বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

অন্তরের প্রশস্ততা বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:১০ এএম

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পছন্দ করে আল্লাহপাক কিয়ামতের কষ্ট হতে তাকে নাজাত দান করুন, তাহলে তার উচিত রিক্ত হস্তকে অবকাশ দেয়া, কিংবা সেই ঋণকে ক্ষমা করে দেয়া’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুল বুয়ু, মুসনাদে ইবনে হাম্বল : পঞ্চম খন্ড ৪০৮ পৃ.)।
এ বর্ণনাটি মুসনাদে আহমদে এ শব্দ সহযোগে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় ঋণগ্রহীতাকে অবকাশ দেবে, অথবা ঋণ মাফ করে দেবে, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছাঁয়ায় অবস্থান করবে।’ মোট কথা, ইসলাম অন্যের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং ইহসান করাকে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ করেনি; বরং তাকে যাবতীয় পুণ্যকর্মের সাথেই বিস্তৃত করে দিয়েছে। শুধু কেবল জীবন ক্ষেত্রেই নয়, বরং মৃত্যুর মাঝেও ইসলাম ইহসানের পরিমন্ডল সঙ্কুচিত করেনি।
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক সকল বস্তুতে ইহসান করাকে ফরজ করেছেন। যদি তোমাদের কাউকে (শরিয়তের হুকুম মোতাবেক) মৃত্যুদন্ড দিতে হয়, তাও করতে হবে পরিচ্ছন্ন ও উত্তম পন্থায়। কোনো জানোয়ারকে জবেহ করতে চাও, তাহলে উত্তমরূপে তা সমাপন করবে। ছুরিকে তীক্ষè ধারালো করে নাও এবং জবেহ করার পশুকে আরাম দাও’ (সহিহ মুসলিম : কিতাবুস সাইদি ওয়াজ জাবায়েহ)।
যে আমার প্রতি আহসান করবে, আমিও তার প্রতি ইহসান প্রদর্শন করব। এ নীতি ও আদর্শ রাসূলুল্লাহ সা.-এর নৈতিক শিক্ষার খেলাপ। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরবারে আগমন করে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কোনো এক লোকের নিকট দিয়ে গমন করছি, কিন্তু সে আমার মেহমান নাওয়াজি করেনি। তবে সে যখন আমার নিকট দিয়ে গমন করবে, তখন কি আমি তার বিরূপ ব্যবহারের বদলা এর দ্বারাই দেবো? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, না, তুমি তার প্রতি মেহমান নাওয়াজি করবে’ (জামে তিরমিজি : ইহসান ও আকওয়া অধ্যায়)।
অন্য এক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন হয়ো না যে, তোমার বুদ্ধির গেরাতে তুমি আবদ্ধ হয়ে পড়েছ। তোমরা শুধু অন্যের দেখাদেখি কাজ করছ এবং বলছ যে, মানুষ যদি ইহসান করে তাহলে আমরাও তা করব। বরং তোমাদের অবস্থা এই হওয়া উচিত যে, সে যদি খারাপ আচরণও করে, তাহলে তুমি জুলুম করবে না’ (জামে তিরমিজি : ইহসান ও আকওয়া অধ্যায়)।
মানুষ ভুলবশত দৌলত ও প্রাচুর্যকে অথবা অপরাপর বড় বড় কথার সাথে ইহসানকে নির্দিষ্ট করে নেয় এবং মনে করে যে, গরিব আবার কিসের ইহসান করবে? কিন্তু মূল ঘটনা হচ্ছে এই যে, মানুষের সাথে ইহসান করার জন্য দৌলতের প্রয়োজন নেই; বরং প্রয়োজন হচ্ছে মনের বা অন্তরের। অন্তরের প্রশস্ততা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। হজরত বারা বিন আজিব সাহাবি বলেন, একবার এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ সা.-এর খেদমতে হাজির হয়ে দরখাস্ত করল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে এমন একটি কথা বলে দিন, যা করলে আমার জান্নাত নসিব হবে।
ইরশাদ হলো, ‘তোমার নিবেদন যদিও সংক্ষিপ্ত, কিন্তু তোমার প্রশ্ন খুবই বড়। তোমার উচিত প্রাণসমূহ আজাদ করা। আর অন্যের সাথে শরিক হয়ে কাহারো মুক্তির ব্যাপারে মাল-সম্পদ সাহায্য করা হলো গর্দান মুক্ত করা বা ক্রীতদাসদের মুক্ত করা। আর তুমি অবিরত দান করতে থাক। জালেম আত্মীয় প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করো। যদি তুমি তা করতে অপারগ হও, তাহলে ক্ষুধার্তকে আহার করাও, পিপাসার্তকে পানি পান করাও, মানুষকে নেক কাজ করতে বলো এবং বদ কাজ থেকে বিরত রাখো। যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে নিজেকে উত্তম কথা ছাড়া অন্যান্য কথা ও আলোচনা থেকে মুক্ত রাখো’ (মুস্তাদরাকে হাকেম : খন্ড ২৪, কিতাবুল মাকাতিব)।
একবার হজরত আবুজর রা. জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, ঈমানের সাথে পালন করার কোনো আমল বলে দিন। ইরশাদ হলো, ‘যে রুজি আল্লাহপাক দিয়েছেন, তন্মেধ্য থেকে অন্যদেরকে দান করো।’ পুনরায় আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, সে ব্যক্তি নিজেই যদি দরিদ্র হয়।
ইরশাদ হলো, ‘নিজের জবান দ্বারা নেক কাজ করবে।’ পুনরায় আরজ করলেন, তার জবান যদি ত্রুটিযুক্ত হয়? ইরশাদ হলো, ‘দুর্বলকে সাহায্য করবে।’ আরজ হলো, যদি সে নিজেই দুর্বল হয় ও সাহায্য করার শক্তি না থাকে? ইরশাদ হলো, ‘যে কাজ করতে পারে না, তার কাজ করে দেবে।’ আরজ করা হলো, যদি সে নিজেই এমন অকর্মণ্য হয়? ইরশাদ হলো, ‘নিজের দিক থেকে মানুষকে কষ্ট দেয়ার মতো কোনো কাজ করবে না’ (মুস্তাদরাকে হাকেম : কিতাবুল ঈমান, খন্ড ১, পৃ. ৬৩)।
মোদ্দা কথা হচ্ছে, ঈমানদারদের উচিত অন্তরকে সুপ্রশস্ত করা, নেক আমলকে অন্তরের মনিকোঠায় দৃঢ়তা সহকারে স্থান দান করা এবং একে যাবতীয় কলুষতা থেকে বিমুক্ত রাখা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Sukkur Ali ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৩ এএম says : 0
দয়ামায়া, ক্ষমা ও উদারতা মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। এ কারণে মুসলমানের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন করা। যারা ধর্মীয় ভাবধারায় লালিত-পালিত হন বা নিজেকে তৈরি করে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তারা সাধারণত নিজে সুযোগ-সুবিধা না নিয়ে অন্যের কল্যাণে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন।
Total Reply(0)
সাদ বিন জাফর ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
ক্ষমা মহত্তম গুণ। এই গুণের যারা অধিকারী, তারা পৃথিবীতে মহাপুরুষ নামে খ্যাত। ক্ষমা ও ভালোবাসা নিঃসন্দেহে চিরকল্যাণময়ী। প্রবল প্রতাপশালী ব্যক্তি যখন দ্বিধাহীন চিত্তে অসহায় ও দুর্বলকে ক্ষমা করে দেন, তখন ক্ষমার মহত্তম গুণটি ফুটে ওঠে মহানুভবতায়।
Total Reply(0)
নুরুল আবছার ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
মায়ামমতা, ক্ষমা ও উদারতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মক্কা বিজয়ের পর তিনি অপরাধীদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অথচ তাদের চরম অত্যাচার নির্যাতনে তাঁর সঙ্গী-সাথীসহ জীবন বাঁচাতে আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পবিত্র নগরী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছিল।
Total Reply(0)
সরল পথ ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৪ এএম says : 0
যখন কোনো ব্যক্তি তার সমপর্যায়ের শত্রুকে ক্ষমা করে দেন, তখন প্রকৃত ক্ষমাই স্বীকৃতি পায় এই সংঘাতময় মানব সমাজে। এই ক্ষমাই প্রকৃত ক্ষমা। এই ক্ষমার পেছনে কোনো অসহায়তা, দুর্বলতা, অভিমান বা দুঃখ থাকে না। এই ক্ষমা হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়ে জগৎকে করে শোভিত ও কল্যাণময়ী।
Total Reply(0)
রহিদুল ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
হাদিসে এসেছে, প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ। অর্থাৎ যে ব্যক্তি মানুষকে কথা বা কাজ দ্বারা কষ্ট দেয় না, সেই প্রকৃত মুসলমান। যেহেতু ক্ষমা ও উদারতা আল্লাহ তাআলা গুণ, তাই উদারতার ধর্ম ইসলামের অনুসারী মুসলমানগণও উদার প্রকৃতির এবং ক্ষমাপ্রবন হয়ে থাকেন।
Total Reply(0)
এস আলম ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। দৈনন্দিন কথা ও কাজে ভুল-ত্রুটি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষমা, দয়ামায়া ও উদারতা প্রদর্শনের ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর দেখানো নীতি ও নির্দেশ অনুসরণ করা আবশ্যক। যারা এ পন্থা অনুসরণ করবে তারাই তাকওয়াবান এবং সফলতা লাভকারী।
Total Reply(0)
রবিউল ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সকল কথা ও কাজে অন্যায়কারীর অপরাধ ক্ষমা করে তাদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করে তাকওয়ার সর্বোচ্চ গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। সকল মুসলমানকে ক্ষমা ও উদারতার বৈশিষ্ট্য লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
সত্যান্বেষী ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ২:৩৬ এএম says : 0
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন : ভালোমন্দ এক নয়, মন্দের পরিবর্তে ভালো ব্যবহার করো, তোমার পরম শত্রু যার সঙ্গে তোমার ঘোর বিদ্বেষ, দেখবে সে তোমার বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। মহান আল্লাহর এই মহান বাণীই ছিল মহানবীর জীবনাদর্শ। তাই তো আমরা দেখতে পাচ্ছি তিনটি যুদ্ধ এবং মক্কা বিজয়ের পরে বিজয়ী বেশে তার চোখ-মুখে কোনো প্রতিশোধের ছায়া নেই। বরং মক্কা বিজয়ের পরে বিজয় করেই ভুলে গেলেন অতীতের সহস্র নির্যাতন ও উৎপীড়নের বেদনাময় সৃষ্টি। তিনি নিদ্বর্িধায় বলেছেন, আজ তোমাদের কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময় ও ক্ষমাশীল।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন