বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামী নৈতিকতার ভিত্তি

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

এই পৃথিবীর সকল প্রকার কাজ বা অনুষ্ঠানের যেমন ভিত্তি আছে, তেমনি নৈতিক চরিত্রেরও ভিত্তি আছে। আর এই ভিত্তি হচ্ছে গোনাহ বা পাপের কাজ পরিহার করা, তাকওয়ামূলক জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করা।
আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘তোমাদের যা নির্দেশ করা হয়েছে তার মধ্যে যা গুরুতর পাপ তা হতে বিরত থাকলে, তোমাদের লঘুতর পাপগুলো মোচন করে দেবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে দাখিল করব।’ (সূরা নিসা : আয়াত ৩১)।
এই আয়াতের আলোকে পাপ ও নিষিদ্ধ কাজ পরিহার করার বিষয়টি সুস্পষ্ট জানা যায়। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘হে আয়েশা, ছোট ও ক্ষুদ্র গোনাহ হতেও দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, এগুলো সম্পর্কেও আল্লাহপাকের দরবারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ)।
বস্তুত ছোট এবং বড় উভয় প্রকার পাপকাজ হতে বিরত থাকলে তাকওয়ামূলক অধিষ্ঠান অর্জিত হয় এবং মানুষের নৈতিক জীবন হয় সুন্দর, নির্মল ও পরিশীলিত।
এ প্রসঙ্গে হযরত আতিয়াতাছ ছা’দী রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘বান্দা মুত্তাকি লোকদের মধ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিগণিত হতে পারে না, যতক্ষণ সে কোনো জাহান্নামের কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেসব জিনিস পরিত্যাগ না করবে, যাতে বাহ্যিকভাবে কোনো দোষ নেই।’ (জামে তিরমিজী)।
এই পৃথিবীর ঘূর্ণায়মান চক্রে আবর্তিত মানবজীবন স্বভাবতই চঞ্চল ও গতিশীল। কালের খাতায় এবং জীবনের পাতায় এই চঞ্চলতার রূপ সার্বিকভাবে ফুটে ওঠে। এই চঞ্চলতার ভেতর দিয়ে প্রকৃত মানুষ তাকওয়া ও পরহেজগারিসুলভ জীবনধারার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং পবিত্র জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং এরই রেশ ধরে সাধারণ লোকদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করার প্রবণতা দানা বেঁধে ওঠে এবং মানবতার পরিপূর্ণ আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
এ প্রসঙ্গে হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাধারণ মানুষের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ বর্ষণ করে না, তার প্রতি আল্লাহ তায়ালাও দয়া ও অনুকম্পা বর্ষণ করেন না।’ (সহি বুখারি ও মুসলিম)।
প্রকৃতপক্ষে সকল মানুষের এই অধিকার রয়েছে যে, যেকোনো অবস্থানে বা যেকোনো পরিবেশে দিন গুজরান করা হোক না কেন, সাধারণ দয়া, অনুগ্রহ ও অনুকম্পা সে পাবেই। এটাই মানবতার প্রকৃত অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, সংরক্ষণ করা ও এর লালন করা ইসলামী নৈতিক চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যটি রাসূলুল্লাহ সা.-এর এই বাণীর মাঝে সুস্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে।
হযরত হোজায়ফাহ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা অপরকে দেখে কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ো না এমনভাবে যে, তোমরা বলবে- অপর লোক ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহার করলে আমরাও ভালো কাজ ও ভালো ব্যবহার করব।
আর অপর লোক যদি জুলুম ও নিগ্রহের নীতি গ্রহণ করে তাহলে আমরাও জুলুম করতে শুরু করব। বরং তোমরা নিজেদের অন্তরকে এভাবে সুদৃঢ় ও মজবুত করে লও যে, অপর লোকেরা যদি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে ও ভালো ব্যবহার করে তাহলে তোমরাও তা করবে। আর অপর লোকেরা যদি খারাপ ব্যবহার করে বা জুলুম করে তবুও তোমরা খারাপ কাজ ও জুলুম কখনো করবে না।’ (জামে তিরমিজী)।
এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অপর লোকদের কাজের ওপর মুসলমানদের কাজ নির্ভরশীল নয়। অপর লোকেরা ভালো ও মন্দ যাই করুক না কেন, মুসলমানগণ কখনো খারাপ ও জুলুম করতে পারে না। এই না পারাই ইসলামী নৈতিক চরিত্রের ভিত্তি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মাহমুদুল হাসান রাশদী ৫ মে, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
মানুষ চাইলে তার নিজের ভেতরটাকে নৈতিকতার বিচিত্র গুণে গড়ে তুলতে পারে। নিজের চিন্তা-চেতনা, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসে এমনকি তার আচার আচরণে যদি তার ওই গুণাবলি পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
Total Reply(0)
হাসিবুল ইসলাম ৫ মে, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
নৈতিক গুণাবলি ব্যক্তির ইহকালীন ও পরকালীন সৌভাগ্য নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
Total Reply(0)
জয়নাল হাজারি ৫ মে, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
নৈতিক গুণাবলির গুরুত্ব এতো বেশি যে একজন মানুষ যদি সকল জ্ঞান ও বিজ্ঞান অর্জন করে এমনকি প্রকৃতির সকল শক্তির ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারও করে তাতে কোনো লাভ নেই, যদি না ওই লোক নিজের ভেতরের শক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে না পারলে প্রকৃত উন্নতি ও সৌভাগ্য অর্জন করা থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
Total Reply(0)
নাহিদ রেজা ৫ মে, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
জ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি সকল উন্নয়ন সত্ত্বেও আচরণগত সংস্কার করা না হলে ওই উন্নয়ন হবে সেই আকাশচুম্বী টাওয়ার বা প্রাসাদের মতো যে টাওয়ার গড়ে তোলা হয়েছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিময় পাহাড়ের ওপর। সুতরাং মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণ এককথায় মানুষ সৃষ্টির পরিকল্পনা গ্রহণ প্রত্যেক সমাজের জন্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
Total Reply(0)
স্বদেশ আমার ৫ মে, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
পৃথিবীজুড়ে আজ যে অস্থিরতা, অশান্তি, গোলোযোগ, বিচ্ছৃঙ্ক্ষলা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মারামারি, হানাহানি, অরাজকতা-সবই ওই নৈতিক এবং আত্মিক প্রশিক্ষণহীনতা থেকেই উৎসারিত। বর্তমান বিশ্ব শিল্প ও জ্ঞানের ভুবনে অনেক উন্নয়ন অর্জন করেছে। এগুলোর সাহায্যে তারা মানুষের পার্থিব জগতের বিচিত্র চাহিদা মেটাতেও সক্ষম হয়েছে। কিন্তু মানবীয় নীতিনৈতিকতার দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যাবে এতোকিছুর পরও মানুষ পতনের অতল গহ্বরে পড়ে আছে কিংবা সেদিকেই অগ্রসর হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোনো শান্তি নেই।
Total Reply(0)
বিবেক ৫ মে, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
বলা বাহুল্য যুগে যুগে যত নবী রাসূল এই পৃথিবীতে এসেছেন তাঁদের মৌলিকতম শিক্ষাই ছিল আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ইমান এবং তাঁর ইবাদত করা। আল্লাহ আমাদের দৃঢ় ইমান দিন, দৃঢ় নৈতিক গুণাবলি দান করুন-এই প্রত্যাশায় আজ এ পর্যন্তই।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন