শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ
রমজান এলে আমাদের বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া একটা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায়। অন্যদিকে লাভবান হয় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। পণ্য মজুদ করে এবং কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে তারা সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা নিয়ে নেয়। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছরই রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হয়।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, এবারেও বাজার থাকবে অসাধু কিছু ব্যবসায়ীর কব্জায়। জানা গেছে চিনি, ছোলা, তেল, খেজুর, ডালসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বড় মজুদই সুনির্দিষ্ট ঐ ব্যবসায়ীদের হাতে। অন্যান্য বছরের মত এবারও তাদের দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। জানা গেছে, এরই মধ্যে দেশের অনেক অঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনি, ছোলা, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। একবারে দাম না বাড়িয়ে রমজানের আগে ধাপে ধাপে দাম বাড়ানো হবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজারে পণ্য সরবরাহ কম বলে অজুহাত দেখানো হচ্ছে। অথচ গুদামগুলো পণ্যে ঠাঁসা বলে গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে।
এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে, বরাবরের মত এবারও সংযম ও ত্যাগের মাস রমজানে তাদের জন্য দুঃসহ যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। রমজান মাসে অসৎ ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজরা প্রতি বছরই তৎপর হয়ে ওঠে। এ বিষয়টি মনে রেখে বৃদ্ধি ঠেকাতে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে সরকার। রমজানে ব্যবসায়ীদের একাংশের তাদের লুটেরা মনোভাবের কারণে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম।
রোজার মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রতিটি সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এ সময়ে বেশকিছু নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পূর্ব প্রস্তুতি এবার দৃশ্যত বেশ ভালো। ছোলা, চিনি, তেল, খেজুর, ডালসহ যেসব পণ্যের ব্যবহার রোজায় বেড়ে যায় তা চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি করা হয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীদের মুনাফাখোরি মনোভাব এবং পরিবহন চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য কারণে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
এই পবিত্র মাসে রোজাদাররা ভোগান্তির সম্মুখীন হলে তাদের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পায়। সে কারণে রোজাদারদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে যারা ব্যবসা করার চক্রান্ত করছে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। বাজার মনিটরিংয়ে হতে হবে আরও বেশি সক্রিয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, ছোলা, চিনি, ডাল, খেজুর ও ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট যাতে দানা বেঁধে না ওঠে সে ব্যাপারে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে রোজা উপলক্ষে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। মাহে রমজানে চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে সরবরাহ সচল রাখা সরকারের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন চাঁদাবাজি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, এ কর্তব্য পালনে সরকার তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে।
সাধারণ মানুষকে এমন হয়রানি থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। বাজারে মনিটরিং বাড়ানো, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান, অনিয়ম প্রমাণিত হলে বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, নিত্যপণ্যের সরকারি মজুদ বাড়িয়ে তা ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করা, মনিটরিং ব্যবস্থাপনায় কোনো অবহেলা বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, এক বাক্যে বলতে গেলে কঠোর বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সরকারের মনিটরিং কমিটির মধ্যে আন্তরিকতা, দক্ষতা ও সততা থাকলে অবশ্যই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অবশ্য আমাদের দেশে এমন একটি রমজানও নিকট অতীতে দেখা যায়নি। এবার কি সরকার পারবে তাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে? জনগণের প্রতি দায়বোধ থেকে তারা সেটা করবে তা আমাদের প্রত্যাশা থাকলো।
লেখক: এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন