সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পানির অব্যাহত সঙ্কট মোকাবিলায় এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, দূষিত পানি পান করার ফলে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে কয়েক লক্ষ শিশু মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কোথাও বা সন্তানসম্ভবা মায়েরা দূষিত পানি পান করার ফলে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেন। কখনো কখনো আমরা কিছু কিছু জন্তুকে খাল-বিল, নদী-নালা ও নর্দমার নোংরা পানি পান করতে দেখি। তেমন একটি মুহূর্তের ছবি দেখে আঁতকে উঠে আমরা ভাবি, যদি বাস্তবে আমাদেরও এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাহলে কেমন হবে। এমন পরিস্থিতি যে আমাদের ক্ষেত্রেও আসবে না, তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করতে হয় এমন জায়গাও আছে। পৃথিবীতে এমন দেশও আছে যেখানে প্রতিদিন পানির জন্য অগনিত মানুষকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে। এমন দেশও রয়েছে যেখানে তেলের চেয়ে পানির মূল্য বেশি।
বর্তমানে বিভিন্ন কারণে পানীয়জলের গুণাগুণ ও শস্যের উৎপাদন কমে আসছে। হয়তো আর কয়েক বছর পর মানুষের পানিসম্পদের জন্যে নিজের ওপর ধিক্কার জন্মাবে। গাছপালার মতো মানুষও শুকিয়ে মারা যাবে। বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য পদার্থগুলো মানুষসহ অন্যান্য প্রাণিরও ক্ষতি করছে। গাছপালারও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কীটনাশক পদার্থ, রাসায়নিক সার নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদিতে গিয়ে মিশেছে। এর ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি আজ মৃত্যুর মুখে। এদিকে, প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা চিন্তা না-করে আমরা যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছি, গাছ-গাছড়া কেটে, মাটি কেটে নগর তৈরি করছি, জলাশয় মাটি দিয়ে ভরাট করে অট্টালিকা নির্মাণ করছি, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না-করে কলকারখানা তৈরি করছি, তাতে ভবিষ্যতে আমাদের হাহাকার করতে হবে পানির জন্য। এমন দিন আর বেশি দূরে নয়, যখন কৃষককে চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে চেয়ে থাকতে হবে বৃষ্টির জন্য। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে অবজ্ঞা করে আমরা এগিয়ে চলেছি আধুনিক নাগরিক সভ্যতার দিকে। আদিম মানুষ অরণ্যে থেকে গাছ-গাছালির ফলমূল খেয়ে বেঁচে ছিল। আজকে ভাবতে অবাক লাগে যে, তা কী করে সম্ভব ছিল? কিন্তু এখন অরণ্য বলতে কিছুই নেই। চারিদিকে কেবল অট্টালিকার সারি। আজকের জমানার অধিকাংশ ছেলেমেয়ে অরণ্য চোখেও দেখেনি। অরণ্য কী তা ছবি দেখিয়ে বোঝাতে হয় তাদের।
পৃথিবীর সাগর, মহাসাগর, উপসাগর, নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, হ্রদ-হিমবাহ, মেরুতুষার-ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে বারিমন্ডল গঠিত। পৃথিবীর মোট পানির শতকরা ৯৭ ভাগ সমুদ্রে থাকে। শতকরা দুইভাগ পানি আছে হিমবাহ ও মেরুতুষারে। মানুষের পানীয় এবং অন্যান্য ব্যববহারের উপযোগী মাত্র এক ভাগ পানির উৎস নদ-নদী, হ্রদ, পুকুর, ডোবা, কুয়ো, নলকূপ, ঝরনা ও ভূগর্ভস্থ পানি।
সমগ্র পৃথিবীতে পানির পরিমাণ ও মান হ্রাস পাচ্ছে। পরিত্যক্ত পানির শোষণ ও পানীয় জলের শুদ্ধিকরণ বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ পানি ছাড়া প্রাণি বা উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারে না। পানির অপচয়ের মাত্রা দিনে দিনে বাড়ছে। তাই পানি সম্পদ ব্যবহার ও পানি সংরক্ষণের জন্য যথাযথ আইন প্রণয়ন জরুরি। পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী চার দশকের মধ্যে আমাদের দেশের ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ভয়ঙ্করভাবে হ্রাস পাবে। যার ফলে পানির সঙ্কট দেখা দেবেই। এমনিতেই এ দেশে সেচ সিক্ত জমির পরিমাণ খুব কম। তদুপরি পানির সঙ্কটের ফলে তা আরও কমে যাবে এবং স্বাভাবিকভাবে এর কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে না খাদ্যশস্যের উৎপাদনও। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বার বার এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত সমীক্ষক দল বলেছেন, আগামী ৪০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় ৩৮ শতাংশ হ্রাস পাবে। একদিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন কমে যাবে, অন্যদিকে বর্ষা ঋতুর সময় সীমাও কমবে। বর্ষা ছাড়া অন্য ঋতুতে বৃষ্টি প্রায় হবেই না। দীর্ঘদিন ধরে অল্প-অল্প বৃষ্টিপাত না হয়ে, কম সময়ে বেশি বৃষ্টি হবে। ফলে বৃষ্টির পানি নদী-নালা-খাল বাহিত হয়ে সাগরে বয়ে যাবে। সচ্ছিদ্র মাটি সে পানিকে যথেষ্ট পরিমাণে শুষে নেওয়ার সময় পাবে না। কমে যাবে মাটির নিচে পানির সঞ্চয়, নেমে যাবে পানিস্তর। অন্যদিকে ভূমিক্ষয় বাড়বে। বিজ্ঞানী পাচৌরি সবচেয়ে ভয়াবহ যে তথ্যটি জানিয়েছেন তা হল, পরিবেশগত তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে হিমবাহ গলে শেষ হয়ে যাবে। বড় বড় নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ কমে যাবে। তাপমাত্রা হেরফেরের ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের খাদ্যশস্যের মজুত ভান্ডারে টান পড়বে।
অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত এক দৈনিক পত্রিকার সংবাদে বলা হয়েছে, ২০৮০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১১০ কোটি থেকে ৩২০ কোটি মানুষ পানির চরম অভাবের মুখে গিয়ে দাঁড়াবে। পাশাপাশি সে সময়ের মধ্যে কম করেও ২০ থেকে ৬০ কোটি লোক ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি বর্তমানে যেভাবে ঘটছে তার পরিমাণ ২০৮০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে হিমবাহ তথা তুষারাঞ্চলের অবক্ষয় ঘটবে। ফলে বাড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর-বাড়ি ভেসে সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাবে। এমনকি বিশ্বের জৈব সম্পদের বৃহত্তম ভান্ডার হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়ার উপকূলবর্তী গ্রেট বেরিয়ার রিফেরও অবলুপ্তি ঘটবে। উল্লেখ্য, জার্মানীর পটসডামে ‘ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স’র বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিণামে ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষ সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করবে। এর ফলে ধ্বংস হতে পারে মানব সভ্যতা। জার্মানির বিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে অতীত ইতিহাসের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, মেক্সিকোর মায়া চীনের তাং বংশের সময়কালীন সভ্যতা মোহেনজোদাড়ো এবং সিন্ধু সভ্যতা প্রাকৃতিক কারণেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
সংবাদটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রেট বেরিয়ার রিফের অবলুপ্তির পাশাপাশি প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস হয়ে সাগরের পানি অধিক অম্লমুক্ত হয়ে পড়বে। প্রবাল কীট ও উদ্ভিদ জাতীয় জৈবসম্পদ ধ্বংসের ফলে সাদা চুনাপাথরের কঙ্কালের প্রাচীরে পরিণত হবে বিশ্বের এ জৈব সম্পদের বৃহত্তম ভান্ডারটি।
একটি ছোট্ট ঘটনার উল্লেখ করা যায়, বেশ ক’বছর আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার পরিবেশ পরিচালনার কৌশল নিরূপণের একটি কার্যসহায়িকা স্থির করে দিতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ করা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পৃথিবীর কম উন্নত বিভিন্ন দেশের স্বার্থে সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ করা বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক এ বাধ্যবাধকতার কারণে ব্রিটিশ সরকার এ টাকা সাহায্য হিসেবে বরাদ্দ করে। তাতে দেখা যায়, মোট যে টাকা বরাদ্দ করা হয় তা ঐ দেশের গ্লাসগো শহরের একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে এমন সব মানুষকে সে দেশে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাঠানো হয় যাদের মধ্যে কেউ কেউ ঐ দেশের বিদ্যালয়ে ভূগোল, পরিবেশ বিজ্ঞান বা জৈব বিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষিকা মাত্র। অথচ প্রতিদিন যে হারে তাদের দৈনিক ভাতা দেয়া হয়, তা পৃথিবীর প্রথম শ্রেণির বিশেষজ্ঞরা যা পেয়ে থাকেন তারই মতো। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল হোটেল এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চলাফেরার জন্য এদের জন্য রাজকীয় সুখ স্বাচ্ছন্দের ব্যবস্থা করা হয়।
এক তথ্যে জানা যায়, গত বছরের জুলাই মাসে এক ফোটা বৃষ্টি হয়নি গোটা কাশ্মীর উপত্যকায়। গুলমার্গ, পহেলগাঁওয়ে গরম জামা পরতে হয়নি কারো। পহেলগাঁওয়ে লিভার নদীর তীরে পড়েছিল বিশাল বিশাল বরফের চাঁই। কিন্তু এত গরমে নদীতে বরফের চাদর কেন? উত্তরে সেনাবাহিনীর এক মেজর জানিয়েছিলেন, ‘নদীর পানি জমে এ বরফ হয়নি। পাহাড়ে হিমবাহ গলে যাচ্ছে। সেই হিমবাহ থেকে বরফের চাদর নেমে এসেছে নিচে।’ জুলাই মাসের প্রচন্ড গরমের পরে শীত যে এমন প্রবল হবে তা কেউ ভাবেননি। শীতে সেরা তুষারপাত দেখল কাশ্মীরবাসী। সমুদ্রের তীরে করাচী বা বোম্বাইতে শীত তেমন পড়ে না। কলকাতা বা ঢাকার মতোও নয়। বৃষ্টিপাতের নিরিখে করাচী বা বোম্বাইয়ের স্থান ছিল ঢাকা, কলকাতার অনেকটা নিচে। কিন্তু সেই বোম্বাই বা করাচী একসময় বৃষ্টিপাতে ছাড়িয়ে গেল ঢাকা, কলকাতাকে। ২০০৫ সালের ২৭ জুলাই বোম্বাইতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছিল ৯৪.৪ সেন্টিমিটারে। বাণিজ্য নগরীর তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পূর্বাভাস দিতে হিমশিম খেয়েছে আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া পরিবর্তন নিয়ে যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা (আইপিসিসি) তৈরি হয়েছে তাদের সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করে আবহাওয়ার এ পরিবর্তনের কারণ খোঁজার চেষ্টা চালিয়েছেন। কেন খুঁজেছেন তারা? কারণ এর সঙ্গে পানি সঙ্কটের সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্ক রয়েছে পানিস্তরের। আইপিসি’র ২০০৭ এ প্রকাশিত সূত্র মতে, (১) পানির স্তর নামার ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে তীব্র পানিসঙ্কট দেখা দিবে। বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলে। (২) ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকায় সমুদ্র পানির তাপমাত্রা বাড়বে। (৩) ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, কলেরার জীবাণু আরো সক্রিয় হবে। (৪) তিব্বতে অন্তত চার কিলোমিটার হিমবাহ নিশ্চিহ্ন হবে। (৫) সমুদ্রের পানিস্তর বেড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্য তলিয়ে যাবে। (৬) ত্রিশ বছরে এশিয়ার ৩০ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নষ্ট হবে। (৭) বিপর্যয় ঘটবে সমুদ্র তলের টেকটনিক প্লেটে।
পানির জন্য নদী খাল ও জলাভূমির সংরক্ষণ যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করা সম্ভব আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা এবং গৃহীত পদক্ষেপের দিকে চোখ রেখেই। পরিবেশবিদদের ঘোষণা অনুযায়ী জলাভূমি অঞ্চল বিশেষ করে শহুরে জীবনে ফুসফুস স্বরূপ। জলাভূমি বুজিয়ে দিয়ে শহর বাজার গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয় পরিবেশের ভারসাম্য। অতীতে জনজীবনের সুস্থভাবে বেঁচেবর্তে থাকার স্বার্থেই খনন করা হয়েছিল বিভিন্ন জলাশয়। প্রাকৃতিক নিয়মেও কোথাও কোথাও গড়ে উঠেছিল জলাভূমি। সাধারণভাবে স্থানীয় ভাষায় বিল এবং হাওরের গুরুত্ব সচেতন মানুষের অজানা নয়। বর্ষায় বৃষ্টির পানিধারা জনপদ শহর অঞ্চল বিশেষকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বর্জ্য পদার্থকে বিল বা হাওরে নিয়ে ফেলে। বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে বর্জ্যকে পরিশোধিত করে। জলাশয়ের আশেপাশের গাছের ডালে আশ্রয় নেওয়া কাক-চিল, পানিস্রোতে বয়ে আনা মৃত জীবজন্তুর দেহাবশেষ নিঃশেষ করে পরিবেশকে মনুষ্য বসবাসের উপযোগী করে তোলে। রৌদ্র-তাপ থেকে শীতল করতে সহায়ক ভূমিকা নেয়। বড় বড় বিলগুলোতে মাছের উৎপাদন অঞ্চলকে জোগায় প্রয়োজনীয় আমিষ আহার। বৃহদাকার হাওরগুলোতে বর্ষায় ছোট মাছের প্রজনন বৃদ্ধি শীতে রবিশস্যের চাষ অঞ্চলে শাক-সবজির জোগান দেয়।
বিশুদ্ধভাবে সংরক্ষিত জলাশয় পানীয় জলের ভান্ডারও বটে। শহরাঞ্চলে যেসব জলাশয় বা পুকুর আছে তাতে বর্জ্য ফেলে পরিবেশকে করে তোলা হয়েছে আরও বিষাক্ত। সব পাড়ের বাসিন্দাদের সব ধরনের নোংরা আবর্জনা ফেলার অন্যতম স্থান এসব জলাশয়, এগুলো হতে পারত মাছের চাষ, নৌবিহারের ব্যবস্থা, ভাসমান রেঁস্তোরা ইত্যাদি। একইভাবে বিভিন্ন শহরের অনেক জলাভূমি মজে গেছে। মাটি ভরাট করে গড়ে উঠেছে বহুতল মার্কেট কমপ্লেক্স। কালে কালে এসব জলাশয় বন্ধ হয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, থাকবেনা। এসব জলাশয় এবং বিলের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশবাদীদেরও গাছ লাগানোর বাইরে জলাভূমি সংরক্ষণেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে।
পরিবেশের যে বিপন্নতা তার সমার্থক হল মানুষের বিপন্নতা। আমাদের এ বিপন্নতা কোনো বিদেশি সাহায্য অথবা সরকারি বদান্যতা রোধ করতে পারবেনা। আমাদের দেশের পরিবেশকে বাঁচাতে পারে আমাদের মধ্যে অর্জিত সচেতনতা। এ ক্ষেত্রে আমরা এ যাবৎকালে যে সমস্ত ‘সাকসেস স্টোরি’ অর্জন করতে পেরেছি তা হোক আমাদের বেঁচে থাকার অভিযানের পাথেয়, অনুপ্রেরণা। মনে রাখতে হবে, পরিবেশ রক্ষার জন্য যে সচেতনতার কথা বলছি তা যেন শ্লোগানধর্মী অভিযানে পরিণত না হয়। এ সচেতনতাকে বাস্তবায়িত করতে পারে ছোট ছোট বাস্তব কর্মসূচি নির্দেশিত বলিষ্ঠ কিছু কার্যক্রমকে-যাকে পরিভাষায় বলা যেতে পারে ‘অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড প্ল্যান্স’। নিজেকে দিয়ে শুরু করতে হবে। নিজে পানি অপচয় না করে পরিবারের আরও দু’জন সদস্যকে সচেতন করতে পারার মাধ্যমে প্রাথমিক কাজটি শুরু করা যায়।
আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, এসব পদ্ধতি অবলম্বন করলে পানির প্রচুর সাশ্রয় হবে। সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে পাশাপাশি সরকারকে এ কঠিন সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসতে হবে। সমস্যা আছে, থাকবে তার সমাধানও আছে। বসে থাকলে হবে না। দীর্ঘদিন আগে এডমন্ড হিলারী বলেছিলেন, পরিবেশজনিত সমস্যা আসলে একটি সামাজিক সমস্যা, এ সমস্যা সৃষ্টির কারণ ও শিকার দুই-ই মানুষ। আর মানুষই পারে এ সমস্যা সমাধান করতে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন