শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

বিদ্রোহীদের নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ নেতারা

প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এম. হাসানুল হক উজ্জ্বল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ অনেকটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্প্রতি তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রকাশ্যে ভোটের আয়োজন করে। জেলা নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রকাশ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন তৃণমূলে নেতারা। ভোট শেষে জেলা নেতারা এখানে ভোট গণনা না করে সিলেট নিয়ে যান এবং একদিন পর ফলাফল প্রকাশ করেন। জেলা নেতাদের প্রকাশ্যে ফলাফল ঘোষণা না করে সিলেট চলে যাওয়ার পর থেকে দলীয় বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে শুরু হয় নানা কথা। পরবর্তীতে ফল প্রকাশের পর দেখা দেয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ। অনেক নেতা সাথে সাথে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে তদবির করতে রাজধানীতে চলে যান। যদিও এখনো পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা আসেনি তারপরও জেলা ঘোষিত প্রার্থীরা মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। অনেকে দলীয় নেতাদের সাথে বিরোধ মেটাতে কৌশল অবলম্বন করছেন। আবার অনেকে ভোটারদের আশীর্বাদ নিতে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন জানিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীদের মতে, মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা যাচাই না করে কতিপয় নেতাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ায় দলের লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি হবে। জানা যায়, বিয়ানীবাজারের লাউতা ইউপি নির্বাচনে এমএ জলিলকে জেলা আ.লীগ নির্বাচনী বোর্ড নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তকে ভালো চোখে দেখছে না স্থানীয় আ.লীগ। গত বুধবার বিকেলে জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপজেলা আ.লীগের নেতাদের আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। দলীয় অনেক ত্যাগী নেতা অভিযোগ করে বলেছেন, তৃণমূলে তাদের সমর্থন ওই প্রার্থীর চেয়ে অনেক বেশি বুঝতে পেরে জেলা নেতারা এখানে ভোট না করেই কৌশলে এমএ জলিলকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত দেন। এখানে ত্যাগী যুবলীগ নেতা গৌছ উদ্দিনসহ আরো এক নেতা নির্বাচন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে মাসুম আহমদ সম্প্রতি এলাকার মুরব্বীয়ানদের সাথে সভা করে নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দলের জন্য তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু দল থেকে তিনি যথাযথ মূল্যায়ন পাবেন না চিন্তা করেই দলীয় মনোনয়ন কিনেননি। এছাড়াও দুবাগ, তিলপাড়া, মুড়িয়া ও মুল্লাপরি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এ তিন ইউনিয়নে দলের পরীক্ষিত চার বিদ্রোহী প্রার্থী দুবাগে সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মো. নাজিম উদ্দিন, তিলপাড়ায় সাবেক ইউপি সদস্য মো. ইসলাম উদ্দিন, মুড়িয়া ইউনিয়নে হুমায়ুন কবির ও ছাব্বির উদ্দিন এবং মুল্লাপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ কাদির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ফলে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দুবাগে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুছ সালাম, তিলপাড়ায় সাবেক চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন ও মুড়িয়া ইউনিয়নের সামছুদ্দিন মাখন। তবে উপজেলা আ.লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে নানাভাবে চেষ্টা করেও অনেটা ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হচ্ছেন। এদিকে কেন্দ্র থেকে প্রার্থীদের কোন পরিবর্তন এলে দলীয় গ্রুপিং আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। গত ২৪ এপ্রিল বিয়ানীবাজারে ৯ ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে বিজয়ীকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। একমাত্র লাউতা ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোট নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে জেলা নির্বাচনী বোর্ডের সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধীতার পরও এমএ জলিলকে জেলা নির্বাচনী বোর্ড নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করে। এ খবরে এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। তারা জেলা আ.লীগের এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক উপজেলা যুবলীগ নেতা মো. গৌছ উদ্দিন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বেশ সাড়া পান। সর্বশেষ গত বুধবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের ভোট না করায় উপজেলা আ.লীগ নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে উপজেলা ও জেলা আ.লীগকে জানাতে ইউনিয়ন আ.লীগের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন আহমদকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লাউতা ইউনিয়ন আ.লীগের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিন আহমদ বলেন, তৃণমূলের ভোটে যে বিজয়ী হতো তাকে আ.লীগ নেতাকর্মীরা মেনে নিতো। কিন্তু জেলা নির্বাচনী বোর্ড ভোট না করে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করায় নেতাকর্মীরা কিছুটা ক্ষুব্ধ। এ প্রসঙ্গে বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বলেন, তৃণমূলের ভোটে নির্বাচিত নেতারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এখানে দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে বিদ্রোহী কোন প্রার্থী অংশগ্রহণ করবেন না বলে তিনি জানান। উল্লেখ্য, আগামী ৪ জুন বিয়ানীবাজার উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন