আজ পহেলা ফালগুন। প্রকৃতিতে বিরাজ করছে ঋতুরাজ বসন্ত। শীত মৌসুমের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবারই অমর একুশে বইমেলাতে তরুণ-তরুণীদের সরব ও রঙ্গিন উপস্থিতি বাসন্তি আবহের কথা মনে করে দিয়েছে। গতকাল অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র ১২তম দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিলো কিছুটা কম। সংখ্যায় কম হলেও শীতের কুয়াশা মাখা আর সূর্যের হালকা তেঁজে সোনা রোদের সাথে হালকা বাতাস আর পাতা ঝরার সুরোলিত ধ্বনীতে মেলার দুই প্রাঙ্গণেই আগত বইপ্রেমীদের ছিলো প্রাণবন্ত উপস্থিতি।
গতকাল বেলা ৩টায় মেলার ঝাঁপি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই বইপ্রেমিদের ভিড় জমে প্রাণের মেলায়। এসময় শীত ছেড়ে বসন্তের আমেজে নারীরা বাসন্তী রঙের শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে হাতে-খোঁপায় হলুদ গাদা ফুলসহ বাহারি ফুলে নিজেদের সাজিয়ে আসেন মেলা প্রাঙ্গণে। সেইসঙ্গে হাতে বাজে রিনিঝিনি শব্দে কাঁচের চুড়ি। অনেকে আবার পরিবারসহ মেলায় আসেন বসন্তের সাজে। পুরুষরাও নিজেদের সাজ-পোশাকে রেখেছেন বসন্তের ছোঁয়া।
এদিন বইমেলা ছাড়াও দোয়েল চত্বর, শাহবাগ-টিএসসি সড়কেও তরুণ-তরুণীদের জমিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের হাতে আর খোঁপায় ছিল হলুদ গাঁদা ফুল। আর প্রায় সবাই লাল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী, কমলা বা সাদা রঙে নিজেদের সাজিয়েছেন বাসন্তী সাজে।
হলুদ শাড়ি পরে আর মাথায় ফুল দিয়ে বইমেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নীলিমা হাকিম মৌয়ের সাথে। তিনি বলেন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে খুব মজা করছি। পছন্দের বই কিনলাম। যদিও বসন্ত আসতে এখনও একদিন বাকি, তবুও বাসন্তী সাজে এলাম, বন্ধুরাও এসেছে। বসন্ত আর বইমেলা দুটোই তো চমৎকার, সেজন্য দুটোকে একসূত্রে বাঁধা আরকি।
সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাই যেন ছিলো আগন্তক ঋতুরাজের আবেশে গ্রন্থমেলাময়। বইপ্রেমীদের পাশাপাশি মেলার দ্বাদশ দিনে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও ছিলো আশাব্যঞ্জক। সার্বিক বিবেচনায় এদিনের মেলায় বিকিকিনি অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু কম হলেও বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা শোনাচ্ছে আশার কথা। তারা বলছেন, আজ (গতকাল মঙ্গলবার) অন্যান্য দিনের তুলনায় বিক্রি একটু কম। কর্মদিবসে এমন হয়। কিন্তু এই কম বিক্রি আমাদের আশাবাদী করছে। কেননা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং বিশেষ দিনগুলো আশানুরুপ গেলে এবারের মেলা অন্যান্যবারের চেয়ে বেশী সফলতা পাবে।
ধানমন্ডি ১৫ থেকে আসা আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, আজই (গতকাল মঙ্গলবার) মেলাতে প্রথম এসেছি। মেলার নিরাপত্তার বিষয় থেকে শুরু করে সাজ-সজ্জা, স্টলবিন্যাস সবকিছুই অনেক পরিচ্ছন্ন। পরিশিলিত। মাতৃভাষার আন্দোলনের এবং মহান একুশের এই স্মৃতিবিজড়িত ভাষার মাসের এই বইমেলার জন্য সারা বছর বইপ্রেমী এবং সাধারণ মানুষেরা তীব্র আগ্রহে চেয়ে থাকে। এই মেলা উপলক্ষে দেশের সৃজনশীল কবি সাহিত্যিক-সহ সবধরণের লিখিয়েদের বই প্রকাশিত হয় বেশি। বছরের অন্যান্য সময় প্রকাশিত হওয়া বইগুলোও এ মেলায় পাওয়া যায়। আর, ঢাকার আশে-পাশের মানুষ বটেই এসব বই কিনতে আসে দেশের আনাচে-কানাচে থাকা পড়–য়ারাও।
এদিকে, গত সোমবার পরপর দুইবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে আাঁধারে ঢেকে যায় সমগ্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অন্ধকার পরিবেশে নানা ধরণের অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা এড়াতে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে আগতদের অনেকই মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে যায়। এতে করে অল্প সময়ের মধ্যেই সরব সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হঠাৎ করে নীরব হয়ে পড়ে। যার কারণে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন প্রকাশক। এর পুরো দায়ভার বাংলা একাডেমির বলেও মনে করছেন তারা। একুশের চেতনায় শাণিত এতো বড় একটা আয়োজনে পরপর দুইবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়াতে বাংলা একাডেমির অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করেছেন প্রকাশকরা। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন