রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইসলামফোবিয়া ব্রিটিশ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে

৩১ শতাংশ লোক ইসলামকে হুমকি মনে করে

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

নতুন এক পরিসংখ্যানে এ কথার সত্যতা স্বীকৃত হয়েছে যে ব্রিটিশ সমাজের সকল অংশে ইসলামফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ব্যারোনেস ওয়ারসি আট বছর আগে মন্তব্য করেছিলেন যে ব্রিটেনে ইসলামফোবিয়া ‘ডিনার টেবিল পরীক্ষা পাশ’ করেছে। দুঃখের বিষয়, যুক্তরাজ্যে মুসলিম বিরোধী মনোভাব এক বিরাট সমস্যা হয়ে আছে।

জনসাধারণের মনোভাবে স্থায়ী, ক্রমবর্ধমান, উদার পরিবর্তন দেখা গেলেও ইসলামফোবিয়া শুধু যারা প্রকাশ্যে ধর্মান্ধতা প্রদর্শন করে তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের অত্যন্ত সম্মানীয় জায়গা মধ্যবিত্তের ডিনার টেবিলেও সেটা আছে বলে ওয়ারসির মন্তব্য আজো একই রকম প্রাসঙ্গিক।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে জনসাধারণ অন্য ধর্মীয় গ্রুপগুলোর চেয়ে মুসলিমদের সুনির্দিষ্ট ভাবে পৃথক করে দেখছে। ১৮ শতাংশ মানুষ মুসলমানদের প্রতি চরম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যদিও ইসলামকে পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতি মারাত্মক হুমকি বলে মনে করা লোকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে (২০১৭ সালের জুলাইতে ৫২ শতাংশ থেকে কমে ৪২ শতাংশে এসেছে)। তবুও জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ ৩১ শতাংশ মনে করে যে ইসলাম ব্রিটিশ জীবনধারার প্রতি একটি হুমকি। মাত্র ৩২ শতাংশ মনে করে যে ইসলাম ও ব্রিটিশ জীবনধারা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কেন মানুষ এমনটা মনে করে? উদ্বেগজনক হচ্ছে যে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিষিদ্ধের বিষয়টিকে বড় করে তুলে ধরার চেষ্টা করে বলে মনে হয়। একই সাথে ব্রিটিশ আইন ও মূল্যবোধের প্রতি ইসলামকে হুমকি মনে করে। ইসলামকে ব্রিটিশ জীবনধারার প্রতি হুমকি মনে করা ৪১ শতাংশ মানুষ তা বলে এ কারণে যে তারা মনে করে ইসলাম মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি অসহিষ্ণুতাকে লালন করে। তারা মনে করে, যারা ইসলামকে ব্যঙ্গ, সমালোচনা বা নিজ বিশ্বাস ও ধারণা মত প্রদর্শন করে- ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে সহিংস ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানায়। এদিকে এক তৃতীয়াংশের (৩৬ শতাংশ) বেশি মানুষ যারা মনে করে ইসলাম ব্রিটিশ জীবন ধারা প্রতি হুমকি, তারা বলে যে তারা মনে করে ইসলাম ব্রিটিশ আইনের স্থলে শারিয়া আইন চালু করতে চায়।

মুসলিম-বিরোধী মনোভাব তাদের মধ্যে বেশি যারা অভিবাসন ও বহুমুখী সংস্কৃতিকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে দেখে। এরা বেশিরভাগই হচ্ছে সে সব লোক যারা নিম্নস্তরের বেশি লেখাপড়া করেনি।
এদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীরও ইসলামফোবিয়া নিয়ে বড় রকম সমস্যা রয়েছে। সাম্প্রতিক ভোটে রক্ষণশীল দলের সদস্যদের মধ্যেও ইসলফোবিয়া সঙ্কটের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে। বিস্ময়কর ভাবে ৬০ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে ইসলাম সাধারণ ভাবে পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য এক হুমকি। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণা মতে, টোরি দলের সদস্যদের ৮৬ শতাংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং ৯৭ শতাংশই শে^তাঙ্গ। অন্যদিকে ৫৪ শতাংশ ব্রিটেনবাসীই হচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং ৮৭ শতাংশ হচ্ছে সাদা।
তবে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ইসলামফোবিয়া শুধু কনজারভেটিভদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যারা সাধারণত উদারপন্থী ও সহিষ্ণুতা মূলক মনোভাবের, তাদের মধ্যেও মুসলিম বিরোধিতা দেখা যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, গার্ডিয়ান পাঠকদের এক চতুর্থাংশ মনে করেন যে ইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্য এক মারাত্মক হুমকি। ১৪ শতাংশ মনে করেন যে ইসলাম ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রতি হুমকি এবং ১৮ শতাংশ মনে করেন যে শারিয়া আইন হচ্ছে অগ্রহণযোগ্য এলাকা যেখানে কোনো অমুসলিম প্রবেশ করতে পারে না।

একই সাথে বিভিন্ন স্থান থেকে এই মুসলিম বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ ঘটছে। যারা অধিকতর বৈরী মনোভাবাপন্ন। তারা উগ্র ডানপন্থীদের জাতি প্রতিস্থাপনের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ভীত। তারা মনে করে যে মুসলমানদের জন্মহার অমুসলিমদের চেয়ে বহু বেশি গুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা ব্রিটিশ জনগণের স্থলাভিষিক্ত হবে অথবা তাদের দুশ্চিন্তা যে ব্রিটিশ মুসলিমরা বিশ^ব্যাপী ইসলামী সন্ত্রাসের সাথে যুক্ত হবে।

ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহবাদীরা তাদের ভয়ের পিছনে যুক্তি তুলে ধরে যে ইসলাম ব্রিটিশ সংস্কৃতির প্রতি হুমকি। কারণ তাদের বিশ্বাস যে ইসলাম নারী ও মেয়েদের প্রতি বৈষম্য করে। তাদের দাবি, নারীদের প্রতি ইসলামের নিপীড়ন অন্য ধর্মে ও সংস্কৃতিতে নারীদের সাথে যে আচরণ করা হয় তার চেয়ে পৃথক ও খারাপ।

মুসলিম সম্প্রদায়ে নারীদের প্রতি দুর্ব্যবহার নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে, যেমন আছে অন্য বহু সম্প্রদায়েও। কিন্তু উদারপন্থীরা মনে করে যে মুসলিম নারীদের তাদের সংস্কৃতি, পিতৃতান্ত্রিক ও প্রাচ্যবাদী আবহ থেকে রক্ষা করতে হবে। ছবিটা অনেক বেশি জটিল। বস্তুত, আমাদের জনমত জরিপে দেখা গেছে যে মুসলিমরা কমই মনে করে যে নারীবাদ পুরুষদের প্রান্তিকীকৃত করছে এবং খ্রিস্টান বা হিন্দুদের চেয়ে সমাজের বেশি ক্ষতি করছে।

চরম ডানপন্থীদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যারা বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী তাদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি করছে। ইসলামোফোবিয়া জাতি বিদ্বেষ নয়, কারণ এটা একটি মতাদর্শ বিষয়ে বা ধর্ম বিষয়ে- এ ধারণা ঘৃণার জাতীয়তার জন্ম দিচ্ছে।

হোপ নট হেট-এর গবেষণায় দেখা যায় যে ২০১৬ সালের গণভোটের পর প্রগতিশীলরা নানা বিষয়ে তাদের উদারপন্থী অবস্থান কঠোর করেছে। যাহোক, উদারপন্থীদেরও নিজেদের সংস্কারের দিকে তাকানো দরকার। প্রতিটি ডিনার টেবিলে চরম ডানপন্থীদের চ্যালেঞ্জ করার বিষয় মুসলিম বিরোধী বিদ্বেষকেও চ্যলেঞ্জ করাকে অপরিহার্য করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন