শিক্ষা স্বভাবতই একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া হলেও অনেক শিক্ষক একে দুর্বোধ্য একটি ব্যবস্থা বলে চিহ্নিত করে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের পাশাপাশি নোট ও গাইড বইয়ের ওপর অযৌক্তিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা শিক্ষকদের চাপ ও পরামর্শেই নোট-গাইড বইকে শিক্ষাজীবনের প্রধান অবলম্বন করে নিয়েছেন। ফলে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, একদিকে বাড়ছে নোট-গাইড বই ক্রয়-বিক্রয়ের হিড়িক অন্যদিকে বাড়ছে প্রাইভেট-কোচিংয়ের তাগাদা। সম্প্রতি, পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রাইভেট-কোচিং নিষিদ্ধ করার পর একটুও থামেনি প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়ার ও পড়ানোর প্রবণতা। নোট-গাইড-প্রাইভেট-কোচিং এর চলমান তৎপরতা দেখে দুটি বিষয়ে প্রশ্ন জাগে, প্রথমত: সরকারি প্রজ্ঞাপনের ভাষা বোধগম্য নয়, দ্বিতীয়ত: শিক্ষকরা সরকারি আদেশ মানতে বাধ্য নন। এছাড়াও, শিক্ষকরা যেমন প্রাইভেট অথবা কোচিংয়ে পড়াকে বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন, তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়াকে মর্যাদার বিষয় করে তুলেছেন। নোট-গাইড-প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়া একসময় লজ্জার বিষয় হয়ে থাকলেও এখন এসবে না পড়াটাই লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, নোট-গাইড-প্রাইভেট-কোচিংয়ে অনাগ্রহী কিংবা অপারগ শিক্ষার্থীরা অনেক সময় এক শ্রেণীর শিক্ষক কর্তৃক শ্রেণীকক্ষে লাঞ্ছিত হন এবং অভিভাবকেরা জনসমক্ষে লজ্জিত হন। মোটকথা, কোচিং না করা যেন অপরাধের শামিল হয়ে উঠেছে। তাই শিক্ষকরা ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট-কোচিং নিয়ে এবং একই শিক্ষার্থী ব্যস্ত থাকে একাধিক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ায় কিংবা একাধিক কোচিং সেন্টারে আসা-যাওয়ায়। ২০১২ সালের জুন মাসে অবৈধ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের লক্ষ্যে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করলেও বন্ধ হয়নি কোচিং-বাণিজ্যের প্রসার। সাত সকালে স্কুল-কলেজের কক্ষগুলো পূর্ণ হতে থাকে প্রাইভেট পড়তে আসা শিক্ষার্থীতে। আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রেণী কার্যক্রম শুরুর পূর্বে ২/৩ ব্যাচ এবং ছুটির পর থেকে রাত অবধি কয়েকটা ব্যাচ পড়িয়ে তবে বন্ধ হয় প্রতিষ্ঠানের দরজা-জানালা। জরুরি ক্ষেত্রে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হবার পরও শ্রেণীকক্ষেই চলতে থাকে প্রাইভেট পড়ানো। যেমন: গণিতের ক্লাসে একই সাথে কোচিং-প্রাইভেট পড়িয়ে নেন বেশিরভাগ শিক্ষক। এখনও সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় মোটামোটা বই হাতে-কাঁধে করে দলবদ্ধ শিশু-কিশোরদের দেখে মিছিল কিংবা শোভাযাত্রার মত কিছু একটা বলে মনে হবে। আসলে কোচিং বা প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে আর আসছে। বিশেষ করে, সকালবেলা স্কুল-কলেজব্যাগ কাঁধে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে কোন প্রাইভেট টিউটরের বাসা কিংবা কোচিং সেন্টারের দিকে। এখনও প্রতিদিন খোলা হচ্ছে নতুন নতুন কোচিং সেন্টার এবং আত্মপ্রকাশ ঘটছে নতুন নতুন প্রাইভেট টিউটরের। শতবার চাকুরীর পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে বেকারত্ব ঘোচাতে অযোগ্য লোকেরা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আবার কোথাও পরিচিত কোন সেন্টারের শাখা খুলে ভিড়াতে চাইছেন শিক্ষার্থীদের। এসবের পরও কৌতূহল জাগে, ওই শিক্ষার্থীরা কি শিখছে? দলবেঁধে পড়াকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ব্রেইজ নয়তো ব্রিজ বলে থাকে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সংবাদপত্র পড়তে পারেন না, এসএসসিতে জিপিএ-৫ কিংবা গোল্ডেন জিপিএ পাওয়া তারা জানে না জিপিএর অর্থ বা মানে। সাধারণত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত উদাহরণগুলো সত্য। যারা উক্ত উদাহরণের বাইরে তারা ব্যতিক্রম।
এমতাবস্থায়, শিক্ষার প্রায়োগিকতা-সার্থকতা-সাফল্যের ব্যাপারে আমাদের আশঙ্কা যদি অমূলক না হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষার নামে আদিখ্যেতা ও বাণিজ্য বন্ধে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সচেতনতা ও সক্রিয়তা কামনা করছি।
আশরাফুল ইসলাম রাসেল
চুনারুঘাট।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকরি উদ্যোগ নিন
আমাদের সমাজে নারী নির্যাতন যেন এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী। পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, রাস্তায় বলা যায় প্রতিটি স্থানেই নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়ছে নারী সমাজ। তাই নারী সমাজকে সবল রাখতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এজন্য দেশের সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অপরাধীকে যখন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান সম্ভব হবে তখন এমনিতেই নারী নির্যাতন বন্ধ হবে। তাছাড়া আমাদের জানা প্রয়োজন, শুধু লিঙ্গ পরিচয় নয়, নারীরাও যে মানুষ এটা মানতে হবে। আসুন, আমরা সবাই নারীকে সম্মান করতে শিখি।
মোঃ মানিক উল্লাহ
এনায়েতপুর, সিরাজগঞ্জ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন