বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

আওয়ামীলীগের বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হলেও এর রেশ কাটেনি, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা

রাজশাহী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৩:০২ পিএম

রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শেষ হয়েছে। তবে এর রেশ চলছে। আয়োজক দল আওয়ামীলীগ একটা সফল সমাবেশ করতে পারায় খুশী। বিশেষ করে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার প্রত্যাশিত সমাবেশ সুন্দরভাবে সফল হওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের প্রতি জানিয়েছেন আন্তুরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। তার পরিচ্ছন্ন নগরীর প্রশংসায় বেশ খুশী।

জনসভা ঘিরে মানুষের মাঝে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উম্মোচন করেন। রাজশাহীকেও স্মাট নগরী হিসাবে গড়ে তোলার কথা বলেন। সব উন্নয়ন রাজশাহীবাসীকে উৎসর্গ করেন। মানুষ সেজন্য তাকে ধন্যবাদ জানালেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির বিষয়টা নিয়ে কথা বলেছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের বড় অভাব। কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি কৃষি ভিত্তিক শিল্প কলরখানা। রেশম নগরী হিসাবে রাজশাহীর খ্যাতি থাকলেও সেই রেশম শিল্প এখন ধুকছে। বিদেশী আমদানী সুতায় ভর করে রাজশাহী সিল্ক নিয়ে বেঁচে আছে। এনিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। রেশমবোর্ড, রেশম গবেষনা সবকিছু চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। বন্ধ রেশম কারখানা সীমিত পরিসরে চালু হলেও তার অবস্থাও নাজুক। টেক্সটাইল মিল, পাটকল, চিনিকল ধুকছে।
শিক্ষানগরী হিসাবে রাজশাহীর পরিচিতি রয়েছে। এখানে বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নগরীর বাইরে থেকে এখানে পড়তে আসে লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী। এরাই এখন মূলত রাজশাহী নগরীর অর্থনীতির লাইফ লাইন। এখানে সম্ভাবনা থাকলেও পূর্নাঙ্গ শিক্ষা নগরী হিসাবে এখনো গড়ে ওঠেনি। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার মানুষের প্রত্যাশা ছিল প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ভেটেনারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষনা দিয়ে শিক্ষানগরীকে এগিয়ে নিবেন। এখানে সহজেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে ধান ও গম গবেষনা কেন্দ্র। বর্তমান অবকাঠামোতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করা যায়। অন্যদিকে কয়েকশ বিঘা জমি নিয়ে নগরীর পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে হাস মুরগী গরু ছাঁগল খামার। এগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখনই প্রচেষ্টা নিলে সহজেই ভেটেনারী বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব। এমন সব সম্ভাবনার কথা ভেবে মানুষের প্রত্যাশা ছিল তাদের স্বপ্ন পূরন হবে। আর শিক্ষা নগরী রাজশাহী হিসাবে খানিকটা হলেও পরিপূর্নতা পাবে। শিক্ষাঙ্গন কেন্দ্রীক অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এমন প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মিল না হওয়ায় মানুষ কিছুটা হতাশ হলেও হাল ছাড়েনি। বিজ্ঞজনরা বলছেন অবকাঠামোর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে তবে মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টার দিকেও সমান নজর দিতে হবে। বেকার থেকে পেটে ক্ষিদে রেখে সুন্দর পরিবেশ গড়া যায়না। সবকিছু বিস্বাদ লাগে। এই নগরীতে বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মহীন থাকায় তারা হতাশায় ভুগছে। অনেকে বিপথগামী হচ্ছে। বিষয়টা গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।
বিশাল প্রচার প্রচারনার পর সমাবেশ নিয়ে বাজারে দোকানে চায়ের কাপে ঝড় চলছে। পক্ষে বিপক্ষে যার যার মত বিশ্লেষন করছে। রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকে ট্রেন, বাস, ট্রাক বোঝাই করে নেতাকর্মী সমর্থকদের নিয়ে আসা হয় জনসভায়। এবার ব্যাতিক্রম ছিল প্রথমবারের মত রাজশাহীতে জনসভায় যাতায়াতের জন্য আটটি ট্রেনের বিশেষ ব্যবস্থা। যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ভাড়া দিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ একদিকে ভাল আয়ের তৃপ্তির ঠেকুর তুলছেন। সমাবেশে কত লোক হয়েছিল তা নিয়ে তর্ক বিতর্ক কম নয়। বড় জনসভা হবার কারন হিসাবে বলছেন একদিকে প্রধানমন্ত্রী অন্যদিকে ক্ষমতার ব্যবহার করে বড় জনসভা হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। এনিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তাছাড়া আওয়ামীলীগ একটি পুরনো দল। বিরোধীরা বলছেন সরকারী দল বলে কথা। ওদের জন্য সবকিছু ফ্রি। আর আমাদের বেলায় যত আঁটি সাটি। যত প্রতিবন্ধকতা হামলা মামলা হয়রানী আর শর্ত। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে বোঝাযেত কার কত জনপ্রিয়তা। নানা প্রতিকৃলতার মধ্যে এই মাদ্রাসা ময়দানে ৩ ডিসেম্বর বিএনপি রাজশাহী বিভাগীয় সফল সমাবেশ করেছে নানা প্রতিকুল অবস্থা মোকাবেলা করে। সাধারন মানুষ আলাপচারিতায় দু’দলের সমাবেশ নিয়ে মন্তব্য করছেন।
এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সতের বছরের সাবেক মেয়র ও এমপি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুর কথা হলো আমাদের সময় কার মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী নগরী গড়ে উঠছে। আধুনিক রাজশাহীর সূচনা হয়েছিল বিএনপির সময় তার আমলে। তিনি দু:খ করে বলেন আমি যেসব প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন সেগুলো এখন প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে করা হচ্ছে। এটা লজ্জার ব্যাপার বটে। তারপরও আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশে বাঁচতে চাই। সেজন্য যা যা করা দরকার তা করা সবার দায়িত্ব। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে নিতে চায়। সাধারন মানুষের প্রত্যাশা শান্তির নগরী রাজশাহীর পরিবেশ যেন শান্ত থাকে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন