আজ ১৯ মার্চ। এদিন মুজিব-ইয়াহিয়া তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেড় ঘন্টার এ বৈঠকে বঙ্গবন্ধু তিনদফা প্রস্তাব পেশ করেন। তার প্রস্তাবগুলো ছিল- প্রেসিডেন্টের ঘোষণায় সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কেন্দ্রে আপাতত ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সরকার থাকতে পারে।
কিন্তু প্রদেশগুলোতে অবিলম্বে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার গঠন করবে এবং পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রস্তাবিত পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পৃথকভাবে মিলিত হয়ে ছয় দফার ভিত্তিতে খসড়া সংবিধানের সুপারিশ পেশ করবে। আর সংসদের আনুষ্ঠানিক অধিবেশনে তা চ‚ড়ান্ত করা যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রস্তাবগুলোর ব্যাপারে আলোচনা ও বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ভুট্টোর আপত্তি না থাকলে এ ধরনের একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজি হননি ভুট্টো। ফলে তৃতীয় দফা বৈঠকও ব্যর্থ হয়।
আলোচনা শেষে দুপুর ১২টায় স্বীয় বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেড় ঘণ্টা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আমাদের আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা আগামীকাল সকাল ১০টায় প্রেসিডেন্ট ভবনে পুনরায় আলোচনা বৈঠকে বসব। তৎপূর্বে উপদেষ্টা পর্যায়ে সন্ধ্যায় আমার প্রতিনিধি এবং প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।’
আলোচনায় অগ্রগতি সম্পর্কে জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনার কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আরও সময়ের প্রয়োজন। আমি বিশ্বাস করি জেনারেল ইয়াহিয়া বাস্তবতাকে অনুধাবনের চেষ্টা করছেন। তার বিপরীত কিছু ঘটলে তা হবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা পিছু হঠতে পারব না। এটা তাদের বুঝতে হবে।’
১৯৭১ সালের এদিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক বিশেষ স্মরণীয় দিন। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের দিন। জয়দেবপুর সেনানিবাসের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তারা সময় ক্ষেপণ করেন। তাই তাদের নিরস্ত্র করতে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সসৈন্যে আসেন ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব।
কিন্তু বাঙালি জনতা বিভিন্ন স্থানে ও জয়দেবপুর সেনানিবাসমুখী রাস্তায় ব্যারিকেড দেন। জনতাকে হটাতে সৈন্যরা গুলি চালায়। এ গুলিবর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চারপাশের গ্রাম থেকে ক্ষুব্ধ জনতা ছুটে আসে। সৈন্যরা আবার গুলি চালায়। এ সময় সেখানে মোতায়েন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে অস্বীকার করে।
সৈন্যদের সাথে দেশী অস্ত্রশস্ত্র ও কয়েকটি বন্দুকধারী জনতার সংঘর্ষ চলে। এদিন ৯ জন নিহত হন। পরে আরও ১১ জনের মৃত্যু ঘটে এবং শতাধিক লোক আহত হন। সন্ধ্যায় সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। এ ঘটনায় এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, তারা যদি মনে করে থাকে যে বুলেট দিয়ে জনগণের সংগ্রাম বন্ধ করতে সক্ষম হবে, তাহলে তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করছে। জনগণ যখন রক্ত দিতে, প্রাণ দিতে শিখেছে, তখন কোনো শক্তিই আর তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।
সকালে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এবং প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের মধ্যে দু’ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন