শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

# মি টুর মতো # মেন টু-ও গুরুত্বপূর্ণ

ই টাইমস | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

১০ মে হরিয়ানার রোহটাকের একটি আদালত পুলিশকে এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি টাকা আদায়ের জন্য কয়েকজন পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।
বিচারক ধর্ষণের দায়ে মহিলা কর্তৃক অভিযুক্ত একজন কাবাডি খেলোয়াড়ের জামিন আবেদন শোনার সময় বলেন, এটা প্রতিষ্ঠিত যে অভিযোগকারিণী একজন ব্ল্যাকমেলার। ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনে টাকা আদায় করেন। তারপর মামলা তুলে নেন বা অনাপত্তি দাখিল করেন।
এই রায় পড়ার সময় আমি আমি অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম জানতে পারি। কিন্তু ধর্ষণের কথিত শিকার মহিলার পরিচয় নয়। কারণ, আইন তার পরিচয় গোপন রাখার সুবিধা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ধর্ষণের শিকার কোনো নারীর নাম প্রকাশ করা যাবে না। মামলা দায়েরের পর খেলোয়াড়ের নাম কিরণ ওবেরয়ের মত সংবাদপত্রে বন্যার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
কিরণ ওবেরয় সম্প্রতি তার সাথে সম্পর্ক থাকা এক মহিলাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রæতি দিয়ে তা না রাখায় মহিলা তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। তিনি এখন জেলে রয়েছেন। এভাবে অসংখ্য লোক এফআইআর দায়েরের পর থেকে কলঙ্ক আর লজ্জার শিকার হচ্ছেন। এফআইআর বাদ দিন, যদি কোনো অপরিচিত লোকের টুইটে কারো বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয় তিনিও একই রকম অবস্থায় পড়েন।
# মি টু আন্দোলনের সময় আমরা তা ঘটতে দেখেছি। অভিযোগের কোনো সত্যতা না থাকাটা কোনো ব্যাপার নয়। সমাজ ও মিডিয়া একজন মহিলার করা অভিযোগকে গসপেলের মত গণ্য করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিটি সামাজিক ভাবে ফাঁসির শিকার হয়। যার পরিণতিতে তার সামাজিক মর্যাদা ও জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। একজন পুরুষ যখন ধর্ষক, যৌন নির্যাতনকারী ও নারী উত্ত্যক্তকারী হিসেবে অভিহিত হয় তখন কারো চোখের একটি পাপড়িও কাঁপে না। কোনো কিছু প্রমাণিত না হলে কি হবে। একজন নারী যেহেতু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে, সেটাই যথেষ্ট।
প্রমাণ ছাড়া পুরুষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিণতি গুরুতর : ভারতের সংবিধানে বলা আছে যে লিঙ্গ, জাতিভেদ বা ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে বৈষম্যের শিকার করা যাবে না। সেখানে ভারতের আইন পুরুষদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক। একদিকে পুরুষরা ঘরোয়া সহিংসতা বা ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার হলেও তার স্বীকৃতি নেই।
অন্যদিকে তারা যদি কোনো মহিলা দ্বারা মিথ্যা অভিযুক্ত হয়, তারও তেমন কোনো প্রতিকার নেই। আমি সম্প্রতি একটি মামলা নিয়ে কাজ করছি যেখানে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত এক ব্যক্তি রোহটাকের দায়রা জজ কর্তৃক ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবার আদেশ পায়। কারণ কোনো অপরাধ না করা সত্তে¡ও তাকে ৮ মাস জেলে কাটাতে হয়েছে।
তিন বছর ধরে মিথ্যা মামলায় লড়ার পর এ ক্ষতিপূরণ পেতে মানুষটি দুই বছর লড়ছেন। এখন পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তার ক্ষতিপূরণ স্থগিত করেছে এ কারণে যে হাইকোর্ট মনে করেন যে মহিলা বিচারক তার বিচারিক ক্ষমতার এক্তিয়ারের বাইরে এ আদেশ দিয়েছেন। এ মানুষটি তার চাকরি হারিয়েছেন। তার কয়েকটি বছর হারিয়ে গেছে। সুনাম ও টাকা হারিয়েছেন তিনি। এখন হাইকোর্ট মনে করছেন তাকে অন্যায্যভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
দোষ করেছেন প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যায় না : মিডিয়া যাকে রোহটাক ডবল গণধর্ষণ মামলা নামে আখ্যায়িত করেছে, আমি সম্প্রতি সেই অভিযুক্তদের একজনের সাথে কথা বলেছিলাম। মামলাটি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। টিভি উপস্থাপক যতটা সম্ভব গলা চড়িয়ে সেই লোকগুলোর মুখ প্রদর্শন ও তাদের ধর্ষণকারী আখ্যায়িত করাসহ আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছিলেন এই একই লোকেরা একই মহিলাকে আবার গণধর্ষণ করতে পারে।
এ লোকদের সবার কাছে সপক্ষে কিছু কিছু প্রমাণ ছিল যার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ যা স্পষ্ট প্রদর্শন করছিল যে কথিত ঘটনার দিন তারা এ শহরেই ছিল না। কিন্তু কারো কাছেই তার কোনো গুরুত্ব ছিল না। মিডিয়ার বিচারের জেরে অভিযুক্তদের ৩ জন কারাগারে ছিল। যদিও পুলিশ পরিষ্কার জানত যে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
আজ রোহটাক পুলিশ যখন মহিলার দায়ের করা দ্বিতীয় গণধর্ষণের মামলা মিথ্যা আখ্যায়িত করে খারিজ করে দেয় তখন তার দায়ের করা প্রথম মামলার দুই অভিযুক্তও সসম্মানে খালাস পান। ভিওয়ানির আদালতে তাদের বিচার চলছিল। কিন্তু কোনো মিডিয়াই এ মামলা দুটির রায়ের কথা প্রকাশ করেনি।
মামলার এক অভিযুক্তের সাথে আমি কথা বলি। তিনি আমাকে বলেন যে পত্রিকার খবরের পর তাদের যখন আদালতে নেয়া হচ্ছিল তখন জনতা তাদের পিটিয়ে মারতে চাইছিল। সবাই তাদের রক্তের জন্য চিৎকার করছিল। কিন্তু যখন তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন তখন কেউ তা জানতেই পারল না।
আমি মিথ্যা ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। এই মানুষগুলোর যে যাতনা তা প্রকৃত ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার নারীর যাতনার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। মিডিয়ার করা অপমান এই মিথ্যা অভিযুক্তদের ওপর চিরস্থায়ী দাগ রেখে যায়।
ভারতীয় দন্ডবিধির ৪৯৮ক-র অপব্যবহার ভিত্তিক আমার ডকুমেন্টারি ‘শাদীর শহীদান’ (মার্টারস অব ম্যারেজ)-এ আমি পুরুষদের কয়েকটি মামলা নিয়ে আলোচনা করেছি। যারা মিথ্য অভিযোগের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এখন দন্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় (ধর্ষণের শাস্তি) মিথ্যা অভিযোগের কারণে সেই একই ঘটনা ঘটছে।
অভিযুক্ত ও ভিকটিমের পরিচয় গোপন রাখা কেন জরুরি : একজন নারীর পরিচয় যেমন গোপন রাখা হয় সেভাবে যৌন হামলা মামলায় অভিযুক্ত পুরুষের পরিচয় গোপন রাখার আবেদন জানিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে এটা অবশ্যই করতে হবে। যতক্ষণ না কোনো ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হয়, ততক্ষণ তার সুনামের হানি করা উচিত নয়।
তেমনি কোনো আদালত যদি দেখে যে কোনো নারী কোনো ব্যক্তিকে মিথ্যা অভিযুক্ত করেছে এবং সেক্ষেত্রে সন্দেহাতীত প্রমাণ থাকে তাহলে তাকেও একই রকম শাস্তি দিতে হবে। যেমন শাস্তি লোকটি সে অপরাধ করার জন্য পেত। সে সাথে সে নারীর নামও প্রকাশ করতে হবে।
এটা মিথ্যা অভিযোগকারিণীদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করবে। এ ব্যবস্থার অভাব টাকা আদায়কারীদের দেশের সর্বত্র তৎপরতা চালাতে ঠেলে দিয়েছে। যেখানে একই মহিলা টাকা আদায়ের জন্য কয়েক ব্যক্তিকে ধর্ষণ ও উত্ত্যক্তের অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
লিঙ্গসমতা স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারে : শুধু মেয়েদের অধিকারের ব্যাপারে লিঙ্গসমতা থাকতে পারে না, থাকা উচিত নয়। ধর্ষকদের নাম যদি প্রকাশিত হতে ও তারা নিন্দিত হতে পারে তাহলে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী মহিলাদেরও নাম প্রকাশ ও তাদের নিন্দা করতে হবে। যেসব পুরুষ ঘরে সহিংসতা করে, পণ চায়, উত্ত্যক্ত করে ও নারী ধর্ষণের জন্য অপরাধী বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাহলে অনুরূপ অপরাধকারিণী নারীদেরও আইনের আওতায় আনতে ও সেভাবে ডাকতে হবে।
মিডিয়া যদি নারীদের বিরুদ্ধে পুরুষদের অপরাধ আগ্রহের সাথে রিপোর্ট করতে পারে তাদের পুরুষদের বিরুদ্ধে নারী অপরাধীদের ক্ষেত্রেও একই রকম আগ্রহ দেখাতে হবে। আমরা যদি মর্যাদা, সম্মান ও একজন নারীর মর্যাদা বজায় রাখার অব্যাহত আলোচনা করি তাহলে পুরুষের বিরুদ্ধে নারীর অপরাধ সম্পর্কেও একই রকম মর্যাদা, সম্মান ও পুরুষের মর্যাদার কথাও আমাদের ভাবতে হবে।
পুরুষরা যে সব সমস্যার সম্মুখীন সে বিষয়ে সমাজ, মিডিয়া ও আইন প্রণেতাদের নীরবতা ধীরে। কিন্তু অব্যাহত গতিতে বিরাট অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে। একই সাথে নারীদের এটা ভাবতে উৎসাহিত করছে যে তারা পুরুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে বা তাদের হয়রানি করে পার পেয়ে যাবে। পুরুষরা নিষ্পত্তিযোগ্য বা সমান্তরাল ক্ষতি নয়, যাতে নারী সুরক্ষার বেদিতে বলি দিতে হবে। তারাও নারীদের মতই মানুষ। তাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলা নারী অধিকার নিয়ে কথা বলার মতই গুরুত্বপূর্ণ। # মি টুর মত # মেন টুও গুরুত্বপূর্ণ। (নিবন্ধকার দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ ভারতের লিঙ্গ সমতা কর্মী, ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাতা ও পুরুষ অধিকার প্রবক্তা।)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন