শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আরো শিশুবান্ধব করতে হবে

মোহাম্মদ আবু তাহের | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

গত ৮ ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, এগার মাসে ১৭১ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ২ জন আত্মহত্যা করেছে। শিক্ষকদের বলা হয়, গার্ডিয়ান অব সিভিলাইজেশন আরকিট্যাক্ট অব দ্যা ন্যাশান। সমাজজীবনের অবক্ষয়ের সময় যারা সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সচেষ্ট থাকেন তাদের অন্যতম পুরোধা হলেন শিক্ষক সমাজ। যারা সত্যিকারের শিক্ষক তারাই শিক্ষার আলো দিয়ে আমাদের সমাজ ও দেশকে আলোকিত করেন। ভিকারুন নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্রতীয়মান হয়, একটা চূড়ান্ত অবক্ষয়ের ভেতর দিয়ে চলছি আমরা। সামাজিক মূল্যবোধগুলো এক এক করে যেন ক্ষয়ে যাচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি দিন দিন যেন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সমাজ যেন দিন দিন পিছনের দিকে যাচ্ছে। আলোর দিকে না গিয়ে আমাদের সমাজ যেন যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’। সুতরাং জীবনের গুরুত্ব অনেক। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, বেঁচে থাকতে হবে, বেঁচে থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। জীবনকে উপভোগ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মনে আকাক্সক্ষা জাগাতে হবে বেঁচে থাকার মাঝে জীবনের সার্থকতা। আত্মহত্যা মহাপাপ, আত্মহত্যা ঘৃণ্য অপরাধ। শিক্ষকদের যেমন বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে, ধৈর্যশীল ও সহনশীল হতে হবে, সন্তান-সন্ততি যাতে আত্মহত্যার দিকে না যায় সে জন্য অভিভাবকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। যে কোনো অভিভাবক দেশের সম্মানিত নাগরিক, বাংলাদেশের সংবিধান বলে দিয়েছে বাংলাদেশ হবে একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র যেখানে সব ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ। বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দেশের জনগণ অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, অকাতরে রক্ত দিয়েছে, নির্যাতন সহ্য করেছে। তারপর তারা পেয়েছে দেশের মালিকানা। শিক্ষকরা যেখানে ছাত্রের অভিভাবককে সম্মান করার কথা সেখানে অপমান দেশের কোনো বিবেকমান মানুষ মেনে নিতে পারে না। শিক্ষক মানে আমরা বুঝি তিনি হবেন আলোকিত এক মানুষ। শিক্ষকদের মানবিক গুণাবলী থাকবে। তিনি হবেন জাতির মেরুদÐ, শিক্ষকরা হবেন রাষ্ট্রেরও আদর্শ। একটি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠন করতে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা সম্পর্কে মোতাহার হোসেন চৌধুরীর মত হলো, ‘মানুষের জীবনকে একটি দোতলা ঘরের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। জীবসত্ত¡া সেই ঘরের নিচের তলা আর মানবসত্ত¡া বা মনুষ্যত্ব ওপরের তলা। জীবসত্তার ঘর থেকে মানবসত্ত¡ার ঘরে উঠবার মই হচ্ছে শিক্ষা।’ কিন্তু আমরা জীবসত্তার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে গেলাম। মানবসত্ত¡ায় উত্তীর্ণ হতে পারলাম না। অন্যায়, অসত্য আর অমঙ্গলের চিন্তা থেকে যতদিন না আমরা মুক্ত হতে পেরেছি ততদিন আমরা জীবই হয়ে থাকবো। মানবসত্ত¡ায় পৌঁছাতে পারবো না। প্রমথ চৌধুরী বলে গেছেন ‘সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত’। কিন্তু আমরা শুধু শিক্ষিতই রয়ে গেলাম, সার্টিফিকেটের বোঝাই বয়ে গেলাম, সুশিক্ষিত হতে পারলাম না। কখনো কখনো আমরা ন্যায়-অন্যায় বুঝার চেষ্টা করি না। সত্যকে উপলব্ধি করার প্রয়াস রাখি না। আমরা আমাদের মানবিক গুণের কথাও ভাবি না। সুশাসনের পূর্বশর্ত হলো সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। শিশু শিক্ষার্থীদের অপমান বা নির্যাতনের কারণে বা অন্যান্য কারণে আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয়। বিভিন্ন সময় আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। শিশুদের সুরক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শিশুদের সবধরনের শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা, আঘাত, অবহেলা, নির্যাতন থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ আইনি, প্রশাসনিক, সামাজিক, শিক্ষামূলক ও সচেতনতা মূলক পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। বাংলাদেশ সহ ১৯৬টি দেশ এ সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শিশু অধিকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে। সরকার ২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্র জারির মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুর শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করেছে। শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ হলেও মানসিক শাস্তি বা অপমান এবং অবহেলার বিষয়টি উপক্ষিত রয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন জোরদার করাও জরুরি।
লেখক : ব্যাংকার

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন