শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স

রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা প্রায় সাড়ে নয় শতাংশ বেশি। এক অর্থবছরে আগে কখনও এত বেশি অর্থ দেশে পাঠাননি প্রবাসীরা। এর আগে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৩২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এরপর টানা দুই অর্থবছর রেমিট্যান্স কমেছে।

রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।

জানা গেছে, হুন্ডি ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছর থেকে দুই শতাংশ প্রণোদনার ফলে রেমিট্যান্স আরও বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৩৪ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের জুন ও আগের মাস মের তুলনায় যা কম। এর আগে গত মে মাসে ঈদকে কেন্দ্র করে অবশ্য রেকর্ড ১৭৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছর থেকে রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মানে একশ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে সুবিধাভোগী পাবেন ১০২ টাকা। এতে করে এবার ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন বাড়তে থাকা রেমিট্যান্স ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমেছিল। টানা দুই অর্থবছর রেমিট্যান্স কমায় দুশ্চিন্তায় পড়ে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে সহজে হুন্ডি ও ডলারের দর দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তখন রেমিট্যান্স কমছিল বলে বিভিন্ন পর্যালোচনায় উঠে আসে। এরপর হুন্ডি ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দেয় সরকার। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।

একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে হুন্ডি ঠেকাতে মানিলন্ডারিং আইনের শক্ত প্রয়োগ, সন্দেহজনক বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট বন্ধ, লেনদেন সীমা কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে রেমিট্যান্স আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল। এবার বেড়েছে নয় দশমিক ৪৮ শতাংশ।

নতুন বাজেটে প্রণোদনা দেওয়ায় আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রেমিট্যান্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস জুনে ১৩৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
সবমিলিয়ে ১২ মাসে (জুলাই-জুন) এক হাজার ৬৪০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। প্রবৃদ্ধির পরিমাণ নয় দশমিক ৪৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে; যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বছর জুড়েই রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো ছিল। রেকর্ড গড়ে অর্থবছর শেষ হলো। প্রণোদনা দেওয়ায় নতুন অর্থবছরে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কারনে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রেমিট্যান্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে দুই টাকা প্রণাদনা পাবেন। আর এ জন্য নতুন বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাজেট বক্তৃতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রেরণে বর্ধিত আয় লাঘব করা এবং বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থের ওপর আগামী অর্থবছর থেকে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করা হবে। এর ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে এবং হুন্ডি ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে বলে আশা করেন অর্থমন্ত্রী।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত।

এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গতকাল রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গত ৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১২৪ কোটি ১০ লাখ ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নীচে মে আসে। রেমিট্যান্স বাড়ায় তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের উপরে অবস্থান করেছে মূলত রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে।

চলতি মাসের ৭/৮ তারিখে মে-জুন মেয়াদের আকুর দেনা পরিশোধ করতে হবে। তারপর অবশ্য রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসবে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ৩০ জুন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭০ পয়সা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Fahadi Nadia ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫১ এএম says : 0
রক্ত আর ঘামে ভেজা শ্রমিকদের পাঠানো টাকা এই দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিদেশে পাচার করে !! আর শ্রমিকরা হয়ে যায় কামলা আর বদলা! তারপর ও তো তাদের কোন সম্মান সুরক্ষা দেওয়া হয়না
Total Reply(0)
Himu Alahi ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫২ এএম says : 0
ভাল কথা!! তো ইন্ডিয়া বাংলাদেশ থেকে কত টাকা রেমিটেন্স পায় এই পরিসংখ্যান যদি একটু উল্লেখ করতেন আরও খুশি হতাম!
Total Reply(0)
Faruk Hussain ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫৩ এএম says : 0
প্রবাসীদের আয়ের রেকর্ড থাকলেও তাদের মূল্যায়ন এর কোন রেকর্ড নাই।সব জায়গায় আছে তাদের হয়রানির রেকর্ড।বিশেষ করে দূতাবাসগুলো তাদের তেমন কোনো উপকারে আসে না
Total Reply(0)
Firoz Al mamun ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫৪ এএম says : 0
দেশের উন্নয়ন যতটুকু হইছে তার ৮০% অবদান প্রবাসীদের, স্যালুট সেই সব ভাইদের যারা দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশে পড়ে আছে
Total Reply(0)
Ibm Nazrul Islam ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫৪ এএম says : 0
সকল প্রবাসীদের ধন্যবাদ। আপনারাই টিকিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশেরর অর্থনীতি!
Total Reply(0)
Md. Bodiruzzaman ৩ জুলাই, ২০১৯, ২:৫৫ এএম says : 0
প্রবাসী‌দের আ‌য়ে বাংলা‌দে‌শের অর্থনী‌তি সমৃদ্ধ হ‌য়, আর সেই প্রবাসী‌দেরকেই বিমানবন্দ‌রে হয়রা‌নি ক‌রেন কিছু অসাধু ব্য‌ক্তি!
Total Reply(0)
MD. Hasin ৩ জুলাই, ২০১৯, ১০:৫০ এএম says : 0
প্রবাসীদের এই দুই টাকা প্রণোদনা দেয়ার দরকার নেই , দরকার প্রবাসীরা দেশে ছুটিতে গেলে যে, কেউ যদি জানতে পারে এই লোকটা প্রবাসে থাকে তাহলে তার উপর ঘাটে ঘাটে প্রায়ই হয়রানির স্বীকার হয় তা বন্ধ করার ব্যাবস্থা করুন। পরার্মশ : এবারের বাজেটে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ কৃত টাকা গুলো দিয়ে দেশে প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুন।
Total Reply(0)
শওকত হোসেন ৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:৪৬ পিএম says : 0
ভিসা বন্ধ থাকা দেশগুলোর ভিসা খুলে দিতে সরকারের প্রবাসীকল্যাণ নীতি জোরদার করা দরকার
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন