিরাজিণ রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক মোহনের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাকবিতর্ক চললেও এ পর্যন্ত কোনো সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এই অবস্থায় শিবপুর আসনে সকল স্তরের জনগণের মধ্যে সুষ্ঠু ভোটাভুটি হবে বলে বিশ্বাস এর সৃষ্টি হয়েছে। ভোটারদের মধ্যে জাগরিত হয়েছে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার স্পৃহা। সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছে শিবপুর আসনটিতে বরাবরই সুষ্ঠু ভোটাভুটি হয়ে থাকে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভ‚ঁইয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক মোহনের নিকট পরাজিত হয়েছিলেন। তখন আব্দুল মান্নান ভ‚ঁইয়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ছিলেন। তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক মোহনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। মান্নান ভ‚ঁইয়ার সর্মথকরা জানান রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু মান্নান ভ‚ঁইয়া যে একজন ভদ্রলোক ছিলেন বা ভদ্র রাজনীতিবিদ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন মতান্তর নেই।
এবছর শিবপুর আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এবং নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের দুই দুইবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর এলাহী। তিনি একজন জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। দুই পিরিওড নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি নিজেকে একজন মার্জিত মানুষ হিসেবে পরিচিত করেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি’র চরম দুর্দিনে মনজুর এলাহী নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মাত্র ৩ ঘন্টার সুষ্ঠু ভোটাভুটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি পাঁচ ঘণ্টার ভোটাভুটি ছিল জোর যার মুলুক তার পদ্ধতির ভোটাভুটি। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত এই মনজুর এলাহি পারিবারিক ভাবেই একজন দিৎসু ব্যক্তি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। তার পিতা হাজী আবেদ আলী এলাকায় একজন দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কোন সাধারণ মানুষ মনজুর এলাহী নিকট সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফেরত গেছে এমন রেকর্ড কম। শিবপুর শিবপুরে আসনটি বিএনপি’র একটি ঘাঁটি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই আসন থেকে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভ‚ঁইয়া ৪ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। মানান ভুইয়া দল থেকে বহিস্কৃত হবার পর স্বতন্ত্র নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন।
এবছর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক এমপি জহিরুল হক মোহনকে। আর বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে নরসিংদী সদর উপজেলা পরিষদের দুবার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিল্পপতি মনজুর এলাহী কে। এই তিনজন রাজনীতিকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই অনুষ্ঠিত হবে শিবপুরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এলাকার জনগণ তিনজন প্রার্থীকেই ভদ্র রাজনীতিক হিসেবে জানে এবং মানে। তিনজনই মাঠে ময়দানে গ্রামে গঞ্জে চুটিয়ে গণসংযোগ করছেন। কেউ কারো বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে না। অত্যন্ত সহনশীল পরিবেশে এগিয়ে চলছে শিবপুরে ভোটের রাজনীতি। মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী ও তাদের ভোটকর্মীদের সহনশীলতা এবং প্রশাসনিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহনশীলতা, নিরপেক্ষতা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব শিবপুরে ভোটাভুটিতে একটি ইতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থায় এলাকার সৌখিন রাজনীতিকদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে, ৩০ ডিসেম্বর ভোটাভুটির দিন সকল কেন্দ্রে সকল প্রার্থী ও তাদের ভোট কর্মীদের সহনশীলতার মধ্য দিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অনেকে এই অবস্থাকে একটা বক্র চোখে দেখছেন। তারা বিশ্লেষণ করছেন ভিন্নভাবে। তারা বলছেন শিবপুরের তিনজন প্রার্থী শিল্পপতি। রাজনৈতিক সম্পর্কের চেয়ে তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সম্পর্ক খুবই ভালো। যার জন্য কেউ কাউকে আঘাত করার চিন্তা করছেন না। তাছাড়া মনজুর এলাহী রাজনীতির বাইরেও অনেকটা প্রভাবশালী। যার কারণে প্রশাসনিক পর্যায় থেকে মঞ্জুর এলাহী কে ভিন্নভাবে দেখার কথা ভাবছে না কেউ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন