দিন যত যাচ্ছে ততই অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইপ্রেমীদের সমাগম বাড়ছে। যে হারে মেলায় দিন দিন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে তাতে কর্মদিবস আর ছুটির দিনকে আলাদাভাবে পার্থক্য করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন যেমন মেলায় আসছে নতুন নতুন বই, তেমন-ই যেন প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাণের মেলায় ছুটে আসছে শত-সহস্র বই প্রেমী মানুষ। তাদের সরব উপস্থিতিতে বই বিক্রির যেমন বাড়ছে তেমনই মেলার বিভিন্ন প্রান্তে জমে উঠছে আড্ডা, আনন্দ-হিল্লোল। সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস গতকাল সোমবার এবারের প্রন্থমেলা’র একাদশ দিন তারই প্রমাণ দিয়েছে।
প্রকাশনা সংস্থা আবিষ্কারের স্বত্তাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আজ (গতকাল সোমবার) বিক্রি ভালো হয়েছে। সরকারে ছুটির দিনে বিক্রি একটু কম হবে আমাদের এমন ধারনাটি পাঠকরা মিথ্যা প্রমাণ করেছে। মেলার প্রবেশ দ্বার উন্মোচনের পর লোকজন কম দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে দৃশ্যপট একেবারেই পাল্টে যায়। এভাবে চলতে থাকলে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের মেলা সফলতার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলেও মনে করেন আবিষ্কারের স্বত্তাধিকারী।
বইয়ের প্রতি পাঠকদের অনেক বেশি আগ্রহ অর্থাৎ আশাতীত বিকিকিনি হওয়াতে প্রকাশকদের চোখেমুখেও ছিলো আনন্দের ছাপ।
আর মাত্র একদিন বাদে পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। তার পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার-ভালোবাসা দিবস। অতীত সাক্ষ্য দেয়, এই দুইদিনে যে কোন দিনে (কর্মদিবস হোক আর ছুটির দিন হোক) মেলায় ভিড় হবেই। বাড়বে বিক্রি। সেই লক্ষ্যে প্রকাশনা সংস্থাগুলোও সেজে উঠেছে। এবারের মেলার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হতে যাওয়া এসব প্রকাশকদের প্রায় অধিকাংশ নতুন বই মেলার স্টলে-স্টলে নিয়ে এসেছে।
আসন্ন এই দিন দুটির বিষয়ে ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, গত শুক্রবার ও শনিবার বিক্রি একটু বেশি ছিলো। শুক্র ও শনিবরে যা বিক্রি ছিলো, সেই তুলনায় গত দুই দিন বিক্রি কিছুটা কমেছে। তবে গতকাল এবারের মেলার বিগত কর্মদিবসের তুলনায় অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, বই কিনুক আর না কিনুক মেলায় দর্শক সমাগম বাড়ছে এটিও এক প্রকার ইতিবাচক দিক।
এদিকে মেলার গতকাল একাদশ দিনে এসেও মেলার বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে বাংলা একাডেমির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকাশনা সংস্থা নালন্দা’র সত্তাধিকারি রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল। তিনি বলেন, মেলার শুরুতেই প্যাভিলিয়ন কিংবা স্টলের বিভিন্ন লাইনের মাঝখানে ইট বিছিয়ে অস্থায়ী রাস্তা তেরি করার কথা থাকলেও বাংলা একাডেমি এখনও তা করতে পারেনি। উদাহরণ স্বরূপ তিনি মেলা প্রাঙ্গণের প্রথমা প্যাভিলিয়ন ও নালন্দা প্যাভিলিয়নের আসে-পাশের রাস্তায় ইট বিছানোর চিত্র তুলে ধরেন। তবে মেলার অন্যান্য পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং এবারের মেলার বিক্রিও অনেক ভালো বলে জানালেন তিনি।
পাঠকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন হূমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলনসহ পুরানো ও পরিচিত লেখকরাই বেশি। এদিন মেলায় আগত অনেক পাঠক বইয়ের দাম নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার মনে করেন, এবার তুলনামূলক বইয়ের দাম একটু বেশি। এ কারণে বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে বলেও মনে করেন অনেক পাঠক। দাম একটু সহনীয় পর্যায়ে বই আরো বেশি বিক্র হতো বলে মনে করছেন মেলায় আগত বেশিরভাগ পাঠক। এদিন মেলার প্রবেশদ্বার উন্মোচন হয় বিকেল তিনটায় আর যথারীতি মেলা শেষ হয় রাত নয়টায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন