সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) ২০১৯-২০ সালের কার্যনিবার্হী কমিটির নির্বাচন আজ। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত দুইদিনব্যাপী ভোটগ্রহণ চলবে। নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদে মোট ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে নির্বাচনীয় আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) ও বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য (নীল) প্যানেলে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে কে জিতবে? তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে কোন প্যানেলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৪ মার্চ পর্যন্ত। এবারও বিএনপি ও তাদের মিত্ররা মরিয়া তাদের অবস্থান ধরে রাখতে, হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টায় আওয়ামী প্রার্থীরা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাদা প্যানেল বিজয়ী হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টও নির্বাচনেও সাদা প্যানেল জয়ের বিষয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ আইনজীবীরা। অপরদিকে বিএনপি আইনজীবীরা মনে করছেন, নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত পূর্ণ প্যানেল জয়লাভ করবে। আর সাধারণ আইনজীবীরা বলছেন- সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ভোটাররা সচেতন, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। তারা অনেক হিসাব চিন্তা করে ভোট দেন। তবে নির্বাচনে বিএনপির জন্য বিজয়ী হওয়া অনেক কঠিন হবে। কারণ তাদের নিজেদের মধ্যে প্রার্থী নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। আওয়ামী সমর্থিত আইনজীবীরা মতবিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন।
এবার নির্বাচনে ১৪ পদের (একজন সভাপতি, দু’জন সহসভাপতি, একজন সম্পাদক, একজন ট্রেজারার, দু’জন সহসস্পাদক ও ৭ সদস্য) জন্য প্রার্থী ৩৩। এবারের মোট ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৮৮ জন। সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা-সংক্রান্ত সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ভোট চেয়ে নানাভাবে প্রচারণায় প্রার্থীরা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীরা নিজ নিজ পদে জেতার জন্য প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। আদালত প্রাঙ্গণে সভা সমাবেশসহ নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করেছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীরা আইনজীবীদের কল্যাণে নানা প্রতিশ্রতি দেন। প্রতিটি প্যানেলের পক্ষে নিজ নিজ সমর্থকরা ভোট চাচ্ছেন। প্যানেল পরিচিতি ও সভাপতি এবং সম্পাদকের ব্যক্তিগত পরিচিতি, সমিতির অতীতের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান ও নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির লিফলেট বিতরণ করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা প্রথমে তাদের প্যানেল ঘোষণা করেন। তবে বিএনপি আইনজীবীরা প্যানেল দিতে গিয়ে নানা মতানৈক্য জড়িয়ে পড়ে। এখনও সম্পাদক পদ নিয়ে মতানৈত্য রয়েছে। গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের নেতা এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান সমিতির সভাপতি পদে ও অ্যাডভোকে মনির হোসেন সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চান। তিনি নিজেকে বিএনপি প্রকৃত প্রার্থী বলে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ): সাদা প্যানেলের সভাপতি পদে আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এ এম আমিন উদ্দিন) ও সম্পাদক পদে আইনজীবী আবদুন নূর দুলাল প্রার্থী হয়েছেন। সহ-সভাপতি (২টি) পদে বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস ও জসিম উদ্দিন, ট্রেজারার পদে সৈয়দ আলম টিপু, সহ-সম্পাদক (২টি) পদে কাজী শামসুল হাসান শুভ ও মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে আফিয়া আফরোজ, চঞ্চল কুমার বিশ্বাস, হুমায়ূন কবির, শামীম সরদার, মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, মোহাম্মদ মশিউর রহমান ও মোহাম্মদ জগলুল কবির প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন।
বিএনপি (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম) সমর্থিত ঐক্য প্যানেল: নীল প্যানেল সভাপতি পদে আব্দুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলী ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার এ এম মাহাবুব উদ্দিন খোকন। সহ সভাপতি পদে মো. আব্দুল জব্বার ভূইয়া এবং আব্দুল বাতেন, ট্রেজারার পদে মো. ইমাম হোসেন, সহ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান এবং শরীফ ইউ আহম্মেদ, কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রাশিদা আলিম ঐশী, মোহাম্মদ ওসমান চৌধুরী, কাজী আখতার হোসেন, মো. শাফিউর রহমান, মো. শরীফ উদ্দিন রতন, মো. মোহাদ্দেস উল ইসলাম ও সৈয়দা শাহীন আরা লাইলি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলে সভাপতির পরিচিতি: সিনিয়র অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এ এম আমিন উদ্দিন)। সিলেটে জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। একবার সমিতির সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি সহকারী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি এফবিসিসিআই এর নির্বাচন পরিচালনা আপিল কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও সম্পাদক পদে প্রাথী আবদুন নূর দুলাল নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে এল এল বি (অনার্স) এল এল এম (মাস্টার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এল এল এম ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়শেনর সাধারণ সম্পাদের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ আইন সমিতির সাবেক সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত সভাপতির পরিচিতি: আব্দুল জামিল (এ জে) মোহাম্মদ আলী। সাবেক ১২তম অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রথম অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি খ্যাতিমান একজন আইনজীবী ছিলেন। এছাড়াও সমিতির তিনবারের সভাপতি ছিলেন। এ জে মোহাম্মদ আলী বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি করেন। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। এছাড়াও তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনাকারী প্রধান আইনজীবী। এছাড়াও সম্পাদক পদে প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে পদে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিএনপির একবার এমপি ও বারের ৬ বারের সম্পাদকও ছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবীরা জানায়, পূর্বের চেয়ে এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেল জিতবে তা বলা যাবে না। সভাপতি পদে এ এম আমিন উদ্দিন এবং এজে মোহাম্মদ আলী এই দুজনের মধ্যে কেউ কম নয়। এদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলবে। আইনজীবী জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রভাবে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এগিয়ে রয়েছেন। কারণ এখানে স্বচ্ছ ভোট প্রয়োগের সুযোগ আছে। তবে আওয়ামী লীগ নতুন মুখ নির্বাচনে আসায় তারাও অনেক ভোট পাবেন। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ইনকিলাবকে বলেন, নীল প্যানেলের অবস্থা খুবই ভাল। সভাপতিসহ অন্যান্য প্রার্থী খুবই ভাল করবেন। মাহবুব উদ্দিন খোকন বার বার নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের পক্ষে কাজ করছেন। আমি আশাবাদী, নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত পূর্ণ প্যানেল জয়লাভ করবে। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাবেক সহ প্রচার সম্পাদক ড. মো. বসির উল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আশা করছি বিপুল ভোটে আমাদের সাদা প্যানেল জয়ী হবে। আমি আশাবাদী, সবাই ভাল করবেন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আরও করার চেষ্টা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন