চেতনার বাতিঘর ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর দৈনিক ইনকিলাবের রত্ন, দেশের রত্ন। তিনি আমাদের গর্ব ও অহংকার। এমন গুনীজন পেয়ে আমরা ধন্য, বাংলাদেশ ধন্য। তবে রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য দুর্ভাগ্য যে তার মতো এত বড় মাপের গুনীব্যাক্তিকে আজও মূল্যায়ন করা হয়নি। এটা জাতির জন্য সত্যি বড় দুর্ভাগ্য। ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুরের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল ইনকিলাব ভবনে আয়োজিত এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন এ কথা বলেন।
ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশে অনেক অযোগ্য ব্যাক্তিকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়েছে। অথচ ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আবদুল গফুর বর্তমান সময়ে সবদিক থেকে যোগ্যতম ব্যক্তি হওয়ার পরও তাকে যথাযথ সম্মান দেয়া হচ্ছে না। আমরা চাই খুব শিগগির জাতি তাকে যথাযথ সম্মানে ভূষিত করবে।
তিনি বলেন, অধ্যাপক আবদুল গফুর আমাদের রোল মডেল। তিনি সৎ- আদর্শ এবং প্রকৃত অর্থে একটি ডিসিপ্লিন লাইফের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তার সংস্পর্শে, সহচার্য্যে আমরা আছি এটা আমাদের সৌভাগ্য। তিনি যতদিন চাইবেন ততদিনই ইনকিলাবে তথা আমাদের সাথে থাকবেন। আমরা তার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন সহকারী সম্পাদক মুন্সী আবদুল মান্নান, নিউজ কোর্ডিনেটর মো: হাফিজুর রহমান, বিশেষ সংবাদদাতা স্টালিন সরকার, সহকারী সম্পাদক ওবায়দুর রহমান খান নদভী ও মেহেদী হাসান পলাশ। অনুষ্ঠানে দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রবীণ ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক কলেজ শিক্ষক ও বর্তমানে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার ফিচার সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল গফুরের জন্ম ১৯২৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ী জেলার দাদপুর গ্রামে।
১৯৪৫ সালে সমগ্র বাংলা ও আসামের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ফরিদপুর ময়েজ উদ্দীন হাই মাদরাসা থেকে (প্রবেশিকার সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯৪৭ সালে ঢাকা গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে সরকারি নজরুল কলেজ) থেকে ঢাকা বোর্ডের ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় নবম স্থান অধিকার করেন।
ছাত্রজীবনেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ফাইনাল অনার্স পরীক্ষার মাত্র দুই মাস আগে ভাষা আন্দোলনসহ তমদ্দুন মজলিসের কাজে সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করায় আবদুল গফুর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন । ফলে দীর্ঘ ১১ বছর পর ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সমাজকল্যাণে এমএ ডিগ্রি নিতে হয়। ১৯৪৭ সালে ছাত্রাবস্থায় তিনি পাক্ষিক জিন্দেগী পত্রিকায় সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তমদ্দুন মজলিস প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’-এর সহকারী সম্পাদক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এতে তিনি সুধীজনের প্রশংসা অর্জন করলেও সরকারের কোপানলে পড়েন। তিনি ১৯৫২ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ফলে সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফফতারি পরোয়ানা জারি করে। তিনি ১৯৫৭ সালে দৈনিক মিল্লাত ও ১৯৫৮ সালে দৈনিক নাজাত-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সূচনা থেকে তিনি এই পত্রিকার ফিচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তিনি ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ইসলাম, বিপ্লবী উমর, কর্মবীর সোলায়মান, রমজানের সাধনা, ইসলামের রাষ্ট্রীয় ঐতিহ্য, আসমান জমিনের মালিক, শাশ্বত নবী, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশ আমার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন