সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:১১ এএম

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতদিন কাক্সিক্ষত এ নির্বাচন বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচন করা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকিদ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। কোনো কোনো শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনের দাবীতে অনশন পর্যন্ত করে। অবশেষে সেই অচলায়তন ভেঙ্গে পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর গঠনতন্ত্রের ৮ (ই) ধারা অনুযায়ী আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ঐ দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনসহ বিরোধী দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে ভাইস চ্যান্সেলরের মতবিনিয় ও সংলাপ হয়েছে। বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পারস্পরিক সহবস্থান এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবী জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের আশ্বস্ত করেছে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠন ও বিরোধী দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনে প্যানেল দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশে ডাকসু’র এ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়াও খুবই জরুরী।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডবলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সূতিকাগার। এখান থেকেই শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ডাকসুকে বলা হয়, দেশের মিনি সংসদ। দেশের যে কোনো অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে এ ছাত্র সংসদ বরাবরই সোচ্চার হয়ে প্রতিবাদ করেছে। ’৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিল ডাকসু নেতৃবৃন্ধ স্বৈরশাসনের পতনের পর থেকে এ সংগঠনটি স্তিমিত ও অচল হয়ে পড়ে। আড়াই যুগ ধরে এর কোনো নির্বাচন হয়নি। এতে ঐতিহ্যবাহী ছাত্ররাজনীতি স্থিতিমিত হয়ে গেছে। আশার বিষয় হচ্ছে, আড়াই যুগ পরে হলেও নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমরা এ নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। পাশাপাশি এ কথাও বলতে চাই, নির্বাচনটি যেন জাতীয় নির্বাচনের মতো লোক দেখানো, একপেশে এবং অগ্রহণযোগ্য না হয়। সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হিসেবে এ নির্বাচনকে ইতোমধ্যে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যেখানে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। এ নির্বাচনটি ইতিহাসে একটি ‘কলঙ্কিত নিবার্চন’ হিসেবে ঠাঁই পাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জাতীয় নির্বাচনের পরপরই আগামী মাস থেকে ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন হবে। এর মধ্যেই ডাকসু নির্বাচন হবে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনের মতোই একতরফা হবে। কারণ, জাতীয় নির্বাচনে নজীরবিহীন ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট ইতোমধ্যে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে। তারা মনে করছে, এ নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনের মতো সরকারের নিয়ন্ত্রণে হবে এবং ক্ষমতাসীন দল একচেটিয়াভাবে সব আসন ছিনিয়ে নেবে। এ ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করাÑএকই ব্যাপার। এ প্রেক্ষাপটে ডাকসু নির্বাচন কেমন হবে, তা নিয়ে একটা অনুমান দাঁড় করানো যায়। তবে দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এবং দেশের যে কোনো দুঃসময়ে ডাকসু যেহেতু অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, তাই এ নির্বাচনটি যাতে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরা জোর তাকিদ দিয়েছেন। গণতন্ত্রের বিকাশ এবং রাজনীতিতে আগামীর নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্য এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করে তোলর বিকল্প নেই।
ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো নানা শংকায় রয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ, পারস্পরিক সহবস্থান, বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর নির্বাধ কার্যক্রম নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে অন্যান্য দাবী-দাওয়া উত্থাপন করেছে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক ছাত্র সংগঠনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ সৃষ্টিতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে। জাতীয় নির্বাচনের মতো বিরোধী দলকে মাঠছাড়া করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে একতরফা নির্বাচন হতে দেবে না। যদি তা হয়, তবে দেশে-বিদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা দেখেছি, বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থক ছাত্র সংগঠনকে বিতাড়িত করে তারাই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে কোনোভাবেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সব ছাত্র সংগঠনকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে সামগ্রিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত করতে হবে। তা নাহলে, জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও প্রশ্নবিদ্ধ হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য এবং সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, তবে নির্বাচন পিছিয়েও দিতে পারে। পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে পুনরায় উদ্যোগ নিতে পারে। প্রশ্নবিদ্ধ ও কলঙ্কিত হতে পারে এমন নির্বাচন করা ঠিক হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন