শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

নামাজে একত্ববাদের বিধান

এ.কে.এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
এই নিরিখে প্রত্যেক নামাজী যে সোজা পথ এবং সরল রাস্তার জন্য দোয়া করে, তা হচ্ছে পুণ্যময় সেই বৃহৎ রাস্তা, যার উপর আল্লাহপাকের প্রিয় সকল নেক বান্দাহ, আম্বিয়া, সিদ্দিকীন, শোহাদা এবং সালেহীন সঙ্গতি ও সামর্থ্য অনুসারে পদচারণা করেছেন।
মূলত : সত্যপথ হতে বিচ্যুত হওয়ার দু’টি তরীকা রয়েছে। (১) এফরাত অর্থাৎ অতিরঞ্জিত ও সীমাতিক্রমের দ্বারা এবং (২) তাফরীত অর্থাৎ কম করা বা সীমা হতে বহু পেছনে পড়ে থাকার দ্বারা। অতিরঞ্জন হচ্ছে এই যে, আল্লাহর দেয়া শরীয়তে আমাদের নিজেদের দিক হতে কোন কিছু নতুন আরোপ করা। এটা হচ্ছে গোমরাহী। আর কম করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নির্দেশাবলী কাজে পরিণত না করা, এগুলো ছেড়ে দেয়া। এর দরুন প্রতিটি জনপদে আজাব এবং গজব নেমে আসে এবং এরই ফলশ্রæতিতে যাবতীয় এনাম ও পুরষ্কার ছিনিয়ে নেয়া হয়। প্রথম তরীকার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে নাসারাগণ। যারা ধর্মের মাঝে নিজেদের তরফ হতে অসংখ্য কথা সংযোজন করেছে। আর দ্বিতীয় তরীকার নমুনা হচ্ছে ইহুদীরা। যারা আল্লাহর নির্দেশাবলীকে পেছনের দিকে ছুঁড়ে মেরেছে। এবং সকল প্রকার দান ও অনুকম্পা হতে বঞ্চিত হয়েছে। সুতরাং মুসলমানদের দোয়া হচ্ছে এই যে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে এই উভয় প্রকার ভুল পথ হতে বাঁচিয়ে রাখুন এবং শান্তিময় মধ্যবর্তী পথে কায়েম রাখুন।
এই আলোচনার দ্বারা প্রতিপন্ন হলো যে, ইসলামের এই দোয়া (সূরায়ে ফাতেহা) দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় দোয়ার সমষ্টি, দেহ ও মনের পুণ্য কর্মকাÐের প্রতীক এবং ঈমান ও আখলাক সংক্রান্ত শিক্ষা এর দ্বারা পরিব্যাপ্ত রয়েছে। এর মাঝে আল্লাহর হামদ আছে, বান্দাহর দোয়া ও মোনাজাত আছে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ (সা:) সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, “যে নামাজে এই সূরা পাঠ করা হয় না, সে নামাজ অসম্পূর্ণ ও ত্রæটিযুক্ত থেকে যায়।” আল্লাহপাক বলেছেন, “নামাজকে আমার এবং বান্দাহদের মাঝে দুটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্ধেক আমার জন্য এবং বাকী অর্ধেক বান্দাহর জন্য। বান্দাহ যখন ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ বলে তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দহ আমার প্রশংসা করছে। তারপর যখন সে ‘আর রাহমানীর রাহীম’ বলে, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করছে। তারপর বান্দাহ যখন ‘মালিকি ইয়াউমিদ্দীন: বলে, তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দাহ আমার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছে। আর এতটুকুই আমার অংশ। এবং আমার এবং আমার বান্দাহর মাঝে সম্পৃক্ত হচ্ছে, ‘ইয়্যাকানাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাঈন’ এবং এরপর শেষ পর্যন্ত সবটুকুই হচ্ছে আমার বান্দাহর দোয়া। এ পর্যায়ে আমার বান্দাহ যা চেয়েছে, তা-ই তাকে দেয়া হয়েছে।” (জামে তিরমিজী : তফসীরে ফাতেহা; মোসনাদে ইবনে হাম্বল : ২খ: ৪৬০ পৃ:) এই হাদীসে কুদসীর আয়নাতে ইসলামী নামাজের দোয়াসমূহ, যা প্রাণস্পর্শী ও হৃদযগ্রাহী বলে পরিদৃষ্ট হয়, এর দ্বারা অন্তরে দারুণ আকাঙ্খা এবং মনের বনে শান্তিময় আনন্দের উদ্রেক হয়। প্রকৃতপক্ষে ইহা এমন একটি অবস্থা যার পরিতৃপ্তির আকাঙ্খা একজন খৃস্টান বিদ্দ¦জন এ, জি, উইন ছিঙ্ককেও আন্দোলিত করে তুলেছিল। যিনি ‘ইনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলাম’ গ্রন্থে ইসলামী নামাজ সম্পর্কে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন। যা খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি লিখেছেন (ইসলামের দৃষ্টিতে) নামাজ ‘হুযুরে কলবের’ সাথে আদায় হওয়া চাই। একবার রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি রঙ্গিন নকশাযুক্ত কাপড়কে এজন্য খুলে দিয়েছিলেন যে, এর দ্বারা নামাজের মনোনিবেশে ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়। বস্তুুত : নামাজ শুধু বাহ্যিক পদ্ধতি ও রীতি আদায় করার নামই নয়, বরং এর মাঝে আত্মিক বিনয় থাকাও দরকার। এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়- যেখানে মোহাম্মদ (সা:) বলেছেন, আমার কাছে তোমাদের দুনিয়ার দুটি জিনিস পছন্দনীয়। একটি হচ্ছে খোশবু এবং অপরটি হলো নারী। এবং আমার চোখের শান্তি হচ্ছে নামাজ। কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মাঝে নামাজ আদায়ের সময় ভীষণভাবে কান্নার বান ডাকত। নামাজের দু’টি বিশেষত্ব হচ্ছে এই, যা আমরা দুটি হাদীসের আলোকে উপলব্ধি করতে পারি। এতে বলা হয়েছে যে, নামাজ হলো আল্লাহর সাথে সংগোপনে পরামর্শ করা ও কথা বলা। এবং এরই বিশ্লেষণ আমরা এই হাদীসে কুদসীতে পাই : “সুরায়ে ফাতেহা আমার মাঝে এবং আমার বান্দাহর মাঝে বিভক্ত হয়ে আছে।”
দোয়ায়ে মোহাম্মদী (সা:) ও অন্যান্য আম্বিয়াদের দোয়ার তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য:
দুনিয়ার বুকে এমন কোন পয়গাম্বর আসেননি, যাকে নামাজের হুকুম দেয়া হয়নি। এমনকি নামাজ আদায়ের জন্য তাদেরকে দোয়া-কালামও শিক্ষা দেয়া হয়েছিল। তুর পর্বতে আল্লাহর জ্যোতি বিকাশের সময় হযরত মূসা (আ:) নামাজের হালতে যে দোয়া পাঠ করেছিলেন তা’ বর্তমান প্রচলিত তৌরাতের নির্গমন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত আছে। তাছাড়া যাবুর কিতাব আগা-গোড়া দোয়ারই সমাহার। কিন্তুু এর নির্দিষ্ট দোয়ার উপর এই শিরোনাম দেখতে পাওয়া যায় ‘দাউদের নামাজ’। ইঞ্জিলে আছে, হযরত ঈসা (আ:) রাতের অধিবেশনে হাওয়ারীদের একটি নির্দিষ্ট দোয়া তালীম দিতেন। যা আজও খৃস্টানদের নামাজের মূল অংশরূপে বিবেচিত। এ সকল দোয়াকে সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পাক জবাবে অহীর মূর্ত প্রকাশ সমৃদ্ধ দোয়াসমূহের আকর্ষণী অবস্থা সুন্দর বাচন-বিন্যাস, পরিপূর্ণতা, স্বচ্ছতা ও সংক্ষিপ্ততাকে জরীপ করলে দেখা যাবে এগুলোর সাথে অন্যান্য আম্বিয়াদের দোয়ার কোন ‘তুলনাই চলে না। এ কারণেই নামাজসমূহে এগুলো পাঠ করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। আর এ জন্যই রাসূলূল্লাহ (সা:) এ সম্পর্কে সাহাবী হযরত উবাই (রা:)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, “তোমরা নামাজে যে সূরা পাঠ কর, অর্থাৎ সূরা ফাতিহা বা উম্মুল কুরআন শপথ ঐ পবিত্র সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ নিহিত আছে, এই সূরাটি না তৌরাতে অবতীর্ণ হয়েছে, না ইঞ্জিলে এবং না যাবুরে। এমনকি এর সমতুল্য অন্য কোন সূরা কুরআনুল কারীমেও নেই।” (জামে তিরমিজী : ফাযায়েলে সূরা ফাতেহা)। এই হাদীসের যথার্থতা ও সত্যতা একীনসহ খোদ এ সকল দোয়াসমূহের প্রতি নজর করলেই অনুধাবন করা যাবে।
হযরত মূসা (আ:)-এর নামাজের দোয়া
তৌরাতের নির্গমন অধ্যায়ে আছে যে, হযরত মূসা (আ:) তৌরাত গ্রস্থ গ্রহণ করার জন্য এবং ঐশী তাজাল্লীর একটি ঝলক দেখার জন্য তুর পর্বতে আরোহণ করলেন। তাজাল্লণী দর্শন করেই তিনি তৎক্ষণাৎ আল্লাহর নাম স্মরণ করে সেজদায় পতিত হলেন। তখন আল্লাহপাক তাকে এই দোয়া শিক্ষা দিলেন, হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! রাহীম, রহমান! বিপদের আশ্রয়স্থল, ¯েœহ ও করুণা বর্ষণকারী মহা মহীম! হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য অনুকম্পা বর্ষণকারী অপরাধ, ত্রæটি ও বিচ্যুতি ক্ষমাকারী, কিন্তু তিনি সর্বাবস্থায় ক্ষমা করবেন না! বরং পিতৃ পুরুষের অপরাধের বদলা সন্তান-সন্ততি হতে এবং সন্তান-সন্ততির গোনাহের বদলা তাদের সন্তান-সন্ততি হতে, চতুর্থ পোশত পর্যন্ত গ্রণ করবেন। (৪৪-৬) এই দোয়অটির প্রাথমিক বাক্যাবলী যদিও প্রাণস্পর্শী কিন্তু সমাপ্তি ঘটেছে খুবই নিরাশার মাঝে। প্রথম দিকে দান ও অনুকম্পার প্রত্যাশী করে শেষ পর্যন্ত দোয়া কবুলের পথকে তালাবদ্ধ করা হয়েছে।
হযরত দাউদ (আ:)-এর নামাজের দোয়া
যাবুর কিতাবে ৮৬ অধ্যায়ের শিরোনাম হচ্ছে, “দাউদ (আ:)-এর নামাজ”। এতে বলা হয়েছে, “হে আল্লাহ! আমার প্রতি শ্রবণেন্দ্রিয় অবনত করুন, আমার প্রার্থনা শ্রবণ করুন, আমি পেরেশান ও মিসকিন, আমার জানের হেফাজত করুন, আমি প্রকৃতই অনুগত, দীনদার, হে আমার আল্লাহ! আমার প্রতি রহম করুন, আমি সারাদিন তোমারই সামনে রোনাজারী করছি। স্বীয় বান্দাহর প্রত্যাশা পূরণ করুন। হে আল্লাহ! আমি স্বীয় অন্তরকে তোমারই দেিক নিবেদিত রেখেছি, কেননা হে আল্লাহ! তুমি বড় উত্তম ও মহৎ এবং ক্ষমাশীল। এবং তোমার রহমত তাদের প্রতি অবারিত, যারা তোমাকে ডাকে।
হে আল্লাহ! আমার প্রার্থনা কবুল করুন। আমার মুনাজাতের শব্দের প্রতি কান দিন। আমি নিষ্কৃতির দিন অবশ্যই তোমাকে ডাকব। কেননা আমার প্রার্থনা শ্রবণ করবে। তোমার মত কোনই উপাস্য নাই, এবং তোমার গুণাবলী কোথাও নাই। হে আল্লাহ! তোমারই সৃষ্ট আমার বংশের লোকেরা তোমারই সকাশে আগমন করবে, সেজদায় নিপতিত হবে, তোমার নামের মহিমা প্রচার করবে, তুমিই মহীয়ান, তুমিই অতি প্রাকৃতিক কর্মকাÐের নির্বাহকারী, তুমিই একমাত্র প্রভু। হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথ দেখাও, আমি তোমার সত্য পথেই চলব, আমার অন্তরকে একাকীত্ব করে দাও, আমি তোমারই নাম স্মরণ করে ভীত হব। হে আল্লাহ! স্বীয় অন্তর দিয়ে তোমারই প্রশংসা করব। এবং শেষ পর্যন্ত তোমার নামের মাহাত্ম্য বর্ণনা করব। তোমার রহমত আমার উপর অজ¯্র ধারায় বর্ষিত হচ্ছে। তুমিই আমার প্রাণকে নি¤œতম পর্যায় হতে রক্ষা করেছ।
হে আল্লাহ! অহঙ্কারীরা আমার উপর চড়াও হয়েছে। একটি বৃহৎ জনদল আমার বিরুদ্ধে লেগে আছে। তারা আমাকে তাদের নজরে রাখে নাই। কিন্তুু হে আল্লাহ! রাহীম ও কারীম, ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তোমার দয়া ও করুণাই আমাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। তুমি আমার প্রতি শুভদৃষ্টি নিক্ষেপ কর। আমার উপর রহম কর, স্বীয় বান্দাহকে শক্তিদান কর, স্বীয় দাসীর পুত্রকে করুণা ভিক্ষা দাও, নিষ্কৃতি দান কর, আমাকে উত্তম পথের দিশা দান কর, যেন আমার বিরুদ্ধবাদীরা তা’ প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং লজ্জাভিভূত হয়ে পড়ে। কেননা হে আল্লাহ! তুমিই আমাকে শান্তি দিয়েছ, সাহায্য করেছ।
এই দোয়ার মাঝেও আল্লাহর হামদ ও সিফাত, তাওহীদ ও ইবাদতের উল্লেখ আছে। সত্য পথের প্রত্যাশা, হেদায়েতের আকাঙ্খা এবং দুষ্টমতি ও গোমরাহদের থেকে পরিত্রাণ লাভের দরখাস্ত পেশ করা হয়েছে। কিন্তুু দীর্ঘভাবে বারবার ব্যক্তিত্ব বিকাশের রং প্রতিফলিত হওয়াতে এটি সার্বজনীন দোয়ার আওতাভুক্ত হতে পারে না। এমনকি এই দীর্ঘ দোয়া নামাজে পাঠ করার সুপারিশও এর মাঝে ব্যক্ত হয়নি।
ইঞ্জিলে বর্ণিত নামাজের দোয়া :
হযরত ঈসা (আ:) হাওয়ারীদেরকে দোয়া এবং নামাজের আদব শিক্ষা দেয়ার প্রাক্কালে এই দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছিলেন। “হে আমার পিতা! যিনি আকাশে আছেন, তোমার নাম পবিত্র, তোমার বাদশাহী বিস্তৃত, তোমার ইচ্ছা যমীন ও আসমানে তোমারই মর্জি মোতাবেক পরিপূর্ণ হোক, আমাদের দৈনিক রুজী-রুটি আজই আমাদেরকে দান করুন। আমাদের ঋণ ক্ষমা করুন, যেভাবে আমরা অন্যদের ঋণ ক্ষমা করে থাকি। আমাদেরকে পরীক্ষায় নিপতিত করো না; বরং অমঙ্গল হতে বাঁচিয়ে রাখ, কেননা বাদশাহী, কুদরত ও জালাল সর্বদা কেবল তোমরাই, আমীন।”
মূলত নামের পবিত্রতা বর্ণনাই হচ্ছে আল্লাহর হামদ। বিস্তৃত বাদশাহী আগমনের অর্থ হচ্ছে কিয়ামত অথবা কাজের পরিণাম দিন। যা কুরআনে দোয়া ‘মালিকি ইয়াউমিদ্দীন’ শব্দ দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তদুপরি দৈনিক ‘রুটি-রুজী’ বলতে পরোক্ষভাবে দুনিয়াবী রুটি-রুজী বুঝায় না, বরং এর অর্থ হচ্ছে রূহের খাদ্য অথবা সিরাতে মোস্তাকীম। আর কর্জ ও ঋণ-এর মর্ম হচ্ছে দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ। যা আল্লাহর তরফ হতে বান্দাহদের উপর আরোপিত আছে। পরীক্ষায় নিপতিত না হওয়া, এবং অমঙ্গল হতে বেঁচে থাকার অর্থ হচ্ছে এই যে, যা ইসলামী দোয়ার শেষাংশে উক্ত হয়েছে। “না তাদের পথ যাদের উপর তোমার অভিশাপ পতিত এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” এই বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, উপরোক্ত চারটি দোয়া যা চারজন মর্যাদাশীল পয়গাম্বরের জবান হতে ব্যক্ত হয়েছে; কোনও প্রকার আভ্যন্তরীণ সম্পৃক্ততার কারণে এগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত যা দ্বীনের পরিপূর্ণতার বিভিন্ন পর্যায়ে পরিলক্ষতি হয়। দোয়ায়ে মোহাম্মদী (সা:) সার্বিক পরিপূর্ণতার দর্পণস্বরূপ। এই দোয়া যদিও সংক্ষিপ্ত কিন্তুু তার প্রভাবও প্রতিক্রিয়া সুদূর প্রসার।ি আহকামে শরীয়তের পূণর্খতার প্রতীক। এর শব্দাবরী এমন বিশ্ব পরিব্যাপ্তকারী যা প্রত্যেক সময়, প্রত্যেক অবস্থায় প্রতিটি মানুষের অন্তরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। তা’ এমন সব উদাহরণ হতে মুক্ত যা বাহ্যিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্নদের পদস্খলনের কারণ হতে পারে। এমন কি মানুষের প্রতি আল্লাহর রহম ও করম গুণের ঋণ গ্রহণ করার অনুপ্রেরণা দান করে। যার মাঝে সৃষ্টিকূলের প্রতিটি বালূকণা পর্যন্ত দাখিল রয়েছে।
আল্লাহর সেই তিনটি গুণ, যার ধারণালব্ধ জ্ঞান ছাড়া আল্লাহর প্রতি ধারণা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না (অর্থাৎ প্রতিপালন, রহমত এবং আধিপত্য)। মোটকথা সূরা ফাতিহা এসবগুলোর সমাহার। রাবুবিয়াত ও প্রতিপালনের মাঝে ঐ সকল গুণাবলী সম্পৃক্ত আছে, যেগুলোর সম্পর্ক জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মাখরুকের সাথে কায়েম থাকে। রহমত তাঁর সেই সর্বব্যাপী গুণ যার মাঝে তাঁর যাবতীয় জামালী গুণাবলীর বৈচিত্র্য বিকশিত হয়ে উঠে। আধিপত্য তাঁর সকল জালালী গুণাবলীর প্রচ্ছন্ন রূপ। সুতরাং সূরা ফাতিহা এই তিন প্রকার উদ্দেশ্যাবলীর সমাহার। অর্থাৎ হামদ, মঙ্গল কাজের জন্য নিবেদন এবং অমঙ্গল হতে নাজাত লাভের উপকরণ এতে আছে। বর্ণনা বিন্যাসের পারিপাট্যতা আল্লাহ ও তাঁর বান্দাহদের উত্তম গুণাবলীর বিকাশ। এই দোয়াতে তাও আছে। এর নিবেদনগুলো খুবই শিষ্টাচারপূর্ণ। একটি দোয়ার মাঝে আল্লাহর গুণাবলী তুলে ধরার কৌশল সূরা ফাতিহায় আছে এবং তা সাধারণ দোয়ার অন্তর্ভুক্ত। এই সূরায় দোযার মর্মকথা শুধু কেবল ব্যক্তিসত্তার সাথেই সম্পৃক্ত নয়, বরং আল্লাহর প্রতি আত্মনিবেদন এবং আত্মিক একাগ্রতার পরিপুর্ণতা ও শীর্ষতম পর্যায় এই দোয়ার মাঝে বিধৃত আছে। এ কারণেই এই দোয়ার মাঝে জাগতিক বস্তুুনিচয়ের উল্লেখ এতে করা হয়ীন। আল্লাহর গুণাবরী এবং বান্দাহর কামনা-বাসনার প্রকৃতি ও পরিমাণ উভয় দিকের যথার্থ প্রতিফলন এতে রয়েছে। অর্থাৎ উভয় অংশের সুসামঞ্জসরূপে স্থান দেয়া হয়েছে। অথচ এই দুটি অংশের বিষয়াবলীর মাঝে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা হয়েছে। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও জালাল, রহম ও করম, কুদরত ও শওকত, ¯েœহ ও অনুকম্পা এবং বান্দাহর আনুগত্য ও দীনতা, উচ্চাশা, সত্য প্রত্যাশার এমন এক পরিপূর্ণ সমাহার, যা সংক্ষিপ্ত এবং প্রাণস্পর্শী বর্ণনাসমৃদ্ধ সূরা ফাতিহা ছাড়া আর কোথায় যাওয়া যাবে? (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন