ন্যায় বিচারের প্রতীক হিসেবে এবার কোনো গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে উল্লিখিত দেব-দেবীর মূর্তি নয়। স্থাপন করা হয়েছে পবিত্র কোরআনের অমীয় বাণী। যার বাংলা অর্থ: ‘হে মুমিনগণ। তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও ইহা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতা-মাতা এবং আত্মীয় স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক অথবা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়ের ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হইও না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল অথবা পাশ কাটিয়ে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।’ উৎকলন করা হয়েছে মহাপবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআনের সুরা ‘নিসা’র ১৩৫ নম্বর আয়াত।
বিশ্বখ্যাত শিল্পী জহিরুল হকের হাতে লেখা দৃষ্টিনন্দন এ ক্যালিগ্রাফি দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই কারোর। হাইকোর্ট মাজারগেট দিয়ে প্রবেশের পর জাতীয় ঈদগাঁহের উত্তর পশ্চিম কোণে স্থাপন করা হয়েছে এই ক্যালিগ্রাফি। আরবি এবং বাংলা তর্জমাসহ ন্যায় বিচারের সপক্ষে এই বাণী যেন ভিন্ন এক দ্যুতি ছড়াচ্ছে। সোনালি রঙের জমিনে লাল-সবুজ বর্ণে উৎকীর্ণ এ বাণী জ্বল জ্বল করছে। মামলা শুনানির ব্যস্ততায় রুদ্ধশ্বাসে ছুটে চলা আইনজীবী, বিচার প্রার্থীরা থমকে দাঁড়াচ্ছেন। ক্ষণিক দাঁড়িয়ে মনোযোগ নিবদ্ধ করছেন কোরআনের আয়াতে। প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে ন্যায় বিচারের প্রাণকেন্দ্র। দেশের মানুষের বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল। এ কারণে প্রবেশপথে কোরআনের ন্যায় বিচারের বাণীসম্বলিত সুরা নিসার আয়াতের ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব অর্থায়নে ক্যালিগ্রাফিটি তৈরি করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এটি স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ক্যালিগ্রাফি দেখে এসেছেন। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এস কে তোফায়েল হাসান ও আপিল বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার এম এম মোর্শেদ ক্যালিগ্রাফি স্থাপনের বিষয়টি সমন্বয় করেছেন।
প্রসঙ্গত: এর আগে ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে ‘ন্যায় বিচারের প্রতীক’ হিসেবে গ্রিক দেবী থেমিসের মূর্তি স্থাপন করা হয়। জাতীয় ঈদ গাঁহের সামনে এমন মূর্তি স্থাপনের ঘটনা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। ধর্মপ্রাণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে ঈদের জামায়াতের সময় মূর্তিটি কালো কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়। ইসলামী সংগঠনগুলো প্রবল আন্দোলনের হুঁশিয়ারির মুখে এক রাতে মূর্তিটি অপসারণ করা হয়। পরে সেটি সুপ্রিম কোর্ট মূল ভবনের পেছনে এবং হাইকোর্ট অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুন: স্থাপন করা হয়। এ ঘটনার পর কেটে গেছে ৫ বছর। বর্তমান প্রধান বিচারপতি দায়িত্বে এসেই বিচার প্রার্থীদের জন্য ন্যায়-কুঞ্জ স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেন। যার সর্বশেষ সংযোজন কোরআনের আয়াতের এই ক্যালিগ্রাফি স্থাপন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন