শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জামিন পেয়ে সেই ব্যবসায়

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ক্রটিপূর্ণ এজাহার দাখিল, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা একই ব্যক্তি হওয়া, জব্দ তালিকায় বর্ণিত স্থানীয় সাক্ষীদের সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষীদের বক্তব্যে অমিল, জব্দ তালিকায় উল্লিখিত স্বাক্ষী ও অন্যান্য স্বাক্ষী আদালতে হাজির করতে ব্যর্থতা, উপযুক্ত, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য স্বাক্ষী উপস্থাপনে ব্যর্থতা, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষ্য না দেওয়া, আইনের বিধান অনুযায়ী জব্দ তালিকা তৈরি না করা এবং মামলার বাদী ও অভিযানকারী দলের সদস্যদের বক্তব্যে অমিল হওয়ায় মামলা থেকে জামিন কিংবা খালাস পেয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক মামলার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সঠিকভাবে মামলার চার্জশিট দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করি। স্বাক্ষীরা আদালতে কী বলে তা জানি না। অনেক ক্ষেত্রে স্বাক্ষীরা সঠিক ভাবে আদালতে স্বাক্ষী না দেওয়ার কারণে অনেক সময় আসামী ছাড়া পেয়ে যায়।
২০১৫-১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিল্লায় ৫ হাজার ৫২১ অভিযান পরিচালিত হয়েছে এর মধ্যে ১ হাজার ৬৯টি মামলাও দয়ের করা হয়। মামলায় ১ হাজার ৬০ জন আসামী করা হলেও এর মধ্যে ১৪৫ জনের সাজা হলেও বাকী আসামীরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে জামিন পেয়ে যান। অপর দিকে পুলিশের করা মামলার ক্ষেত্রে গত চার বছরে কুমিল্লায় ১১ হাজার ৫৯টি মামলায় ১২ হাজার ৯২০ জনকে আসামী করা হলেও একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ৬৯ ভাগ আসামি জামিন পেয়ে যান। প্রচলিত আইনে মাদকের উপাদান ও পরিমাণ অনুযায়ী মাদক মামলায় সর্বনিম্ন ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত সাজার বিধান রয়েছে। তারপরও মাদকসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া মাদক মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে ফিরছে একই ব্যবসায়।
আইন বিশেষজ্ঞ ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, মামলায় আসামির সাজা হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাক্ষী না থাকলে অপরাধ প্রমাণ হবে কেমন করে ? দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদালতে সাক্ষী হাজিরে বাধ্য করতে হবে। তিনি ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি হলে সাক্ষী না আসায় মামলা বিলম্বিত হবে না। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে স্বাক্ষী হাজির করা হয় না। এতে মামলা শেষ হয় না। দেরি হয়ে গেলে তদন্ত কর্মকর্তা বদলি হয়ে যান, স্বাক্ষী পাওয়া যায় না। এ কারণে আসামি খালাস পেয়ে যায়। বিষয়গুলো দেখা দরকার। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের ওপর নজরদারি রাখাও প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসামি অনেক সময় সরকারি কৌঁসুলিদের অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ করা হয়। তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা আমলে নেওয়া হয় না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, সরকারের দায়িত্ব স্বাক্ষী ও আলামত হাজির করা। কিন্তু এখানে চরম ব্যর্থতা আছে। ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত ব্যর্থতার কারণে অপরাধী খালাস পেয়ে যায়।
কুমিল্লা মাদক নিয়ন্ত্রক অফিসার কুমিল্লা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. মানজুরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, তদন্তকারী এখতিয়ারভুক্ত কর্মকর্তা সঙ্কটের কারণে অনেক সময় আমরা মামলার বাদীকেই তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য হই। এছাড়াও অনেক সময় আমাদের অনেক কর্মকর্তা রিটায়ারমেন্টে চলে গেলে সে স্বাক্ষী দিতে না আসা এবং পাবলিক স্বাক্ষী যারা হয় তারা মামলা চলাকালিন সময়ে স্বাক্ষী দিতে না আসায় অনেক সময় আসামী খালাস পাওয়ার কারন মনে করছেন ওই কর্মকর্তা।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ফৌজদারি অপরাধে মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরপেক্ষ স্বাক্ষী থাকা জরুরি। জব্দ করা দ্রব্য যে মাদক- সেটা প্রমাণ করতে হবে। স্বাক্ষী না থাকলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে অনেক সময় মামলা থেকে জামিন পেয়ে যায় মাদক বিক্রেতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammed Shah Alam Khan ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১০:৫১ এএম says : 0
মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল তার তথ্য বহুল প্রতিবেদনে আমাদেরকে মাদক ব্যাবসায়িদের বিচার, জামিন এবং খালাশ এসব নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞ ডঃ রেদোয়ান আহমেদ ও কুমিল্লা মাদক নিয়ন্ত্রক অফিসের উপপরিচালক মোঃ মানজুরুল ইসলামের মন্তব্য তুলে ধরে বিষয়টা পরিষ্কার করেছেন। আমি মুন্সী কামাল সাহেবকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। সাথে সাথে আমি ওনার লিখা প্রতিবেদনে আমরা মতে যেটা বাদ পরেছে সেটা আমি সর্বদাই পত্রিকায় লিখে থাকি সেটা হচ্ছে উকিল সাহেব। এখানে শুধু সরকারি উকিলের উপর দায় চাপিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ রেদোয়ান আহমেদ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দায়ী হচ্ছে ওনাদের সাথিরা মানে উকিল সাহেবরা। পৃথিবীর সব দেশেই উকিলেরা বাডি মানে বন্ধু হয়ে থাকেন কিন্তু আদালতে কিংবা আদালতের বাহিরেও পেশগত ভাবে তার বাডি নয়। উভয় পক্ষই সত্যের উপর থেকে প্রয়োজনে উভয়েই একত্রিত হয়ে যে পক্ষ মিথ্যার আশ্রয় নিতে চেষ্টা করছে তাকে কাবু করে মামলা নিষ্পত্তি করে নেয়। কিন্তু সত্যকে কেহই পরাজিত হতে দেয় না এটাই সত্য। আমি অনেক লিখে আসছি আমাদের দেশে উকিল বাবুরাই এসব দুষ্কৃতিকারীদের পক্ষ নিয়ে মিথ্যার সাগর ভাষিয়ে দিয়ে সরকারি উকিলদের সাথে সমঝতা করে প্রথমে আসামীর জামিন করিয়ে নেয় তারপর আসামী নিজেই সাক্ষীদেরকে আয়ত্তে নিয়ে আদলতে হাজির হতে দেয়না এভাবেই মামলার দফারফা করে দুষ্কৃতিকারীদেরকে রেহায় পাইয়ে দিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয় আজকালকার উকিল বাবুরা। এই টাকার অংশ আবার সরকারি উকিল ও তদন্তকারিরাও পেয়ে থাকেন এমনি আমরা শুনে আসছি। কাজেই যতদিন না উকিলদের মিথ্যা বলার জন্যে সাজা দেয়ার আইন করা না হবে ততদিন আদলতে আইনের বালাইও খুজে পাওয়া যাবে না। কাজেই আমাদেরকে যদি আইনের শাসন কায়েম করতে হয় তাহলে উকিলদেরকে প্রথমেই নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। ................... আল্লাহ আমাকে সহ সবাইকে সত্য বলা, সত্য বুঝা, সত্য পথে চলার ক্ষমতা দান করুন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন