শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাভার ভূমি অফিসে কর্মচারীর হাতে আলাদিনের চেরাগ

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

সাভারে ভূমি অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারীর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতির অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে বরখাস্ত করা হলেও থেমে নেই তার অপকর্ম। সরকারী কাগজপত্র নয়ছয় করে এবং দালালীর টাকায় তিনি বনে গেছেন প্রায় ৫০ কোটি টাকার অগাধ বিত্ত বৈভবের মালিক।
আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি বিহীন সম্পদ অর্জনকারী এই ব্যক্তির নাম দীন ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি একসময়ে আশুলিয়া ভূমি অফিসে এমএলএস (চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী) পদে চাকুরী করতেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তাকে ধামরাই ভূমি অফিসে শাস্তিমূলক বদলি করা হলে দুর্নীতির অভিযোগে সাসপেন্ড (সাময়িক বরখাস্ত) হন। গত তিন বছর ধরে তিনি সাসপেন্ড থাকলেও আশুলিয়া ভূমি অফিসের সামনে নিজে একটি অফিস খুলে সেখানে নামজারী, খাজনা, খারিজ ও পর্চার কাজের দালালি করে আসছেন।
সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা মহল্লার পূর্ব ভবানীপুরে তার রয়েছে বহুতল চারটি ভবন। সারি সারি এসব ভবনের মধ্যে বি ৮/৪ গেন্ডা, পূর্ব ভবানীপুর হোল্ডিংয়ের চারতলা ভবনের (১০ তলা ফাউন্ডেশন) দোতলায় তিনি থাকেন পরিবার নিয়ে। একই এলাকার বি ৮/১, বি ৮/২, বি ৫/১৯ (গেন্ডা, পূর্ব ভবানীপুর) হোল্ডিংয়ের বাড়িগুলো তার ভাড়া দেয়া। এরমধ্যে প্রশাসন ও এলাকাবাসীর চোখে ধুলো দিত ধূর্ত দীন ইসলাম একটি বাড়ির জন্য ব্যাংক থেকে ঋন নিয়েছেন বলে চাউর রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার গড়নগর গ্রামের রেনু ভূঁইয়ার পুত্র দীন ইসলাম ভূঁইয়া প্রায় দেড়যুগ আগে কাজের খোঁজে সাভারে আসেন। এক সময়ে তার নুন আনতে পাত্তা ফুরালেও সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই ভূমি অফিসে নয়-ছয় করে তার নাটকিয় উত্থান ঘটে। সেই সূত্রে মোটা অঙ্কের টাকায় এলএমএস পদে চাকুরী বাগিয়ে নিয়ে ভূমি অফিসে দুর্নীতি ও অনিয়মের শিকড় গড়েন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে তার। অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে শুধু বেড়েছে তার সম্পদ ও নগদ টাকা। এখন সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে চারটি বহুতল ভবন ছাড়াও টান গেন্ডা ও নামা গেন্ডায় রয়েছে আরো ৫টি প্লট। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে অল্পদিনের ব্যবধানে তার জমি ও মার্কেট দেখে ‘থ’ বনে গেছেন স্থানীয়রাও। সাভার ও বাজিতপুরের একাধিক ব্যাংকে তার নিজের, স্ত্রী, তিন কন্যা ও এক পুত্রের নামে রয়েছে ফিক্সড ডিপোজিটসহ কয়েক কোটি টাকার হিসাব। রয়েছে কয়েক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বাজিতপুরে প্রায় ৩৪ শতাংশ জমির উপর তার পাকা-আধাপাকা মার্কেটসহ কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। ফসলী জমির পরিমাণ প্রায় ৪০ বিঘা। তার একমাত্র পুত্র প্লাবন একটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা বদল হলেও তাদের ভূমিকা রহস্যজনকই থেকে যাচ্ছে। স্বল্প শিক্ষিত দীন ইসলামের সম্পদের পাহাড় দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে নানাভাবে একাধিকবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানালেও তিনি আছেন বহালে। বৈধ কোনো আয়ের উৎস্য ছাড়া চোখ ছানাবড়া করার মতো সম্পদের মালিক দীন ইসলাম রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
স্থানীয় সূত্র মতে, দীন ইসলামের পুত্র প্লাবন আশুলিয়ার খাগানের সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হলেও ক্যাম্পাসে তিনি গরহাজির। ইভটিজিংয়ের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। এমন অভিযোগে একবার তিনি বাড়ি থেকে নগদ ৭০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপন করেন! কয়েকমাস পর বাড়ি ফিরলেও মা-বাবার আল্লাদে প্লাবন মাদক সেবনসহ নানাবিধ অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ গতবছরের ২১ আগষ্ট সাভারে ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করায় ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী মারুফ খানকে (২১) ছুরিকাঘাতে নৃশসভাবে হত্যা করা হয়। সাভার পৌর এলাকার গেন্ডা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে সংঘটিত ওই ঘটনায় স্থানীয় বখাটে মঞ্জু ও প্লাবন নেতৃত্ব দেয়। মারুফের বড়ভাই লুৎফর রহমান খান মানিকের দায়েরকৃত মামলায় প্লাবন তিন নম্বর আসামি। ঘটনার পর পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ও সিআইডি তাদের বাসায় অভিযান চালায়। প্লাবন কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে বেড়ালেও অধড়া রয়েছেন। তবে অল্পদিন পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থেমে যাওয়ায় গুঞ্জন রয়েছে ‘সব ম্যানেজ’!
এদিকে দীন ইসলামের বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে ভাড়া রাখার নামে তিনি নিজের কালো টাকা ও অবৈধ সম্পদ রক্ষার কৌশল করছেন বলে চাউর রয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বেহিসাবী সম্পদের মালিক দীন ইসলাম পুত্র প্লাবন শুধু মাদক সেবন নয় ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এই ব্যবসায় তার কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগও রয়েছে।
এসব ব্যাপারে জানতে দীন ইসলাম ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি এখন পেনশনে আছেন। তিনি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং সম্পদ বিবরণ আয়কর নথিতে উল্লেখ করা আছে। একমাত্র পুত্র হত্যা মামলার আসামি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনো তার জামিন হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
তাসলিমা বেগম ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
সরকারী অফিসে এরকম কত দীন ইসলাম যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার কোন ইয়াত্তা নেই। বেশী দুর যাওয়ার তো দরকার নেই, ১০-১৫ হাজার টাকার বেতনের চাকুরী কেন ১৫-২০ লক্ষ টাকায় নিতে হয় সেটা খতিয়ে দেখলেই চেরাগের সন্ধান পাওয়া যাবে
Total Reply(0)
NAhmed ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
I do not see any wrong doing by this person. This guy is practical person in a country like Bangladesh. মন্ত্রী এমপি আমলাদের সম্পদের হিসেব চাওয়া উচিত। দীন ইসলাম হচ্ছে ছিচ্কে দুর্নীতিবাজ এর চেয়ে বড় শত শত দুর্নীতিবাজ ডাকাত এদেশে বহাল তবিয়তে আছে।
Total Reply(0)
sagar ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
মন্ত্রী, নেতা–কেতাদের ভাগ দিয়েই তো সে বাড়ি গাড়ি করেছে। এই নেতা কেতাদের পরিচয় কী?
Total Reply(0)
Ali Akbar ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
যেগুলোর বিচার-আচার হয় না, সেগুলোর খবর জনগণকে জানিয়ে কষ্ট দেওয়ার দরকার কী!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
টাকা কি একা সে খেয়েছে? সরকারি আনুকূল্য না পেলে কি এটা সম্ভব?
Total Reply(0)
amrantalukder ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
এসব দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের টাকা ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা দেশের গরিব কৃষকদের যে ব্যাংক এ্যাকান্ট আছে, তাতে বণ্টন করলে ভালো হয়।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
বেশী না মোট সম্পদের মাত্র ১০% সার্ভিস চার্জ দিয়ে আবার দুর্নীতির লাইসেন্স নিয়ে নিবে। কারণ দুদকের দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হয় না। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...
Total Reply(0)
Niloy Mahmud ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
সব সরকারি অফিসে এ রকম বড়-ছোট দীনে ভরা। আর এসব দীনদের পেছনে থাকে বড় বড় রাঘব–বোয়ালরা।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
Hmm..This amount of money from only one 4th class government employee. ACC might cover next national budget if it goes like this.
Total Reply(0)
Saifur Sahin ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
এটা দুনীতির একমাত্র চিত্র নয় । ভয়াবহ সব দুর্নীতিতে ছেঁয়ে আছে উপর থেকে নীচ অবধি প্রতিটি সরকারী বেসরকারি অফিস । যেগুলো আলোতে আসে না সেগুলো অন্ধকারে থাকার সঙ্গত কারণ আছে ।
Total Reply(0)
John Emoll ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
বাংলাদেশের সকল ভূমি অফিসে কর্মচারিদের হাতে আলাদিনে জোড়া চেরাগ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন