আজ ২১ মার্চ। প্রকৃতিতে চৈত্রের ঝাঁঝালো উত্তাপ, বাঙালির হৃদয়ে দ্রোহের আগুন। দুয়ে মিলে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দিকে সবার দৃষ্টি। ইতিহাসের পাতায় কি লেখা হতে চলেছে আগামী দিনগুলোতে, তা কেউ জানে না।
ঝড় উঠবে, বাজবে প্রলয়ের বাঁশি নাকি আলোচনা-সমঝোতার পথে বইবে শান্তির সুবাতাস। কারোরই তা জানা নেই। ঢাকার রাজপথ তখন মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত। সংগ্রামী চেতনাদীপ্ত নেতাদের বক্তৃতায় স্বাধীনতার আহ্বান। সারাদেশে শেখ মুজিবের আহআন মোতাবেক অসহযোগ চলছিল।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণক্রমে এদিন বিকালে ঢাকায় আসেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো। ক্ষুব্ধ জনতা তার বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কড়া সামরিক নিরাপত্তায় তিনি হোটেলে পৌঁছান। ভুট্টোর সঙ্গে ছিলেন তার ১৩ জন উপদেষ্টা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুট্টো জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে গেলে জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও তার প্রতি জুতা নিক্ষেপ করে।
রাতে বিদেশী সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সকালে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলিত হন পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জোসেফ ফারল্যান্ড। তিনি বঙ্গবন্ধুকে এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে বঙ্গবন্ধু তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তৎক্ষণাৎ সেসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি আমার জনগণকে পাকিস্তানের শেয়ালদের হাত থেকে মুক্ত করে আমেরিকান বাঘদের হাতে তুলে দিতে পারি না।’
অপরদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আজ এক অনির্ধারিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৭০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। অন্যপক্ষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে ছিলেন তার আইন উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস এবং সামরিক উপদেষ্টারা। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আলোচনা সফল করতে হলে এখন প্রেসিডেন্টকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
রাতে ভুট্টো ও ইয়াহিয়া গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং ২৫ মার্চের গণহত্যার নীলনকশা চ‚ড়ান্ত করেন। এদিন পশ্চিম পাকিস্তানের বিশিষ্ট আইনবিদ এ কে ব্রোহি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের বিপরীতে ‘লাহোর প্রস্তাব দিবস’ পালন করা, এ উপলক্ষে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন এবং সারা দেশে সাধারণ ছুটি পালনের নির্দেশ দেন।
এদিন জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী দ্রব্য বর্জন সপ্তাহ পালনের ডাক দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন