শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্বকাপে ভারতের উদ্দেশ্যে বিমানে বার্তা ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ৩:১১ পিএম

বিশ্বকাপে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মধ্যেই হঠাৎ অভিনব উপায়ে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের উদ্দেশে দেয়া হল বার্তা। খেলা চলার সময় লিডসের আকাশে উড়তে থাকা বিমানের গায়ে লাগানো ব্যানারের মাধ্যমে। বিমানটি তিনবার চক্কর দেয়। সেখানে প্রথমে লেখা ছিল, ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’, তারপরে লেখা দেখায়, ‘ইন্ডিয়া স্টপ জেনোসাইড অ্যান্ড ফ্রি কাশ্মীর।’ সর্বশেষ লেখা ছিল, ‘হেল্প এন্ড মব লিঞ্চিং ইন ইন্ডিয়া।’

এক বার নয়, একাধিক বার বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের মাথার উপরে চক্কর কাটতে থাকল সেই বিমান। যা নিয়ে উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে ফোন করে খুব জোরের সঙ্গে আইসিসিকে বলা হয়েছে, এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত হতেই হবে।

খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার হেডিংলেতে ম্যাচ চলাকালীন দেখা যায়, মাঠের উপরে আকাশে চক্কর কাটছে একটি বিমান। আর তার লেজের দিক থেকে উড়ছে একটি ব্যানার। তাতে লেখা ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’। গোল করে মাঠের উপরে বেশ কয়েক বার চক্কর কেটে সেই বিমান অদৃশ্য হয়ে যায়। তত ক্ষণে ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ শুরু হয়ে গেছে এবং প্রায় ভর্তি গ্যালারিতে আশি শতাংশ দর্শক ভারতীয়।

সঙ্গে সঙ্গে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দেয়, এ রকম স্পর্শকাতর বার্তা লেখা ব্যানার নিয়ে হেডিংলের ঠিক উপরে বিমানটি উড়ল কীভাবে? মাঠের কাছেই লিডস ব্র্যাডফোর্ড বিমানবন্দর। খেলা চলাকালীন অনেক বিমানই উড়ে গেল মাঠের উপরের আকাশ দিয়ে। সাধারণত, বিমানবন্দরের আশপাশে কঠোরতম নিরাপত্তা থাকে। তার উপরে বিশ্বকাপের মতো ইভেন্ট বলে বাড়তি নিরাপত্তার বলয় থাকার কথা। সেই নিরাপত্তার বলয়কে ফাঁকি দিয়ে একটি বিমান বার বার কীভাবে ভারতের উদ্দেশে রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে আকাশে ঘুরতে থাকল, সেটাই এখন জানার বিষয়।

কয়েক দিন আগে এ মাঠেই রক্তারক্তি হয়ে যায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচে। গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ হয়। সেই ম্যাচেও আকাশে এ রকমই বার্তা নিয়ে উড়েছিল বিমান। সে দিন দেখা গিয়েছিল ‘জাস্টিস ফর বেলুচিস্তান’ ব্যানার। তার পরেই গ্যালারিতে ঝামেলা শুরু হয়।

এদিন অবশ্য এক বার নয়, বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে নয়টায় (ইংল্যান্ডের সময় সাড়ে চারটে) তিন বার আকাশে চক্কর মারে ওই বিমান। এবং, তিন বারই নতুন নতুন বার্তা লেখা উড়তে দেখা যায় বিমানের লেজ থেকে। প্রথমে লেখা ছিল ‘জাস্টিস ফর কাশ্মীর’। তখন ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা বেকায়দায়। যশপ্রীত বুমরারা যখন স্লগ ওভার বোলিং করছেন, বিমানটিকে দ্বিতীয় বার দেখা যায় হেডিংলের আকাশে। এ বার আরও সরাসরি, আরও কড়া বার্তা লেখা— ‘ভারত, গণহত্যা বন্ধ করে কাশ্মীরকে মুক্তি দাও।’ এর পর রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল যখন ভারতকে অনায়াস জয়ের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন, মোটামুটি ২৩ ওভার নাগাদ বিতর্কিত বিমান ফিরে আসে। এ বার ব্যানারে লেখা— ‘হেল্প এন্ড মব লিঞ্চিং ইন ইন্ডিয়া।’ অর্থাৎ ‘ভারতে গণহত্যা বন্ধ করতে সাহায্য করুন’।

যদিও রোহিত রোশনাই ছাপিয়ে, কিন্তু এ দিনের আলোচনায় হেডিংলের আকাশে উড়তে থাকা বিমান এবং তার পরিচালক। কে বা কারা ভারতের প্রতি এমন বার্তা নিয়ে উড়ছিল? আইসিসির দাবি, তারা পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্জি জানিয়েছে, দ্রুতই যেন বিমানচালকদের খোঁজ করা হয়। তবে নালিশ করেও সুরাহা কিছু হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।

আনন্দবাজার বলছে, স্থানীয় কয়েকজনের কথায়, হেডিংলের আশপাশের অঞ্চল এবং ইয়র্কশায়ারে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রাথমিক খোঁজখবরে মনে করা হচ্ছে, এখানকার কেউ এমন কাণ্ড বাধিয়েছে। ভারতীয় বোর্ডের ফোনে ঘটনার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। কোহলিদের বোর্ড যদি চাপ দিতেই থাকে, তা হলে ইয়র্কশায়ার পুলিশকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হতে পারে।

রোহিতের সেঞ্চুরির ঠিক আগে চতুর্থ বারের জন্য ফিরে এল বিমানটি। এ বার তার বার্তা— ‘লাভ ক্রিকেট, লাভ মুমতাজ-লিডস’। কেউ কেউ তা দেখে বলতে শুরু করলেন, মুমতাজ নামে এখানে একটি জনপ্রিয় রেস্তরাঁ রয়েছে।

অন্যদিকে, জানা গেছে, তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিয়ে ম্যাঞ্চেস্টার এবং বার্মিংহামে সেমিফাইনাল চলার সময় মাঠের উপরের আকাশে বিমান চলাচলই সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথা হয়েছে।

আইসিসি সূত্রের খবর, এই দুই শহরেরই পুলিশ রাজি হয়েছে খেলা চলাকালীন মাঠের উপরের আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ রাখার জন্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলার মাঠে মাথার উপর দিয়ে বিশেষ বার্তাসহ বিমান এর আগেও চক্কর কেটেছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কোচ জোসে মোরিনহোকে সরানোর দাবি তোলা হয়েছিল আকাশপথে তুলে ধরা এমন ব্যানারে। কিন্তু রাজনৈতিক বার্তাসহ স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে লোকের নজর টানার জন্য আকাশপথের ব্যবহার নজিরবিহীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন