রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা দারুণ হতাশ যেমন একদিকে অন্য দিকে ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে কৃষি শ্রমিকের অভাবে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের মুজরী পরিশোধ করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়েছে কৃষকদের। সবদিক বিবেচনা করে দেখা যায় কৃষকদের ঘরে নেই কোন ঈদের খুশি। তাছাড়া কুচক্রী প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মধ্যমে ধান ক্রয় করে গুদাম ভর্তি করা হলেও প্রকৃত সাধারণ কৃষকেরা এর সুফল পান নি বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষি প্রধান গোদাগাড়ী উপজেলায় ধানের দাম না থাকায় ঈদ বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। অনেকে বলছেন ধান বিক্রি করে বকেয়া ধার দেন পরিশোধ করতো কৃষকেরা কিন্তু কম মূল্যের করণে ধান বিক্রি করতে না পেরে ধারও পরিশোধ করছেনা ঈদের বাজারেও আসতে পারছেনা কৃষি পরিবার গুলি। কৃষকদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তাদের সরকারীভাবে অনুদান ওই পরিবার গুলির উপকার হতো।
তাছাড়া প্রান্তিক কৃষকেরা ইরি বোরো ধান চাষের জন্য বিভিন্ন দোকানে বাকিতে নেয়া বীজ, সার, কীটনাশকের দোকানে শুরু হয়েছে হালখাতা তাই অন্য বছরের জন্য দোকানের বাকি পরিশোধ না করলে আর বাকি পাওয়া যাবেনা এই ভেবে একদিকে যেমন হালখাতা করতে হিমশিম ক্ষেতে হচ্ছে। ঈদ বাজারে যেমন কৃষকদের আনা-গোনা নেই বললেই চলে।
ফনির আঘাতে ধান গাছ মাটিতে পড়ে যায়, দু-দফা শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করায় তড়িঘড়ি করে ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করায় ব্যর্থ হচ্ছেন। কেন না ধানের মূল্য কমে যাওয়ায় কৃষকেরা কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা মাড়াই করতে পারছেনা। যদি পাওয়া যাচ্ছে তবে খরচ গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ তিনগুণ
এদিকে স্থানীয় ফড়িয়া চক্র মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনছে মন প্রতি মন ৫৫০ টাকা হতে ৬৬০ টাকা দরে। আর একজন কৃষকের ধান কাটার জন্য শ্রমিকের পিছনে খরচ হচ্ছে দৈনিক ৬৮০ টাকা। কিংবা ৪/৬ আড়ি ধান মজুরি দিয়ে ধান কাটাই কৃষককে আরও বেশী মুজরী গুনতে হয়েছে। অর্থাৎ কৃষাণের মজুরি একমণ ধানের চেয়েও বেশি।
চাষীরা জানান ধান রোপণ, পরিচর্যা, সার-কৃষাণ ও ধান মাড়াইসহ ধান ঘরে তুলতে খরচ করেছে। এতে করে অধিকাংশ কৃষক দেনায় জড়িয়ে পড়ার তারা পেরে উঠছে না। অনেক কৃষক এখনই দেনায় জর্জরিত। রেলগেট এলাকার ধানের আড়ৎদার উজ্জল বলেন, ভাল আটাশ ধান হলে ৬৭০ টাকা মন ক্রয় করবেন আর মান খারাপ হলে ৫৫০ নীচে কিনবেন বলে জানান।
সরকার নির্ধারণ করেছে, প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা, গম ২৮ টাকা ও ধান ২৬ টাকা। এ হিসেবে ধানের মণ ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে এ দাম পাচ্ছে না। সরকারি ধান কে বা কারা কোথা থেকে ক্রয় করে তা সাধারণ কৃষকরা জানেন না। জানলেও ফড়িয়াদের কারণে ওই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন না কৃষকরা । একশ্রেণীর প্রভাবশালী কুচক্রীমহল প্রতিবছর ভারত থেকে নিন্মমানের পচা গম আমদানি করে রাতের আধারে খাদ্য গুদাম ভর্তি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ, তার পর বটবৃক্ষ হয়েছেন। দেখার যেন কেউ নেই দেমা খেয়ে বাঁচি কৃষক মরুক আর বাঁচুক এতে কিছু আসে যায় না।
ভাজনপুর এলাকার কৃষক দুলুদেব বলেন, ধানের ফলন কম দামও পাচ্ছি না। ৩ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। লাভের মুখ দেখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তড়িঘড়ি করে ধান কেটে ঘরে তুলতে হচ্ছে। এ সুযোগে কৃষাণরা তাদের মজুরি বেশি নিচ্ছে। একজন কৃষাণের দৈনিক মজুরি ৬/৭শ টাকা। এ টাকা খরচ করে ধান ঘরে তুললেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে লাভের পরিবর্তে লোকসানের বোঝা বইতে হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলার বিজড়া মৌজার কৃষক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ৮ বিঘা জমিতে ইরি বোরো ধান চাষ করতে সব খরচ মিলে ৭২ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। বর্তমান ধানের বাজার ৫৪০ থেকে ৬৬০ টাকা ফলে উৎপাদন ব্যয় উড়তে মন প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গোদাগাড়ী খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করার জন্য ধান নিয়ে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে ছিলাম, ধানের তাপমাত্রা ঠিক নেই, চিটা বেশী এ সব নানা ওজুহাতে ধান ক্রয় করেন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা। ফলে পরদিন শ্রমিক ম্যানেজ ধান রোদ্রে শুকিয়ে কোন প্রকারে ধান গুলি গুদামে দেয়া হয়। অনেক কৃষক ধান বিক্রি করতে না পেরে ফেরত নিয়ে গেছেন। পৌর এলাকার কৃষক আব্দুল মাতিন, শামসুল, নূরুল হক ও মজিবুর রহমান বলেন আমরা খাদ্য গুদামের ধান ক্রয়ের বিষয়টি জানি না আর গুদামে ধান বিক্রির জন্য নানা ঝামেলায় পড়তে হয় তাই চেষ্টা করিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন