শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

কেয়ামতনামা এবং বিস্ময়কর কাহিনী

প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কে এস সিদ্দিকী : আল্লাহতায়ালা মানব ও জিন সম্প্রদায়কে তাঁর এবাদত বন্দেগীর জন্য সৃষ্টি করেছেন বলে খোদ কোরআনে ঘোষণা করেছেন। জান্নাত-জাহান্নামও তাদের জন্য। মানব ও জিন দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করার সাবধান বাণীও কোরআনে রয়েছে। আল্লাহর সৃষ্টিকূলের মধ্যে অজ¯্র প্রকারের জীব প্রাণী রয়েছে। তাদের হিসাব-কিতাব, বিচার ও জান্নাত-জাহান্নাম এবং সওয়াব আজাব অর্থাৎ জাযা-সাজার ব্যাপারে আল্লাহ কী ব্যবস্থা রেখেছেন তার কিছু কিছু বিবরণ বিভিন্ন হাদিস হতে জানা যায়। যেমন চতুষ্পদ পশুর হাশর হওয়া এবং কোনো পশুর জান্নাতে গমন ইত্যাদি নানা বিস্ময়কর বিষয়ে হাদিস হতে অবগত হওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর সনদ নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে ঘটনার বাস্তবতা কাহিনীরূপে প্রচলিত হয়ে আসছে একথা অনস্বীকার্য।
মানুষের মৃত্যুর পর হতে শেষ বিচারের দিন এবং জান্নাত-জাহান্নাম পর্যন্ত যতগুলো স্তর বা পর্যায় আছে, এ পরকালীন জগতে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানী অংশ, জীব-জানোয়ারের সেসব পরিস্থিতি মানবের ন্যায় মোকাবিলা করার বিবরণ অজানা, তবে বিভিন্ন হাদিসে বিক্ষিপ্ত যা কিছু রয়েছে তাও গবেষণা ও তালাশ-অনুসন্ধানের বিষয়। সেগুলো সনদের দিক থেকে সহিশুদ্ধ কিনা তা যাচাই করার দায়িত্ব মোহাদ্দেসীনে কেরামের। সে ময়দানে পদচারণা না করে আমরা বর্ণিত এবং প্রচলিত কিছু কাহিনীর অবতারণা করতে চাই যা বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের বরাতে উলামায়ে কেরাম উদ্ধৃত করেছেন। এসব অদ্ভুত ঘটনার কয়েকটি আমরা নি¤েœ তুলে ধরতে চাই। শয়তান ইবলিসের মৃত্যুও সেগুলোর একটি।
ইবলিসের মৃত্যু
আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে ইবলিসকে অহংকার ও নাফরমানির জন্য মরদুদ ও অভিশপ্ত ঘোষণার পর সে আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিল, তাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবসর সময় দেওয়ার জন্য। এ সময় সে আল্লাহর বান্দাদেরকে গুমরাহ করবে। আল্লাহ তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় দান করেন কিন্তু এ কথাও তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, তার খাঁটি বান্দাদেরকে সে কস্মিনকালেও এবং কিছুতেই গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট করতে সক্ষম হবে না। কোরআনে বিভিন্ন স্থানে তার বর্ণনা রয়েছে। ইবলিস দুনিয়াতে যত সব অপকর্ম ও পাপাচারে লিপ্ত ছিল, এসব বোঝা নিয়েই জাহান্নামের এ প্রধান যাত্রীকে এক সময় অত্যন্ত জিল্লত ও অপমানের মৃত্যুবরণ করতে হবে।
হযরত মওলানা শাহ রফিউদ্দিন দেহলভী (র.) লিখেছেন, যখন সব মানুষ মৃত্যুবরণ করবে তখন মালাকুল মওত (মৃত্যুর ফেরেশতা) ইবলিসের রূহ কবজ করার জন্য মনোনিবেশ করবেন। এ মালউন (অভিশপ্ত) আত্মরক্ষার জন্য চতুর্দিকে দৌড়াতে থাকবে। ফেরেশতাগণ অগ্নি গুর্জ দিয়ে (লোহার গদা) পিটাতে পিটাতে এখান থেকে সেখানে তাড়াতে থাকবেন এবং তাকে মেরে ফেলবেন। সাকারাতে মওত বা মৃত্যুর যত বিভীষিকা-কষ্ট সমস্ত বনি আদম ভোগ করবে, ইবলিস ওই সমস্ত একাই ভোগ করবে। এ ঘটনা ঘটবে ইসরাফিলের শিঙ্গা ফুৎকারের সময়।
ইবলিস জাহান্নামে নেতৃত্বের আসন লাভ করবে এবং জাহান্নামিদের উদ্দেশে ভাষণ দান করবে। ভাষণে সে জাহান্নামে একত্রিত সব কাফেরের উদ্দেশ্যে নিজের সাফাইস্বরূপ যা বলবে তা এরূপ :
ইবলিস শয়তান জাহান্নামের আগুনের মিম্বরে দাঁড়িয়ে সবাইকে তার দিকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাবে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে যে, শয়তান আমাদের (কাফেরদের) নেতা, কোনো না কোনো কৌশল-প্রতারণায় আমাদেরকে মুক্ত করবেÑ এ আশায় তারা শয়তানের নিকটবর্তী হবে। তখন শয়তান বলবে যে, খোদার সমস্ত আহকাম নির্দেশনাবলী ছিল সঠিক ও যথার্থ। আমি তোমাদের এবং তোমাদের পিতার দুশমন ছিলাম কিন্তু এ কথা মনে রাখতে হবে যে, তোমাদের মধ্যে কাউকেই আমি জোরজবরদস্তি আমার দিকে টেনে আনার চেষ্টা করিনি। তবে মন্দকাজগুলো করার জন্য উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছি এ কথা সত্য। আর তোমরা নির্বুদ্ধিতা ও খামখেয়ালিপনাবশত আমার প্ররোচনাগুলোকে সত্য বলে মনে করে গ্রহণ করেছিলে। সুতরাং এখন তোমরা নিজেদেরকেই তিরস্কার নিন্দা কর, আমাকে নয়। তাছাড়া আমার কাছে তোমাদের কোনো প্রকারের মুক্তি-নাজাতের আশা করা সাজে না। এ নৈরাশ্যজনক ও অপ্রত্যাশিত জবাব শুনে শয়তানের দোসর কাফেররা পরস্পর দোষারোপ ও বাক-বিত-ায় লিপ্ত হবে এবং অনুসারী অনুসৃত সবাই চাইবে নিজের ধ্বংসক্ষতির দায়ভার অন্যের ওপর চাপাতে এবং নিজে দায়মুক্ত হতে, কিন্তু তাদের এ ধারণা হবে অসম্ভব ও নিষ্ফল এবং শাস্তিদানকারী ফেরেশতাগণ তাদের হাঁকিয়ে হাঁকিয়ে স্ব স্ব স্থানে নিয়ে যাবেন, যা তাদের কর্মকা- ও বিশ্বাসগুলোর সাথে সম্পৃক্ত ছিল। অর্থাৎ শয়তান কাফেরদের জন্য প্ররোচক ও উসকানিদাতার ভূমিকার কথা স্বীকার করলেও সে নিজেও ধ্বংস হবে এবং তার অনুসারীদের ডুবিয়ে ছাড়বে।
তিনটি জান্নাতি পশু
বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত খালেদ ইবনে মাদান (র.)-এর একটি বর্ণনা অনুযায়ী, তিনটি পশু জান্নাত লাভ করবে। পশু ত্রয় হলো : হজরত সালেহ (আ.)-এর উটনি, হযরত উজায়র (আ.)-এর গর্ধভ (গাধা) এবং আসহাবে কাহফের কুকুর। পবিত্র কোরআনে হযরত উজায়র (আ.)-এর গাধার কথা উল্লেখ না থাকলেও বাকি দুটি পশুর কথা উল্লেখ আছে। বর্ণনাকারী এ তিন পশুর বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেননি, যার কারণে ওই পশুকুলের মধ্যে উল্লিখিত তিনটি পশু কেবল জান্নাত লাভের সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। হজরত সালেহ (আ.)-এর উটনি হত্যাকারী আদ জাতির ধ্বংস কাহিনী কোরআনের নানা স্থানে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত এ উটনির প্রতি সদাচরণ ও সুবিচারের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু নাফরমান আদ জাতি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে উটনি হত্যার যে অপরাধ করে বসে, তারই শোচনীয় পরিণতি ভোগ করতে হয় এ পাপিষ্ট জাতিকে এবং আল্লাহর কঠিন আজাবের শিকার হয়ে ধ্বংস হয় এগোটা জাতি। আল্লাহ প্রেরিত এ উটনি হত্যার ফলে পশুকুলের মধ্যে আল্লাহর দরবারে এ উটনি যে স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী হয়েছে তা আর কোনো পশুর ভাগ্যে জটেনি। সম্ভবত এ কারণেই উটনি জান্নাত লাভ  করবে।
আসহাবে কাহফের কুকুরের নাম ‘কিতমীর’। অত্যাচারী শাসকের জুলুম-নির্যাতন হতে আত্মরক্ষাকারী একদল মোমেন গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল, কিতমীর তাদের পাহারায় গুহার মুখে নিয়োজিত ছিল এবং তাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবেই ছিল। তার এ ত্যাগ ও আনুগত্যের বিরল দৃষ্টান্ত আল্লাহর নিকট অতিপছন্দ হওয়ায় কিতমীর জান্নাতের অধিকারী হয়েছে। এ ছাড়া কিতমীরের আরো বৈশিষ্ট্যও থাকতে পারে যা তাকে জান্নাতের অধিকারী করেছে।
হজরত উজায়র (আ.) সম্পর্কে জানা যায় যে, তার যে গাধাটি ছিল সে গাধার পীঠে আরোহণ করে তিনি সর্বত্র গমন করে আল্লাহর তওহীদ প্রচার করতেন। এ বৈশিষ্ট্যের কারণে আল্লাহর নিকট গাধাটির মর্যাদা-সম্মান বৃদ্ধি পায় এটা তার জান্নাত লাভের অন্যতম কারণ হতে পারে। কোরআনে এ নবীর নাম উল্লেখ থাকলেও তাঁর গাধা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি।
চাঁদ-সূর্যের মৃত্যু
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, কেয়ামত দিবসে সূর্য ও চাঁদকে বেনূর জ্যোতিবিহীন করা হবে।’ (বোখারি)
হাফেজ ইবনে হাজার এ হাদিসকে আবু বকর বজ্জারের বরাতে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে দানাজ বলেছেন, খালেদ ইবনে আবদুল্লাহ কোশায়রী এর খেলাফত আমলে আমি আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমানের কাছ থেকে এই মসজিদে কূফায় এভাবে শুনেছি যে, হযরত হাসান (রা.) আসেন এবং তাঁর নিকট বসে যান। তখন তিনি হজরত আবু হোরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসটি এভাবে শুনান : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন সূর্য ও চাঁদ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এতে হযরত হাসান (রা.) বললেন, ওদের কী পাপ (অর্থাৎ জাহান্নামে ওরা কী পাপের কারণে প্রবেশ করবে? তখন আবু সালমা বললেন আমি তো হাদিস বর্ণনা করছি এবং তুমি ওদের গুনাহ কী বলছ?
ইমাম বাজ্জার বলেন, আবু হোরায়রা (রা.) হতে কেবল এভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং আবদুল্লাহ ইবনে দানাজ আবু সালমার কাছ থেকে একা ব্যতীত আর কোনো হাদিস বর্ণনা করেননি অর্থাৎ সূর্য ও চাঁদ ওদের কী অপরাধের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে আবু হোরায় (রা.)-এর বর্ণনায় তার উল্লেখ নেই। আল্লাহ রাসূলের (সা.) তা অবশ্যই জানা ছিল, যা হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন :
[রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, ‘সূর্য ও চাঁদ জাহান্নামে ভীত সন্ত্রস্ত ষাঁড়ের ন্যায় হয়ে যাবে।’ কাবুল আহবার হতে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘কেয়ামত দিবসে সূর্য চাঁদকে ভীত ও সন্ত্রস্ত ষাঁড়ের ন্যায় উপস্থিত করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যাতে যেসব লোক ওদের ইবাদত করত এবং সেগুলোকে দেখে যেমন আল্লাহতায়ালা বলেছেন : তোমরা এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদের এবাদত কর (সকল) জাহান্নামের ইন্ধন।
[নেহায়াতুল গরিব নামক গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে যে, আল্লাহতায়ালা যখন সূর্য ও চাঁদকে সেবাহত শব্দের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন। সেবাহত অর্থ-তারকারাজির গতিবিধি এবং ওদের পরিক্রমন্য কল্লু ফিফালাকিন ইয়াসবাহুন (অর্থাৎ ওদের মধ্যে প্রত্যেকটি আসমানে সাঁতাররত অবস্থায় আছে)। অতঃপর যখন খবর দেন যে, ওদের এবং ওদের পূজারিরা জাহান্নামি হবে এবং ওদের পূজারিদের এমনভাবে আজাব (শাস্তি) হবে যে, যে আজাব তাদের ওপর সর্বদা অব্যাহত থাকবে এবং ওরা (সূর্য ও চাঁদ) ভয়ে-আতঙ্কে ভীত ষাঁড়ের ন্যায় হবে, যাদের ভীতি হবে স্থায়ী, কখনো শেষ হবে না। এ ঘটনাটি আবু মূসাও কিছুটা এভাবে বর্ণনা করেছেন।
কেউ কেউ বলেছেন যে, ওদেরকে (সূর্য ও চাঁদ) জাহান্নামে এ কারণেই সমবেত করা হবে যে, দুনিয়াতে আল্লাহ ব্যতীত ওদের পূজা করা হয়েছিল এবং এ আজাব ওদের জন্য প্রযোজ্য হবে না, কেননা ওরা জড় পদার্থের অন্তর্ভুক্ত বরং এটা তো শুধু কাফেরদের অধিক অপমানিত করার জন্য এবং তাদের কান্না ও করুণ অবস্থাকে আরো শোচনীয়ভাবে প্রকাশের জন্য করা হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কাবুল আহবারের উক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, আল্লাহর জাতসত্তা অতি মর্যাদাশীল ও সুমহান যে, তিনি সূর্য ও চাঁদকে আজাব দিতে পারেন না, বরং আল্লাহতায়ালা তো ওদের উভয়কে কেয়ামতের দিন কালো ও নূরবিহীন করে দেবেন। যখন এরা আরশের নিকটবর্তী হবে তখন এরা আল্লাহর নিকট ক্রদনরত অবস্থায় বলবে, হে আমাদের মাবুদ! তুমি জান যে, আমাদের এ আনুগত্য ও ফরমাবরদারী যা তোমার জন্য নিবেদিত ছিল। আমাদের গতির তীব্রতাকেও তোমার জানা আছে, যা দুনিয়াতে তোমার নির্দেশ পালনার্থে ছিল। সুতরাং কাফেরদের পূজার কারণে আমাদেরকে আজাব দিয়ো না। এতে আল্লাহতায়ালা বলবেন, হ্যাঁ, তোমরা সত্য বলেছ, আমার ওপর আমি অবধারিত করেছি যে, আমি সৃষ্টি করব এবং প্রত্যেক (বস্তুকে) তার সাবেকের দিকে (যে বস্তু দ্বারা সৃষ্টি করা হবে সেদিকে ফিরিয়ে দেব) এবং তোমাদের উভয়কেও সেদিকে ফিরিয়ে দেব, যদ্বারা আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তোমাদেরকে আমি আরশের নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছি, তাই তোমরা সেদিকে ফিরে যাও। মোট কথা ওরা যেদিকে প্রত্যাবর্তন করবে এবং আরশের নূরের সাথে মিশে যাবে, এ অর্থই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার বাণীর, যা হচ্ছে ‘তিনি সেই জাতসত্তা যিনি সৃষ্টি করেন এবং পুনরায় তা ফিরিয়ে দেন।’
কেয়ামতের পর চাঁদ ও সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চাঁদ-সূর্যের যারা পূজা-অর্চনা করত, দেবতা গণ্য করত, তাদেরকে কথিত তাদের মা’বুদ দ্বয়ের করুণ পরিণতি প্রত্যক্ষ করানো। আর যারা ওদের পূজা করত তাদের পরিণতি যে আরো কত ভয়াবহ হবে তা সহজে অনুমেয়। এতে আরো বোঝা যায়, শিরক এমন এক মহাপাপ, যার কঠোর শাস্তি আল্লাহতায়ালা মানব দানবের ন্যায় উপাস্যগুলোকে আজাব দিয়ে থাকেন পূজারি উপাসকদের শিক্ষার জন্য। বোখারী, মুসলিম, তিরমিজি, এবং নাসায়ীর বরাতে হযরত আবু সাঈদ খোদরী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যখন জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামিরা জাহান্নামে পৌঁছে যাবে, তখন মওত (মৃত্যু)-কে একটি সাদা মেষ বা দুম্বা আকৃতিতে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে এনে দাঁড় করানো হবে, অতঃপর তা জবাই করা হবে। জান্নাতিদেরকে বলা হবে, এখন তোমাদের আর মৃত্যু হবে না, তোমরা সর্বদা জান্নাতে থাকবে অতঃপর জাহান্নামিদের উদ্দেশে বলা হবে তোমাদের সর্বদা জাহান্নামে থাকতে হবে।
মৃত্যুর দুম্বা জবাই করবেন হযরত ইয়াহিয়া (আ.) ইবনে জাকারিয়া (আ.)। মৃত্যু দুম্বা জবাইয়ের ঘটনাটি ঘটবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপস্থিতিতে। ইয়াহিয়া (আ.)-এর পবিত্র নামে হায়াতে আবাদি বা চিরঞ্জীব হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। কিতাবুল ফেরদাওসের লেখকের মতে, হযরত জিবরাইল (আ.) মৃত্যু দুম্বা জবাই করবেন।
কেয়ামত সংক্রান্ত অজ্ঞাত না দেখা জগতের বিষয়াদির বিস্তারিত বিবরণ বিক্ষিপ্তভাবে কোরআন ও হাদিস হতে জানা যায়। আদম সৃষ্টির জন্য মাটি গ্রহণ এবং বনি আদমের প্রাণ হরণের দায়িত্ব যে ফেরেশতার ওপর ন্যস্ত, তিনি মালাকুল মওত-আজরাইল (আ.)। এ গুরুতর মহাদায়িত্ব তিনি সুচারু রূপে পালন করার পরে এক সময় একটি পশুর আকৃতিতে তারও মৃত্যু ঘটবে। তখন কেবল আল্লাহর জাত-সত্তাই বাকি থাকবে, আর সমস্ত ফানা (লীন) হয়ে যাবে। তবে আর্শ, কুর্সি, লৌহ, কলম, জান্নাত, শিঙ্গা, জাহান্নাম এবং রূহ বা আত্মাসমূহ অবশিষ্ট থাকবে। মতান্তরে এ আট প্রকারের বস্তুও কিছুক্ষণের জন্য অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন