বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিদের ওপর

হোসেন মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

আজ সেই ভয়াল কালো দিন ২৫ মার্চ। এ দিনের শেষে মধ্যরাতের কিছু আগে ঢাকায় শুরু হয় ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ও মৃত্যুর বিভীষিকা। বাঙালি দমনের জন্য সেনাবাহিনী প্রণয়ন করেছিল নীল নকশা- অপারেশন সার্চলাইট। তা বাস্তবায়নের জন্য পাশব নখর বিস্তার করে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সৈন্যরা। সে রাতে তারা বইয়ে দিয়েছিল রক্তের বন্যা। ঢাকা পরিণত হয়েছিল লাশের শহরে।
এদিন দুপুর ১২টার দিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে ক্যান্টনমেন্টে চলে যান। এ খবর পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন। সবার মধ্যেই পাকিস্তাানিদের সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে আশংকা বিরাজ করছিল। রাত পর্যন্ত তাদের সাথে আলোচনা হয়। এদিনই কিছু একট ঘটতে পারে বলে সবার মধ্যে আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠে। তারা বঙ্গবন্ধুকে বাড়ি থেকে সরে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু সাহসী নেতা তাদের বলেন, ‘আমি জানি আজই তারা ক্র্যাকডাউন করবে। তবুও আমি এখানেই থাকব। কারণ, ওরা যদি আমাকে না পায়, তাহলে ঢাকা শহরকে ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করবে।’
এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সর্বোচ্চ গোপনীয়তার মধ্যে ইয়াহিয়া খান বিমানে ঢাকা ত্যাগ করেন। কিন্তু সাথে সাথেই সে খবর বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে যায়। তবে ভুট্টো এই রাতে ঢাকাতেই হোটেলে ছিলেন। পরদিন ২৬ মার্চ সকালে তিনি বাঙালির লাশের শহর ঢাকা ছেড়ে করাচি রওনা হন। বিমানে ওঠার আগে তিনি মন্তব্য করেন- শোকর খোদার, পাকিস্তান রক্ষা পেল।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইউনিটগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, পিলখানা ইপিআর হেডকোয়ার্টার, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, লক্ষীবাজারে হামলা চালায়। এদিকে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন শুরুর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে তার সে ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসভবনে একটি কমান্ডো দল পৌঁছে। তাকে বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে গিয়ে রাতে আদমজি স্কুলে রাখা হয়। পরদিন নেয়া হয় ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউসে। তিনদিন পর তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের দমন অভিযানের বিরুদ্ধে বাঙালির তিন ধরনের স্বতস্ফ‚র্ত প্রতিরোধ প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। একটি ছাত্র-যুবকদের, আরেকটি ইপিআরের ও অন্যটি পুলিশ বাহিনীর। উন্নত, ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে এ ছিল বিক্ষিপ্ত ও অসম প্রতিরোধ প্রচেষ্টা। কিন্তু এটাই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্ব।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান ঢাকায় ক্র্যাকডাউনের খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধে প্রথম বাঙালি সেনা বিদ্রোহ। জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন