শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ট্রেনে পাথর ছোঁড়া রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

রাজশাহী থেকে ট্রেনে বাবা মার সাথে ঢাকায় ফেরার পথে রেললাইনের পাশ থেকে ছোঁড়া পাথরে মাথায় গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাতরাচ্ছে ৪ বছরের শিশু জিশান। গত রবিবার রাতে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে তারা ঢাকায় ফেরার পথে সিরাজগঞ্জের জামতৈল ও মনসুর আলী স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশ থেকে চলন্ত ট্রেনে ছোঁড়া পাথর বিদ্ধ হয় শিশু জিসানের মাথায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে শিশুটি। মাথায় ১৩টি সেলাই পড়েছে। সোমবার পর্যন্ত শিশুটির জ্ঞান ফিরেনি বলে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। রেললাইনের পাশ থেকে চলন্ত ট্রেনে ছোঁড়া পাথরে প্রতিবছর শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। গত বছর ট্রেনে ছোড়া পাথরের আঘাত দেড়শতাধিক মানুষ আগত এবং একজনের মৃত্যুর তথ্য জানা যায়। ২০১৭ সালে ট্রেনে ছোঁড়া পাথরে আহত হয়েছিল ২ শতাধিক ট্রেনযাত্রী। রেল বিভাগের তথ্যমতে, বিভিন্ন জোনে রেললাইনের পাশ থেকে ছোড়া পাথরে বছরে হাজার বার আক্রান্ত হচ্ছে ট্রেন। এতে শত শত মানুষ হতাহত হওয়া ছাড়াও জানালার কাঁচ ভাঙ্গাসহ রেলের আর্থিক ক্ষতির পরিমান প্রায় ২ কোটি টাকা। এই দাবী রেল বিভাগের। তবে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ক্ষয়ক্ষতি রেলের জানালা মেরামতের আর্থিক হিসাবে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। এ ক্ষতি অপুরনীয়। এ ক্ষত অমোচনীয়।
কোনো সভ্য সমাজে বা সভ্য দেশে ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে এমন হতাহতে ঘটনা ঘটে কিনা আমাদের জানা নেই। কোনো কারণ ছাড়াই খেয়ালের বশে দুষ্ট লোকেরা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে প্রায়শ প্রাণঘাতী- রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। এটি কোনো নতুন উপদ্রব নয়। বছরের পর বছর ধরে এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। কোন কোন জেলার কোন কোন স্থানে ট্রেনে পাথর ছোঁড়া হচ্ছে তা রেল বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের অজানা নয়। তাহলে এমন নিষ্ঠুর-নৃসংশ ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না কেন? জিশানের মত নিস্পাপ শিশুকে কেন এমন নির্মম আক্রমনের শিকার হতে হল। এই প্রশ্ন এখন সব মানবিক মানুষের। লেল আইনে রেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেললাইনের পাশের দুইপাশে ২০ ফুটের মধ্যে ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকে। রেল আইনের ১২৭ নং ধারায় ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ জরিমানার বিধান রয়েছে। পাথরের আঘাতে কারো মৃত্যু হলে দোষী ব্যক্তির মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও এ যাবৎ কারো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অহরহ আক্রমনের শিকার হওয়ার পরও মানুষরূপী হায়েনাদের পাথর ছোঁড়া বন্ধ হয়নি। রেলপথে নিরাপত্তাহীনতা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ক্রমবর্ধমান ঘটনা বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় নাগরিক সংকট হিসেবে গন্য হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া রেলপথের উপর মানুষের নির্ভরতা বেড়ে চলেছে। নিরাপদ যাসবাহন হিসেবে ট্রেন ভ্রমনের প্রতি মানুষের আগ্রহ যখন বাড়ছে, তখন রেল লাইনের পাশ থেকে পাথর ছোঁড়া, যাত্রীবেশধারি ডাকাত- ছিনতাইকারীরা ট্রেনে নির্মম-ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। পাথর ছোঁড়ার ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে রেলের পূর্বাঞ্চলে ৫টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১৫টি জেলার ৬৫টি স্থান চিহ্নিত করেছিল রেল বিভাগ। এই সুত্রে এসব স্থানে রেলে পাথর ছোড়ার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দু’চার জনকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা কোনো অসম্ভব কঠিন কাজ নয়। ট্রেনে ছোড়া পাথরে রক্তাক্ত হয়ে গত কয়েক বছরে প্রীতি দাশ, রেলের পরিদর্শক বায়েজিদ শিকদারসহ বেশকিছু মানুষ মারা গেলেও নিমর্ম হত্যকান্ডের সাথে জড়িতরা শাস্তির বাইরেই রয়ে গেছে। ট্রেনে পাথর ছোড়ার মত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জন সচেতনতা এবং সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে দ্বিমত করার কিছুই নেই। তবে চিহ্নিত স্থানগুলোতে নজরদারী বাড়ানোর পাশাপাশি রেলের আভ্যন্তরীণ দৈন্যদশা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবর্তনশীল সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে রেলের আধুনিকায়ন এখন জরুরী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার আগে রেলওয়ে পরিষেবা বৃদ্ধি, নিরাপদ, যাত্রীবান্ধব, স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন