শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবন ১৪৩১, ২০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেটে মা ও স্বামীর সামনে এক বাউল শিল্পিকে ধর্ষণ : পুলিশের বিরুদ্ধে আইনি অসহযোগীতার অভিযোগ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:১১ পিএম

সিলেটে মা ও স্বামীর সামনেই ১৯ বছর বয়সের এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণের গুরুতর ঘটনা ঘটেছে। ওই গৃহবধূ পেশায় বাউল শিল্পী। এসময় তার সঙ্গী এক কিশোরী বাউল শিল্পীকেও করা হয় গণধর্ষণ।


ওই ধর্ষিতা গৃহবধূর (বাউল শিল্পী) মা বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান এমন তথ্য। তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাউল শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট সিলেটের সভাপতি শাহ তোফাজ্জল ভান্ডারি। প্রদত্ত তথ্য মতে, সংবাদ সম্মেলনকারী নারীর (৫৫) বিবাহিত মেয়ে (১৯) ও অপর একজন কিশোরী (১৫) পেশাদার বাউল শিল্পী। গত ৩১ অক্টোবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ইছাকলস গ্রামের মৃত শুকুর উদ্দিনের পূত্র মো. ফয়জুল হকের সঙ্গে ২ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জের পুটামারা গ্রামের ভানুদাসের বাড়িতে একটি অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনের জন্য বাউল শিল্পী পাঠানোর মৌখিত চুক্তি হয় ওই নারীর। ফয়জুলের কথামতো ২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই নারী তার শিল্পী মেয়ে ও মেয়ের স্বামী এবং কিশোরী বাউল শিল্পীকে নিয়ে জালালাবাদ থানাধীন তেমুখী পয়েন্ট থেকে একটি প্রাইভেট কারযোগে গানের অনুষ্ঠানে যাওয়ার লক্ষ্যে রওয়ানা হন। এসময় প্রাইভেট কারের পাশাপাশি একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে অভিযুক্ত ফয়জুলের সঙ্গে তার ৭-৮ জন সঙ্গী ছিলেন। পথিমধ্যে তারা শিল্পীদের গানের অনুষ্ঠানের দিকে না গিয়ে জালালাবাদ থানার শিবেরবাজার এলাকার বাছনা বিলের দিকে জোরপূর্বক নিয়ে যেতে থাকেন। শিল্পীরা এসময় পথ বদলের বিষয়টি জানতে চাইলে ভয় দেখানো হয় এবং অটোরিকশার যাত্রীরা নেমে অস্ত্রের মুখে শিল্পীদের টেনে-হেঁচড়ে নামিয়ে বাছনা বিলের ধান ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে দুই শিল্পীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন ফয়জুল ও তার সহযোগিরা। মা ও স্বামীর সামনেই গণধর্ষণের শিকার হন ১৯ বছর বয়েসি নারী শিল্পী। ধর্ষকরা ছাড় দেয়নি ১৫ বছরের কিশোরী শিল্পীকেও। এই নারকীয় নির্যাতন চলতে থাকে টানা ৪/৫ ঘন্টা। এক পর্যায়ে বিবাহিত নারী শিল্পীর স্বামী কৌশলে জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে জালালাবাদ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা। পরে পুলিশ ধর্ষিতাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ ধর্ষিতাদের পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি না করে থানায় আটকে রাখে এবং ধর্ষণের অভিযোগ না করতে চাপ প্রয়োগ করে। জালালাবাদ থানার ওসি ও এসআই সালা উদ্দিন যুক্তি দেখান- এতে মান-সম্মান নষ্ট হবে। এসআই সালা উদ্দিন তাদের জবানবন্দী শিখিয়ে দেন এবং তা মোবাইলে রেকর্ডও করেন। এরপর ওসির যোগসাজসে সালাউদ্দিন মনগড়া এজাহার লিখে স্বাক্ষর নেন ধর্ষিতার মার।


তোফাজ্জল ভান্ডারি সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন- গত ৪ নভেম্বর তাদের কোতোয়ালি থানার ভিকটিম সেন্টারে পাঠানো হয়। সেখানে দু’দিন রাখার পর ৬ নভেম্বর আদালতে তোলা হয়। তখন দুই ধর্ষিতার ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দী শুনে আদালত দ্রুত তাদের মেডিকেলে ভর্তির আদেশ দেন। ওসমানী মেডিকেলের ওসিসিতে একদিন থাকার পর আদালত দুই ধর্ষিতাকে নিজ জিম্মায় মুক্তি দেন। ঘটনার দিন প্রধান আসামি ফয়জুল ইসলাম গ্রেফতার হলেও এরপর এক মাসেরও বেশি সময়েও আর কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতাই নেই তাদের।

তিনি বলেন, এসআই সালা উদ্দিনের বিতর্কিত ভূমিকার ব্যাপারে এবং মামলায় ধর্ষণের ধারা সংযুক্ত করতে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। অভিযোগ দিয়েছি সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার এবং ডিআইজির কাছেও। বিষয়টি তদন্ত করছেন মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ)। ২৯ নভেম্বর তিনি তাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তোফাজ্জল জানান, এই মামলার ব্যাপারে ধর্ষিতাদের পরিবারের সদস্যরা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ তেমনি আরও নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের অবস্থা এখন অত্যন্ত করুন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন