শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা বাড়ছিল। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন জনগণের আশা-ভরসার কেন্দ্র। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের উপর অর্পিত হয়েছিল জনগণের প্রগাঢ় আস্থা। আর তার বাসভবন পরিণত হয়েছিল সংগ্রামী জনতার মিলনকেন্দ্রে। এখানেই বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে বৈঠকে বসে কর্মপন্থা স্থির করছিলেন। ইয়াহিয়া খান যে আলোচনার বিপরীতে ঢাকায় গোপনে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, তা বঙ্গবন্ধু টের পেয়ে গিয়েছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের নিরস্ত্র করে গুরুত্বহীন জায়গায় বদলি (ডাম্পিং পোস্টিং) শুরু করার খবর পাচ্ছিলেন তিনি।
অন্যদিকে তার বাসভবনেই সাক্ষাত করতে আসছিলেন পাকিস্তানি নেতৃন্দসহ বিদেশী ব্যক্তিত্ব, প্রতিনিধি ও সাংবাদিকগণ। এদিকে দেশে ২ মার্চ থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত কী পরিস্থিতিতে সৈন্য তলব করা হয়েছিল তা তদন্তে সামরিক প্রশাসকের ঘোষিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিশন তিনি প্রত্যাখ্যান করেন ও কমিশনকে সহযোগিতা না করতে সকলকে নির্দেশ দেন।
এদিন সকাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হতে থাকে। সমবেত জনতার মধ্য থেকে মুহুর্মুহু স্লোগান ওঠে- ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা, আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব, ‘বঙ্গবন্ধু এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে, জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ ইত্যাদি।
এদিন চট্টগ্রামের বিশাল জনসভায় ন্যাপ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, আর কোনো দ্বিধাদ্ব›দ্ব নেই, শেখ মুজিব দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এখন যার যার কাজ করে যেতে হবে।’
ঢাকায় বিমান বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ঢাকা শহরসহ প্রায় সব জায়গাতেই টহল দিতে থাকে স্বয়ংক্রিয় ভারি অস্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানি সেনারা। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, টঙ্গী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন শিল্প এলাকার সৈন্যরা বিনা উস্কানিতে গুলি চালায়।
এদিন রাতে পাকিস্তান সরকারের এক ঘোষণায় বলা হয়, ‘১৯ মার্চ সকাল ১১টায় প্রেসিডেন্ট হাউসে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে আবার তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন