রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে আল্লাহপাক কিয়ামতের কষ্ট হতে তাকে নাজাত দান করুন, তাহলে তার উচিত রিক্ত হস্তকে অবকাশ দেয়া, কিংবা সেই ঋণকে ক্ষমা করে দেয়া’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল বুয়ু, মুসনাদে ইবনে হাম্বল : পঞ্চম খন্ড ৪০৮ পৃ.)।
এ বর্ণনাটি মুসনাদে আহমদে এ শব্দ সহযোগে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেবে, অথবা ঋণ মাফ করে দেবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছাঁয়ায় অবস্থান করবে।’ মোট কথা, ইসলাম অন্যের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং ইহসান করাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ করেনি; বরং তাকে যাবতীয় পুণ্যকর্মের সাথেই বিস্তৃত করে দিয়েছে। শুধু কেবল জীবন ক্ষেত্রেই নয়, বরং মৃত্যুর মাঝেও ইসলাম ইহসানের পরিমন্ডল সঙ্কুচিত করেনি।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক সকল বস্তুতে ইহসান করাকে ফরজ করেছেন। যদি তোমাদের কাউকে (শরিয়তের হুকুম মোতাবেক) মৃত্যুদন্ড দিতে হয়, তাও করতে হবে পরিচ্ছন্ন ও উত্তম পন্থায়। কোনো জানোয়ারকে জবেহ করতে চাও, তাহলে উত্তমরূপে তা সমাপন করবে। ছুরিকে তীক্ষè ধারালো করে নাও এবং জবেহ করার পশুকে আরাম দাও’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুস সাইদি ওয়াজ জাবায়েহ)।
যে আমার প্রতি আহসান করবে, আমিও তার প্রতি ইহসান প্রদর্শন করব। এ নীতি ও আদর্শ রাসূলুল্লাহ সা.-এর নৈতিক শিক্ষার খেলাপ। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে আগমন করে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কোনো এক লোকের নিকট দিয়ে গমন করছি, কিন্তু সে আমার মেহমান নাওয়াজি করেনি। তবে সে যখন আমার নিকট দিয়ে গমন করবে, তখন কি আমি তার বিরূপ ব্যবহারের বদলা এর দ্বারাই দেবো? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না, তুমি তার প্রতি মেহমান নাওয়াজি করবে’ (জামে তিরমিজি : ইহসান ও আকওয়া অধ্যায়)।
অন্য এক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন হয়ো না যে, তোমার বুদ্ধির গেরাতে তুমি আবদ্ধ হয়ে পড়েছ। তোমরা শুধু অন্যের দেখাদেখি কাজ করছ এবং বলছ যে, মানুষ যদি ইহসান করে তাহলে আমরাও তা করব। বরং তোমাদের অবস্থা এই হওয়া উচিত যে, সে যদি খারাপ আচরণও করে, তাহলে তুমি জুলুম করবে না’ (জামে তিরমিজি : ইহসান ও আকওয়া অধ্যায়)।
মানুষ ভুলবশত দৌলত ও প্রাচুর্যকে অথবা অপরাপর বড় বড় কথার সাথে ইহসানকে নির্দিষ্ট করে নেয় এবং মনে করে যে, গরিব আবার কিসের ইহসান করবে? কিন্তু মূল ঘটনা হচ্ছে এই যে, মানুষের সাথে ইহসান করার জন্য দৌলতের প্রয়োজন নেই; বরং প্রয়োজন হচ্ছে মনের বা অন্তরের। অন্তরের প্রশস্ততা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। হজরত বারা বিন আজিব সাহাবি বলেন, একবার এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে হাজির হয়ে দরখাস্ত করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কথা বলে দিন, যা করলে আমার জান্নাত নসিব হবে।
ইরশাদ হলো, ‘তোমার নিবেদন যদিও সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তোমার প্রশ্ন খুবই বড়। তোমার উচিত প্রাণসমূহ আজাদ করা। আর অন্যের সাথে শরিক হয়ে কাহারো মুক্তির ব্যাপারে মাল-সম্পদ সাহায্য করা হলো গর্দান মুক্ত করা বা ক্রীতদাসদের মুক্ত করা। আর তুমি অবিরত দান করতে থাক। জালেম আত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করো। যদি তুমি তা করতে অপারগ হও, তাহলে ক্ষুধার্তকে আহার করাও, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, মানুষকে নেক কাজ করতে বলো এবং বদ কাজ থেকে বিরত রাখো। যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে নিজেকে উত্তম কথা ছাড়া অন্যান্য কথা ও আলোচনা থেকে মুক্ত রাখো’ (মুস্তাদরাকে হাকেম : খন্ড ২৪, কিতাবুল মাকাতিব)।
একবার হজরত আবুজর রা. জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ঈমানের সাথে পালন করার কোনো আমল বলে দিন। ইরশাদ হলো, ‘যে রুজি আল্লাহপাক দিয়েছেন, তন্মেধ্য থেকে অন্যদেরকে দান করো।’ পুনরায় আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সে ব্যক্তি নিজেই যদি দরিদ্র হয়।
ইরশাদ হলো, ‘নিজের জবান দ্বারা নেক কাজ করবে।’ পুনরায় আরজ করলেন, তার জবান যদি ত্রুটিযুক্ত হয়? ইরশাদ হলো, ‘দুর্বলকে সাহায্য করবে।’ আরজ হলো, যদি সে নিজেই দুর্বল হয় ও সাহায্য করার শক্তি না থাকে? ইরশাদ হলো, ‘যে কাজ করতে পারে না, তার কাজ করে দেবে।’ আরজ করা হলো, যদি সে নিজেই এমন অকর্মণ্য হয়? ইরশাদ হলো, ‘নিজের দিক থেকে মানুষকে কষ্ট দেয়ার মতো কোনো কাজ করবে না’ (মুস্তাদরাকে হাকেম : কিতাবুল ঈমান, খন্ড ১, পৃ. ৬৩)।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, ঈমানদারদের উচিত অন্তরকে সুপ্রশস্ত করা, নেক আমলকে অন্তরের মনিকোঠায় দৃঢ়তা সহকারে স্থান দান করা এবং একে যাবতীয় কলুষতা থেকে বিমুক্ত রাখা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন