ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী
বছরের সবচেয়ে সুন্দর, উত্তম ও মনোরম ঋতু নিঃসন্দেহে বসন্তকাল। মানুষের জীবনেরও সবচেয়ে প্রাণবন্ত অধ্যায় যৌবনকাল। বয়ঃসন্ধির ১৫/১৬ বছর থেকে নিয়ে ২০ বছর যৌবনকালের মূলধন। ছাত্রছাত্রীদের জীবনে এই অধ্যায়টি অতিবাহিত হয় কলেজ বা সমমানের মাদ্রাসার শিক্ষা জীবনে। ৬ বছর থেকে শিক্ষা জীবন শুরু হয়। তারপর প্রাইমারি ৫ + হাইস্কুল ৫ বছর পার হয়ে ১৬ বছর শেষে তরুণ-তরুণীরা পা রাখে কলেজ জীবনে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে। কলেজের এই দুই বছরের লেখাপড়ায় থাকে গত ১০ বছরের পড়াশুনার সঞ্চয় আর ভবিষ্যতে ডিগ্রি, অনার্স বা মাস্টার্সের ৬ বছর উচ্চতর শিক্ষার প্রস্তুতিপর্ব। ফলে এই দুই বছরের মেয়াদকাল সংক্ষিপ্ত বা সংকীর্ণ হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন মানুষের জীবনে যৌবনের সূচনাকালটির মূল্যমান অপরিমেয়।
কলেজ জীবনে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে- যাকে অন্যকথায় উচ্চ মাধ্যমিক বলা হয়, মূল তিনটি বিষয়ে পাঠ দান করা হয়। বিষয়গুলো হলো- আর্টস, কমার্স ও সাইন্স। বাংলায় বললে কলা বা মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান। স্কুলের ৯ম শ্রেণী থেকে পছন্দ অনুযায়ী বাছাই করা এই তিন বিষয়ের যে কোনো একটিতে ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুতি পর্বের লেখাপড়া করতে হয় পূর্ণ অধ্যবসায় সহকারে। কারণ, এর ভিত্তিতেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উল্লেখিত তিনটি বিষয়সংশ্লিষ্ট অনেকগুলো বিষয়ের যেকোনো একটিতে ভর্তি ও অধ্যয়নের সুযোগ হয়। উদাহরণ স্বরূপ, যারা কলেজ পর্যায়ে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় বিজ্ঞানে ভালো রেজাল্ট করে তারা ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। কমার্সের ছাত্ররা ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়ে উচ্চতর লেখাপড়ায় ব্যস্ত হয় আর মানবিকের ছাত্রছাত্রীরা সাহিত্য, সমাজ কল্যাণ, ভাষা প্রভৃতি বিষয় নির্বাচন করে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষার অবস্থা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার জন্য ভূমিকা স্বরূপ উপরের কথাগুলো তুলে ধরলাম। যাতে দেশের স্বল্প-শিক্ষিত ও সাধারণ লোকেরাও বিষয়টি বুঝতে পারেন। হাইস্কুলে ৯ম, ১০ম শ্রেণীতে ১০০০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তাতে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা থাকে ইসলামিয়াত বা ধর্মশিক্ষা বিষয়ে। অমুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করে। এর ধারাবাহিকতায় ইন্টারমিডিয়েটে বা কলেজের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতেও ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।
মানুষ তো রোবট নয় যে, সে শুধু বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি বা কমার্সের হিসাব-নিকাশ নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেবে। মানুষ তো মানবীয় গুণাবলীর কারণেই মানুষ। যে মানুষের এসব গুণাবলী নাই বা মনুষ্যত্বের বৈশিষ্ট্য নাই, তাকে মানুষ না বলে পশুর চেয়ে অধম বলাই ভালো। এরূপ মানুষেরা গায়ে গতরে ভদ্র অফিসার হলেও কলমের খোঁচায় জালিয়াতি করেন আর লুট করে ডাকাতদের হার মানাতে পারেন। ডাক্তার হয়ে মানবিক চেতনাশূন্য হলে গলাকাটা স্বভাবের হওয়াটা বিচিত্র নয়। এই মনুষ্যত্ববোধ ও নৈতিক চরিত্রের অভাবে সমাজের সর্বত্র, অফিস-আদালতে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতির তা-ব চলছে। একইভাবে মানবিক শাখায় পড়ে তারা রাজনৈতিক মাস্তানিতে গোটা জাতিকে জিম্মি করে রাখে। এসব দিক চিন্তা করেই অতীতে শিক্ষার সকল স্তরে; বিশেষত যৌবনের বসন্ত তিথিতে কলেজ স্তরে ইসলাম বা ধর্মশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগে। আসলে মানুষ যাতে রোবট বা যন্ত্র-দানবে পরিণত না হয়, তার জন্য নৈতিক শিক্ষা দরকার। নৈতিক শিক্ষার মূল শক্তিকেন্দ্র ধর্মশিক্ষা এবং মুসলমানদের জন্য ইসলাম।
আমরা ইতোপূর্বেও আলোচনা করেছি যে, একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে আমরা কখন শিক্ষিত বলে গণ্য করি? যখন সে নিজেকে, নিজের পরিবেশকে, নিজের দেশকে ও বিশ্বকে চিনতে, জানতে পারে। তখনই সে শিক্ষিত। এই জানার জন্য ইতিহাস পড়তে হয়। ভূগোল-পৌরনীতি পড়ে নিজ দেশের অবস্থান, বনজঙ্গল, নদীনালা, খালবিলের পরিচয় জানতে হয়। তারপর গ্রাম, পাড়া, ইউনিয়ন, জেলা, বন্দর, রেল, বিমানপোত, কলকারখানা প্রভৃতির তথ্যাদি তার জানতে হবে। একটি গাছ দাঁড়িয়ে থাকে শিকড়ের ওপর। শিকড় না থাকলে সামান্য ঝড়ের ঝাপটায় গাছটি পড়ে যেতে পারে। অনুরূপ কোনো জাতির অস্তিত্বের শিকড় হচ্ছে তার ইতিহাস। কাজেই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষিত বা জ্ঞানী হতে হলে যেমন নিজের পরিবেশ, দেশ ও ইতিহাসকে জানতে হবে, তেমনি জানতে হবে নিজেকে আর দেশের মানুষের চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস ও আচার-আচরণ। আরো জানতে হবে দেশের মানুষ ভালমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, হারাম-হালাল, পাপ-পুণ্য সম্পর্কে কী বিশ্বাস পোষণ করে। ধর্মীয় আচার-আচরণে, ইবাদত বন্দেগীতে যা কিছু করে তার দর্শন ও তাৎপর্য কী বা কুসংস্কার কোনটি, মানুষকে মানবীয় গুণাবলীসম্পন্ন আদর্শ মানুষ হতে হলে কী কী জিনিসের প্রয়োজন, সেগুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হবে।
কোনো বিদেশি কোম্পানি অন্যদেশে তার একটি পণ্য বাজারজাত করতে আগ্রহী। তখন কোম্পানিটি প্রথমে জরিপ চালায় যে দেশের লোকদের রুচি-প্রকৃতি, ভালো লাগা না লাগার মানদ- প্রভৃতি বিষয়ে। তারপরেই পণ্যটি রফতানি করে। অর্থাৎ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ উহ্য রাখলেও নিছক বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে থাকা জরুরি। যাতে একদিকে নিজে নৈতিক গুণাবলী অর্জন করতে পারে, অন্যদিকে দেশের মানুষের বিশ্বাস ও রুচি প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। সেই সাথে সমাজের লোকদের প্রতি দায়িত্ব, পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের মানদ-টি ধর্মীয় মূলনীতি সামনে রেখে বিচার-বিবেচনা করতে পারে আর ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মের নামে প্রচলিত কুসংস্কার থেকে নিজে সতর্ক ও মানুষকে রক্ষার উপায় খুঁজে বের করতে পারে। এসব দিক চিন্তা করলে যৌবনের সূচনালগ্নে প্রতিটি তরুণ-তরুণীকে জাগতিক শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে ১০০ নম্বর আন্দাজে ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। ধর্ম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবে স্বভাবগতভাবে ধর্মীয় চেতনা সম্পন্ন তরুণ বা ছাত্ররা যে কোনো বিভ্রান্ত বিচ্যুত উগ্রবাদী গোষ্ঠীর ধর্মান্ধ প্রচারণার শিকার হওয়া অসম্ভব নয়। এর বাস্তব দৃষ্টান্ত সম্প্রতি আমাদের দেশে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এই আপদ ও বিপদ থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষার জন্য অবশ্যই আমাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মতো আলেম বানাতে হবেÑ এমন কথা আমরা বলি না। তবে ইসলামের আকিদা-বিশ্বাস, আচরণ ও সামাজিকতা আর আনুষ্ঠানিক ইবাদতের গুরুত্ব সম্পর্কিত যুক্তি ও শিক্ষাসমূহ সীমিত ও সহজ সিলেবাসে শিক্ষা দিলে প্রত্যেকে যে ধর্মে ও সমাজে বসবাস করছে তার মাহাত্ম্য ও ভালোমন্দ দিকগুলো উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েদের সুন্দর জীবন গঠন ও পবিত্র মনমানসিকতা পালনের জন্য এতটুকুন ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা কিছুতেই অস্বীকার করা যাবে না।
আমাদের দেশে যারা মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে আছেন তাদের অনেকে মনে করেন যে, এর বাইরে ইসলাম নেই। স্কুল-কলেজে পড়লে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে হয়। এই ধারণা এখন পাল্টানো দরকার। কারণ, আমাদের সমাজের শতকরা ৯০ জন ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পড়ে। মাদ্রাসায় পড়ে মাত্র শতকরা ১০ জন। এই নব্বই জন মোল্লা হবে না বা মাদ্রাসায় পড়বে না। তবে তারা বা তাদের অভিভাবকরাও চায় যে, তারা মুসলমান হবে, নামাজ কালাম ঠিকমত পড়বে, আল্লাহ-রাসূলের দেয়া দ্বীন ইসলামকে ভালোভাবে চিনবে, জানবে। আলেম না হলেও মুসলমান হিসেবে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে। কাজেই মাদ্রাসা-মসজিদ নিয়ে খুশিমনে থেকে স্কুল-কলেজে ইসলাম শিক্ষার প্রতি উদাসীন থাকা কতখানি যুক্তিযুক্ত হবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। ধর্মপ্রাণ অর্থশালী বা শিক্ষিত লোকেরা ধর্মকর্ম ও সাওয়াব কামাইর জন্য মসজিদ-মাদ্রাসায় গিয়ে অকাতরে দান করেন, সেটা ভালো। কিন্তু কলেজে ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থাটা বহাল রাখার জন্য নিজের সাধ্য অনুসারে চেষ্টা করার সাওয়াবের পরিমাণ কি মসজিদ-মাদ্রাসায়, দান-খয়রাত থেকে কম হবে? Ñনিশ্চয়ই না।
ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল থেকে কলেজ পর্যায়ে তিনটি বিষয়ে ধর্মীয় শিক্ষা চালু ছিল। বাংলাদেশ আমলেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী থেকে ইসলাম শিক্ষা বিদায় দেয়ার ব্যবস্থা করে। দৈনিক সংগ্রাম, আমার দেশ ও নয়া দিগন্তের যথাক্রমে ১০, ১৫ ও ১৭ অক্টোবর ২০১৩ সংখ্যার এক প্রতিবেদনে জানা যায় :
২০১৩ শিক্ষাবর্ষে যে নতুন কারিকুলাম চালু হতে যাচ্ছে, তাতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়সহ সব শাখা থেকেই ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিকে বাদ দেয়া হচ্ছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এন সিটিবিতে অনুষ্ঠিত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী শিক্ষাক্রম উন্নয়ন বিষয়ক এক কর্মশালায় এ বিষয়টি উঠে এসেছে। দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদনে বলা হয় ‘বিগত ১৯৯৬ সাল থেকে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দিয়ে মানবিক শাখায় রাখা হয় এবং তা নৈর্বাচনিক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অধ্যয়নের সুযোগ ছিল। বর্তমান আওয়ামী মহাজোট সরকার প্রণীত ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি মানবিক শাখা থেকেও বাদ দেয়া হয়েছে।’
তবে ১৭ অক্টোবর দৈনিক সমকাল পত্রিকায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকার সচিব শ্রী ব্রজ গোপাল ভৌমিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পত্র-পত্রিকায় ইসলামী শিক্ষা বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয় ‘এ ধরনের সংবাদ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ, নতুন কারিকুলামে ইসলাম শিক্ষা শাখা নামে স্বতন্ত্র একটি শাখা রাখা হয়েছে।
আসলে এখানে একটি শুভঙ্করের ফাঁকি কাজ করছে। ফাঁকিটি হচ্ছে, সারা দেশের সকল কলেজে মানবিক শাখায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি নেয়ার সুযোগটি বাতিল করে দিয়ে ‘ইসলাম শিক্ষা শাখা, নামে একটি শাখা রাখা হয়েছে, যা সারাদেশে মাত্র কয়েকটি কলেজে থাকবে। তার মানে, যেসব ছাত্রছাত্রী ওই কয়েকটি কলেজে পড়াশুনা করবে তারাই সেই শাখার ঐচ্ছিক বিষয়টি নিতে পারবে। বাকি হাজার হাজার কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া হবে। ইসলাম শিক্ষাকে নজরবন্দি করে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নাস্তিক বানানোর এটি ফন্দি-ফিকির ছাড়া আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না।
প্রতিবাদের মুখে ৯৬ সালে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর ১০০ নম্বরের বাধ্যতামূলক ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া সম্ভব না হলেও অতি সন্তর্পণে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখা থেকে তা রহিত করা হয়েছে। এর ফল দাঁড়াবে, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের জন্য নিচ থেকে ছাত্রছাত্রী যোগান পাওয়া যাবে না। বরং বিনা ঘোষণাতেই বিভাগগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। হাজার হাজার শিক্ষক বেকারের খাতায় নাম লেখাবে। জাতীয় জীবন থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার এতবড় জঘন্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। আমরা এর প্রতিকার চাই।
কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে সকল বিষয়ে ১০০ নম্বরের বাধ্যতামূলক ইসলামী শিক্ষা চাই। এই শিক্ষার সুযোগ কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনার ওপর চরম আঘাত ও মসজিদ-মাদ্রাসা গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো জঘন্য অপকর্ম বলে মনে করি। তারা হয়ত বলবেন যে, ইসলাম শিক্ষা অনুৎপাদনশীল। সেটি পড়লে রুজি-রোজগারের সুযোগ নেই। আমরা বলব, শুধু রুটি-রুজি বা দেহের খোরাক জোগানোর জন্যই তো শিক্ষা নয়। মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্যও সেটি নয়। মানুষকে বাঁচতে হলে দেহের খোরাক যেমন প্রয়োজন, তেমনি আত্মার খোরাকও একান্ত আবশ্যক। জন্তু-জানোয়ারের সাথে মানুষের পার্থক্য তো এখানেই। যারা এই পার্থক্যকে গুরুত্ব দেন না বা মানতে রাজি নন, তাদের বলব : এই যুক্তিতে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখাটি তুলে দিলেই তো হয়। কারণ, এই অনুষদেও তো অর্থ বা উৎপাদনের তেমন যোগ নেই। ভাষাজ্ঞান, সাহিত্য চর্চা, দর্শন, ইতিহাস প্রভৃতি পড়ে অর্থ উপার্জনের তো সুযোগ নেই। তাহলে দোষটা একমাত্র ইসলামী শিক্ষার ওপর কেন আরোপ করা হবে। আশা করি, যারা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন, তারা এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করবেন এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যারা ক্ষমতার গোড়ায় বসে ষড়যন্ত্র করছেন তাদের ব্যাপারে সতর্ক হবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন