যমুনা এখন মৃতপ্রায় একটি নদীর নাম। নাব্য সঙ্কট, দূষণ, দখল ও ড্রেজিং না করায় উত্তরের বেড়াকোলা থেকে দাক্ষিণ দিকের কাউনিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩৫ মাইল দীর্ঘ যমুনা নদী এখন মৃতপ্রায়। মৌসুমের শুরুতেই এমন নাব্য সঙ্কটের কারণে নৌযান চলাচলে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পানির অপ্রতুলতায় মৎস্যজীবিরা হয়ে পড়ছে বেকার। দুর্গম চরাঞ্চলের পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় রবি মৌসুমের ফসল ফলানো দায় হয়ে পড়েছে। নদীর তীরবর্তী হতদরিদ্র প্রান্তিক কৃষক যারা নদীর পানির উপর ভরসা করে ইরি-বোরো চাষাবাদ করত তাদের দুঃখের শেষ নেই।
পানির সঙ্কটে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসা গাছ গাছালিও মরতে বসেছে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, উত্তরবঙ্গের একমাত্র নৌ-বন্দর শাহজাদপুর বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরে নাব্য সৃষ্টি হওয়ায় তেলবাহী জাহাজ, কার্গো, এমন কি শ্যালো নৌকাও কূলে ভিড়তে পারছে না। ভরা ইরি মৌসুমে তেল সঙ্কট দেখা দিলে এ মৌসুমে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটবে বলে আশঙ্কা । সব কিছু মিলে এক অশনি সংকেতের পূর্বাভাস।
জানা গেছে, এক কালের খরস্রোতা প্রমত্ত যমুনা এখন প্রাণহীন মরুভূমিতে পরিণত। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার যমুনা সেতুর উত্তর দক্ষিণের ১৯ পিলার পর্যন্ত পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। যমুনা সেতু ঘিরে ইতস্তত বিক্ষিতভাবে ছোট কচ্ছপের পিঠের মত ছোট বড় অসংখ্য চর ডুবো চর জাগায় নৌযান চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। যমুনার শাখা নদী হুড়াসাগড়, ফুলজোর, ইছামতি, কাটাখলি, নদী গুলোয় বুক জুড়ে এখন শুধুই বালুচর। উত্তর দিকের বেড়াকোলা থেকে কাউনিয় পর্যন্ত ১৩৫ মাইল ব্রক্ষপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দখল করে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করায় একদিকে যেমন বাঁধটির উপর চাপ বাড়ছে তেমনি বসত বাড়ী গড়ে উঠায় সেখানে বাঁধ কেটে ঘর-বাড়ী গড়ে উঠায় সেখানে ইদুরের সরু গর্র্ত সৃষ্টি হচ্ছে ফলে ভরা বর্ষা মৌসুমে ঐ সরু গর্ত দিয়ে পানি চুইয়ে চুইয়ে বাঁধ নাজুক হয়ে পড়ায় বাঁধ ভাঙ্গনেরও সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
যমুনা সেতুর উপর থেকে চোখ মেললেই শাখা নদী গুলোর করুণ চিত্র অনুমান করা যায়। নদীর বুকে হচ্ছে চাষাবাদ আর বিস্তৃর্ণ নদীচরে কিশোরেরা খেলছে ফুটবল, ক্রিকেট। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে মাঝ পথে প্রকান্ড চর জেগে উঠায় নদী এখন দ্বি-খন্ডিত। এ বন্দরে মালামাল তেলবাহী জাহাজ কার্গো কূলে ভিড়তে পারছে না। নদী কূলের অনতিদূরে জাহাজ, কার্গো নৌঙ্গর করে মালামাল খালাস করা হচ্ছে। পানির নাব্য কমে যাওয়ায় যে কোন সময় মালামাল পরিবহন করা বন্ধ হয়ে সঙ্কট সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক সময় ‘প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার’ নামে খ্যাত বাহিরগোলা নৌ-বন্দর,যমুনা নদীর ভূয়াপুর জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, সিরাজগঞ্জ পুরাতন জেলখানা ঘাট, কাজপুর ঘাট এলাকায় বড় বড় স্টিমার, লঞ্চ, কার্গো, মালবাহী জাহাজ ভিড়তো সেটা এখন গল্প। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এখন নাব্য সঙ্কটে পড়ে এই জেলায় অধিকাংশ নদী , মৎস্য চাষীরা এখন বেকার জীবন যাপন করছে। হেটেই পার হতে হয় নদী। কোথাও হাটু কোথাও গোড়ালী পানিতে নৌকা ভিড়ছে কাঁদাপানিতে, হাটু পানি পেরিয়ে কূলে আসতে হচ্ছে যাত্রীদের, মালামাল পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘপথ তপ্ত বালুর চর পেড়িয়ে যেতে বৃদ্ধ , শিশু ও নারী শিশুরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা ধানের সেচ নিয়ে এখন থেকেই পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায় ।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, চরাঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার কৃষক ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পলি ও দোআঁশ মাটিতে গম, বাদাম, মিষ্টি আলু সবজিসহ বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদ করা হচ্ছে তাতে ভাল ফলন হবে না বলেই আশঙ্কা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
পানি উন্নয়ন কর্মকর্তাদের মতে, অপরিকল্পিত ভাবে ড্রেজিং ও নদী থেকে বালু উত্তোলনের কারণেই এসব বিপত্তি ঘটছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন