সুপ্রিম কোর্টের দেয়া ‘স্ট্যাটাসকো’ ছুড়ে ফেলে দিলেন আইনমন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র সহকারি সচিব। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের আদেশকে ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। একইসঙ্গে এ ধরণের কোনো অর্ডার যেন নিয়ে না আসা হয়-এই মর্মে শাসিয়ে দেন প্রতিকার প্রত্যাশীকে। গত সোমবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এর সিনিয়র সহকারি সচিব মো: নজরুল ইসলামের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
লাঞ্ছনার শিকার ড.আ.ন.ম.এহছানুল মালিকী অভিযোগ করেন, তিনি রাজধানীর মিরপুর পল্লবী ইস্টার্ণ হাউজিং এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার। আপিল বিভাগের আদেশ নিয়ে এ দপ্তরে যান প্রতিকার চাইতে। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে তিনি পরিবহনপুল ভবনে আইনমন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি
(রেজিস্ট্রেশন)র দফতরে যান। এ সময় সংশ্লিষ্ট ডেপুটি সেক্রেটারি তার চেয়ারে ছিলেন না। এ অবস্থায় একটি দরখাস্ত নিয়ে তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এ যান। আবেদনে এহছানুল হক মালিকী বলেন, আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীন রূপনগর থানার অন্তর্গত ইস্টার্ন হাউজিং পল্লবী ২য় পর্ব এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার। আগুন্দা,দ্বিগুণ,মরুল ও গড়ান চটবাড়ি এলাকা নিয়ে গঠিত নতুন এই অধিক্ষেত্রে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমার পার্শ্ববর্তী অধিক্ষেত্রের নিকাহ রেজিস্ট্রার সরকারি প্রশাসনের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দিয়ে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। যদিও নিয়োগের বিষয়ে একমাত্র কর্তৃপক্ষ হচ্ছে আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে করা এক রিটের (রিট নং-১৩৩৫১/২০১৭) প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট আমার নিয়োগ সঠিক-মর্মে রায় দেন। তিনি বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ আপিল (নং-সিএমপি নং-২১২/২০১৯) করলে আপিল বিভাগ গত ০৫/০৩/২০১৯ তারিখে স্ট্যাটাসকো দেন। কিন্তু আপিল বিভাগের এই আদেশের কপি নথি থেকে ফেলে দিয়ে পার্শ্ববর্তী অধিক্ষেত্রের একজনকে আমার অধিক্ষেত্রে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের স্ট্যাটাসকোর আলোকে সিনিয়র সহকারি সচিবের ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ প্রত্যাশা করে দরখাস্ত জমা দিতে যাই। দরখাস্তের সঙ্গে স্ট্যাটাসকোর কপি, হাইকোর্টের আদেশসহ বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংযুক্ত ছিলো। দরখাস্ত পাঠ করেই সিনিয়র সহকারি সচিব মো: নজরুল ইসলাম তেলে- বেগুনে জ্বলে ওঠেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ সম্বলিত আবেদনটি তিনি ছুড়ে ফেলে দেন। সেই সঙ্গে আমাকে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। চরম দুর্ব্যবহার করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এই মর্মে হুমকিও দেন যে, এ ধরণের ‘ভুয়া কাগজ’ নিয়ে যেন তার কাছে আর না যাই।
এর আগে এই কর্মকর্তা মো:আব্দুল মোতালিব নামের আরেক নিকাহ রেজিস্ট্রারের সঙ্গেও অনুরূপ আচরণ করেছেন-মর্মে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রতিকার চেয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন) বরাবর করা আবেদনে আব্দুল মোতালিব উল্লেখ করেন, মিরপুর পল্লবীর ডিওএইচএস অধিক্ষেত্রের নিকাহ রেজিস্ট্রার আমি। নিয়োগলাভের পর নিষ্ঠার সঙ্গে সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসছি। কিন্তু আমার পার্শ্ববর্তী নিকাহ রেজিস্ট্রার ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দিয়ে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। আমার নিয়োগ নিয়ে রিট (নং-১৫৫৬০/১৬) হয়েছে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ সিএমপি (নং-১৬৬/২০১৯) করে। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ স্ট্যাটাসকো দেন। যা এখনও বলবৎ রয়েছে। ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রার এসবকে তোয়াক্কা না করায় অগত্যা আমি রিট (৫১৬৬/২২) করি। হাইকোর্টের রায়,রিট এবং সুপ্রিম কোর্টের স্ট্যাটাসকোর তথ্য গোপন করে ওই অধিক্ষেত্রে অন্য একজনকে নিয়োগ দানের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেন। আমি স্ট্যাটাসকোর আলোকে আপনার ( যুগ্ম-সচিব,প্রশাসন) কাছ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত কামনা করছি।
এদিকে আইনমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়,ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারিত হওয়ায় দুই সিটিতেই নতুন ওয়ার্ড সংযুক্ত হয়। এর ফলে সৃষ্টি হয় নিকাহ রেজিস্ট্রারদের নতুন অধিক্ষেত্র। এসব অধিক্ষেত্রের প্রায় সবগুলোতেই ইতিপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারগণ দায়িত্ব পালন করছেন। তা সত্ত্বেও মোটা অংকের নজরানার বিনিময়ে সিনিয়র সহকারি সচিব মো: নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি সিন্ডিকেট করে একের পর এক নতুন নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ দিয়ে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ-নির্দেশও। এতে ইতিপূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং সিন্ডিকেট নিযুক্ত নিকাহ রেজিস্ট্রারের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে জটিলতা। বিরোধ বাঁধছে। উৎপত্তি হচ্ছে নতুন নতুন মামলা।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কপি ছুড়ে ফেলা এবং প্রতিকার প্রত্যাশীকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে সিনিয়র সহকারি সচিব মো: নজরুল ইসলাম বলেন, খাম ছাড়া দরখাস্ত দেয়ায় আমি একটু জোরে কথা বলেছি। সুপ্রিম কোর্টের রায় ছুড়ে ফেলি নি। কাউকে লাঞ্ছিতও করিনি।
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ ছুড়ে ফেলা এবং প্রতিকার প্রত্যাশিকে লাঞ্চিত করার বিষয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন-২) শেখ গোলাম মাহবুব বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। শাখাটি মন্ত্রণালয়ের বাইরে। ওখানে একজন ডেপুটি সেক্রেটারি (রেজিস্ট্রেশন) রয়েছেন। তার কাছ থেকে বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন