সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মি’রাজের রহস্যময় দৃশ্যাবলি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

আমরা ‘সিদরাতুল মুনতাহা সমাচার’ নিবন্ধে কুল বা প্রান্তবতী বরইগাছের অবস্থান ও বিবরণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়েছি। কিন্তু ‘মুনতাহা’ বা শেষ প্রান্ত কি, তার স্বরূপ উন্মোচন করা হয়নি। তাফসিরে তাবারীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘সিদরাতুল’ হচ্ছে বরই বৃক্ষ এবং ‘মুনতাহা’ হচ্ছে তার অবস্থানস্থল। অর্থাৎ মানবিক বুদ্ধি ও অনুভ‚তির শেষ প্রান্তের নাম ‘মুনতাহা’। সেখানে বিপুলায়তনের এই গাছটি অবস্থিত। এখানেই মি’রাজের তৃতীয় পর্ব ফুলে-ফলে, রস-গন্ধে ও রূপ ঐশ্বর্যে প্রাণবন্তরূপে সুশোভিত হয়ে উঠেছিল। এ পর্যায়ে মনের গহিন কোণে স্বভাবতই প্রশ্নের উদয় হয়ে যে, তবে কি মানবিক বুদ্ধি ও উপলব্ধির শেষ প্রান্তের বৃক্ষটি শুধুমাত্র আল্লাহপাক ও রাসূলুল্লাহ সা.- এর মর্যাদা ও গুণাবলির বহুরূপীত্বের বিকাশস্থল হয়ে উঠেছিল?

তবে কি সেখানে পৌঁছলে স্থান-কাল এবং সম্ভাব্য ও অসম্ভাব্য এমনকি অবশ্যম্ভাবীর গিঁট বা গিড়া খুলে যায়? তবে কি চোখের পাশাপাশি অন্তরও দেখে? রাসূলুল্লাহ সা. সিদরাতুল মুনতাহায় চর্মচক্ষে ও অন্তরচক্ষে কি দেখেছিলেন? তার চোখের দৃষ্টিতে কি নজরে পড়েছিল? তবে কি সিদরাতুল মুনতাহাকে প্রকৃতই আল্লাহর গুণাবলি ও মর্যাদার সীমাহীন বহুরূপীত্ব আচ্ছাদিত করে রেখেছিল?
রাসূলুল্লাহ সা.-কে এই রাতের ভ্রমণে আয়াতে রাব্বানী বা আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শনাবলি প্রত্যক্ষ করানো হয়েছিল কি? কিন্তু তার এই মোশাহাদা কি আত্মিক ছিল, নাকি চাক্ষুস ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর বা রহস্যাবলি অজানার চাদরে আচ্ছাদিত রয়েছে। মূলত তা আচ্ছাদিত ও প্রচ্ছন্ন থাকারই কথা বটে।
জনৈক ফার্সি কবি কত সুন্দরই না বলেছেন, ‘চুঁ না বাশাদ এশক রা পরওয়ারে উ-উ চুঁ মোরগে মানাদ বে পরওয়ায়ে উ’। অর্থাৎ, যার রূহানী মহব্বতের তেজী ঘোড়া আল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হয়নি, সে বা তার সমগোত্রীয়রা অনেক হীন মোরগের মতো ছটফট করতেই থাকবে। এর কোনো বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই।
মোটকথা, আল কোরআনের সূরা আসরা বা বনী ইসরাঈলের শুরুতে আল্লাহপাক মি’রাজের রূহানী দৃশ্যাবলিকে শুধুমাত্র তিনটি শব্দের দ্বারা বিশ্লেষণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘লিনুরিয়াহু মিন আয়াতীনা’। অর্থাৎ, প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ সা.-কে আমার নিদর্শনাবলি দেখাবার জন্য। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১)।
তবে স্বভাবতই মনের দিগন্তে প্রশ্নের উদয় হয়, এ নিদর্শনাবলি কি ছিল? এই নিদর্শনাবলির শ্রেণী বিন্যাসের জন্য স্বল্পায়ু ও দুর্বল মানুষের মাঝে কোথাও ভাষার ব্যঞ্জনা আছে কি? উত্তরে বলা যায়, হ্যাঁ, আছে। তবে তা অপূর্ণ। কেননা, আমাদের বুঝ আমাদের জ্ঞান, আমাদের খেয়াল, আমাদের ধারণা, মোট কথা যা কিছু আমাদের কাছে রয়েছে, এর পরিমÐল আমাদের ইন্দ্রিয়ানুভ‚তি ও আমাদের পারিপার্শ্বিকতার বাইরে নয়। আমাদের অভিধানের ভাÐারে শুধু এগুলোর জন্যই বেশ কিছু শব্দাবলি আছে।
এ কারণে সে মর্ম ও বিশেষত্বসমূহ সাধারণ মানবিক অনুভ‚তির অন্তর্ভুক্ত নয়, এবং যা বুদ্ধিমত্তা ও চিন্তা-চেতনার ভেতরেও নয়, সে সকল শব্দাবলির গূঢ় রহস্য মানুষের মন ও চিন্তার সাথে কেমন করে সম্পৃক্ত হতে পারে? আর যদি আল্লাহপাক স্বীয় কামালে কুদরতের দ্বারা এগুলোকে ভাষা, বর্ণ ও শব্দের জামা পরিয়েও দেন, তবুও মানুষের স্মৃতি তা বোঝার ও ধারণ করার শক্তি কোথায় পাবে? আল কোরআন ঘোষণা করছে, ‘আর তোমাদের সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ৮৫)।
বস্তুত গভীর মনোনিবেশসহ কুরআন অধ্যয়ন করলে জানা যায় যে, সূরা ‘নজমে’ রহস্যের আবরণ কিছুটা হলেও সরানো হয়েছে। সেখানকার শ্রেণীবিন্যাস ও সর্বাংশে সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিতবহ ও এজমালি। এমনকি এমন ধরনের বিশ্লেষণ যা পুরোপুরিই প্রচ্ছন্ন, রহস্যাবৃত। শুধুমাত্র দু’টি শব্দের ব্যবহার হয়েছে। অথচ এগুলোর সর্বনামগুলো উহ্য। সেখানে কর্তার উল্লেখ আছে, কিন্তু কর্মের উল্লেখ নেই। আবার কর্মের উল্লেখ থাকলেও কর্তার উল্লেখ নেই এবং এতদ সম্পর্কিত ক্রিয়াগুলোরও বিশ্লেষণ নেই। আর সর্বনামগুলোর উৎসের কথাও সুনির্দিষ্ট নেই। তবে, কেন? কেন এতসব আয়োজন? এতসব প্রচ্ছন্নতার লীলাখেলা?
এর উত্তরে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, এই স্থানের (আল মুনতাহা’র) চাহিদাই হলো এই যে, ‘স্বল্পজ্ঞানীদের কাছ থেকে ভাষার ব্যঞ্জনা প্রকাশ পায় না।’ আল্লাহপাক সর্বজ্ঞানী। এজন্য তার জবানেই ঘোষিত হয়েছে, ‘শপথ নক্ষত্রের যখন তা অস্তমিত হয়। সাক্ষী বিভ্রান্ত ও বিপথগামী নয় এবং সে মনগড়া কথা বলে না, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়, সে তো অহী। তাকে শক্তিশালী প্রজ্ঞাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব শিক্ষা দান করেন। সে নিজ আকৃতিতে স্থির হয়েছিল। তখন সে ঊর্ধ্ব দিগন্তে। তারপর সে তার নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মাঝে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল, কিংবা তারও কম।
তখন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার ছিল, তা প্রত্যাদেশ করলেন। যা সে দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তাঁর সাথে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই সে তাঁকে আরেকবার দেখেছিল। প্রান্তবতী বরই গাছের নিকট। যার নিকট আচ্ছাদিত বাসোদ্যান। যখন বৃক্ষটি যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। তার দৃষ্টি বিভ্রম ও লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনাবলি দেখেছিল।’ সূরা নজম : রুকু ১

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০৭ এএম says : 1
মুসলিম উম্মাহের জন্য রাসূল (সা.)-এর মে’রাজ অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূণ।
Total Reply(0)
সেলিম উদ্দিন ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০৮ এএম says : 1
নবী করিম (সা.)-এর ঊর্ধ্বজগতের মো’জেয়া সমূহের মধ্যে মি’রাজ গমন একটি বিস্ময়কর মো’জেযা।
Total Reply(0)
বেলী আফরোজ ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:০৯ এএম says : 1
আমরা মুসলমান। আল্লাহর কুদরত ও প্রদত্ত ক্ষমতার উপর আমাদের ঈমান নির্ভরশীল।
Total Reply(0)
নাফিজ খান রেজা ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১০ এএম says : 1
ধারাবাহিকভাবে মিরাজ নিয়ে লেখায় হুজুরকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
রবিউল ইসলাম ৫ এপ্রিল, ২০১৯, ৪:১১ এএম says : 1
সমস্ত নবীগণ যে সশরীরে জীবিত, তারই বাস্তব প্রমাণ মিলেছিল মি’রাজের রাত্রে। সমস্ত নবীগণ আপন আপন রওযায় জীবিত আছেন (হাদীস)।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন