দিনাজপুরের বিরলে চাঞ্চল্যকর তাওহিদ আঁখি মনি গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ৪ দিনের মাথায় পুলিশ মামলা রুজু করে মামলার এজাহার নামীয় আসামী সদর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম মতিকে আটক করেছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে থানার অফিসার ইনচার্জ এ টি এম গোলাম রুসুল এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স তাকে নিজ বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে শুক্রবার জেল হাজতে প্রেরণ করে। আটককৃত খুরশিদ আলম মতি বিরল সদর ইউপি’র মাধবাবাটি গ্রামের ইউনুস আলীর পুত্র। এদিকে শনিবার বিকালে লোম হর্ষক চাঞ্চল্যকর তাওহিদ আঁখি মনি গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, দিনাজপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ আবু সায়েমের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ ব্যুরো ইনভিস্টেকেশন (পিবিআই)এর একটি দল। অপরদিকে মামলার বাদী আঁখি মনির পিতা আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, মামলার আসামীপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে অনবরত বিভিন্ন ভাবে হুমকিসহ চাঞ্চল্যকর আঁখি মনি গণধর্ষণ ও হত্যা কাণ্ডের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে।
জেলার পার্বতীপুর উপজেলার রঘুনাথপুর (নয়াপাড়া) গ্রামের তাওহিদ আঁখি মনি’র পিতা আসাদুজ্জামান এর দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ শুক্রবার রাত ১২ টার দিকে ভিকটিম তাওহিদ আঁখি মনি বাড়ীতে একা থাকার সুযোগে মাধববাটি একই গ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মৃত মহসীন আলীর পুত্র বিরল সদর ইউপি’র নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মারুফ হোসেনের ছোট ভাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক তোজাম্মেল হোসেন তোজা (২৫) একই গ্রামের মোঃ ইউনুস আলীর পুত্র তাঁর আপন ফুফাতো ভাই ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোঃ খুরশিদ আলম মতি (৩৫)সহ অপর আসামী সোহাগ (২৭) ও মৃতঃ আব্দুল ওহাবের পুত্র মিজানুর রহমান (৩৪) তাওহিদ আঁখি মনি’র বাড়ীতে এসে দরজার কড়া নাড়লে ভিকটিম আঁখি মনি’র নানী মোছাঃ মারুফা বেগম এসেছে মনে করে দরজা খুলে দেখে তাঁর নানী নয় অসৎ উদ্দেশ্যে আসামীগণ একত্রিত হয়ে এসেছে। আসামীগণকে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা মাত্রই আঁখি মনি’র মুখ চেপে ধরে ও অপরাপর আসামীগণের সহযোগিতায় ভিকটিমকে বাড়ীর ঘরের ভিতরে নিয়ে যায় এবং তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এভাবে একের পর এক ৪ জন আসামী পর্যায়ক্রমে ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করলে প্রতিবেশি স্বাক্ষীগণ এসে আসামীগণ ও ভিকটিমকে একই ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। সংবাদ পেয়ে ধর্ষক তোজার ভাই ৫নং বিরল ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ইউপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মারুফ হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর সঙ্গীয় লোকজনকে বলে তাঁর ভাইকে তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করে ভিকটিমকে মেরে শেষ করে দাও। হুকুম পেয়ে তাঁর সঙ্গীয় লোকজন মারমুখী হয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে ভিকটিম আঁখি মনিকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে ভিকটিমের মুখে কীটনাশক প্রয়োগ করে ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে জেনে আসামীগণকে নিয়ে চলে যায়। পরে ভিকটিমের মামা ও নানীসহ স্বাক্ষীগণের সহযোগিতায় স্থানীয় ভ্যানযোগে বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাত আনুমানিক ৩.০০ টার দিকে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আঁখি মনি’র জখমী পরীক্ষা করে ভর্তি করেন। ভিকটিম আঁখি মনি চিকিৎসাধীন থাকাকালীন গত রবিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৪ টায় মৃত্যুবরণ করে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বিরলে ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্ট থানা পুলিশ প্রস্তুতপূর্বক পরবর্তীতে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দিনাজপুর মর্গে ময়না তদন্ত শেষে লাশ নিহতর পিতার নিকট হস্তান্তর করলে রবিবার রাতেই পিত্রালয়ে আঁখি মনি’র দাফন সম্পন্ন হয়।
পরের দিন ৮ এপ্রিল সোমবার আঁখি মনির পিতা আসাদুজ্জামান থানায় এজাহার দায়ের করলেও পুলিশ ১১ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার বিকালে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে এজাহার নামীয় ৫জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় ৭ নং মামলা রুজু করে। বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ এ টি এম গোলাম রসুল এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স মাধববাটি এলাকায় ঐ রাতে অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার নামীয় অন্যতম আসামী ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম মতিকে আটক করে পর দিন জেল হাজতে প্রেরণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন