এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে ছেড়ে যাচ্ছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা বিষয়ক পরিচালক ড্যান কোটস। সিআইএ এবং এনএসএ সহ যুক্তরাষ্ট্রের ১৭টি গোয়েন্দা এজেন্সির তদারকির দায়িত্ব ছিল তার ওপর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতির সঙ্গে তিনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিতে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল অব্যাহত। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে বিদায় নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তার মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন প্রমুখ। খবর বিবিসি।
ড্যান কোটসের বিদায় উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটে বলেছেন, আগস্টের মধ্যভাগে পদত্যাগ করবেন ড্যান কোটস। তার পদে তিনি মনোনয়ন দেবেন টেক্সাসের কংগ্রেসম্যান জন র্যাটক্লিফকে। র্যাটক্লিফ দেশের জন্য উৎসাহমুলক কাজ করবেন এবং নেতৃত্ব দেবেন।
ড্যান কোটস ও ট্রাম্পের মধ্যে বেশির ভাগই বিরোধ দেখা দিয়েছে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে। ১৭টি গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সির দায়িত্বে থাকার পরও ড্যান কোটসের সময়টা ভাল যায় নি। তার সঙ্গে প্রায়ই ঠুটোঠুটি লেগে থাকতো ট্রাম্পের। কারণ, ট্রাম্প গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া সমালোচক। ইরান থেকে যে হুমকি আসছে সে বিষয়ে গোয়েন্দা প্রধানরা অসাড় এবং নিষ্ক্রিয় বলে জানুয়ারিতে সমালোচনা করেন ট্রাম্প।
ওদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশে পদত্যাগপত্রে ড্যান কোটস লিখেছেন, তার আড়াই বছরের দায়িত্ব পালনকালে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সম্প্রদায় এ যাবতকালের মধ্যে শক্তিশালী হয়েছে। এর ফল হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এখন সময় এসেছে আমার জীবনের নতুন অধ্যায়ে সরে যাওয়ার। পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে মারাত্মক বিরোধপূর্ণ অবস্থায় আসা সত্ত্বেও ফেব্রুয়ারিতে তিনি বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে তার পদে থাকতে বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ড্যান কোটসের যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, ইরানের পারমাণবিক চুক্তি এবং উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্পের উদ্যোগ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক একজন গোয়েন্দা বিষয়ক সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ট্রাম্পের সঙ্গে যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক তার প্রেক্ষিতে নিজেকে পদ থেকে সরিয়ে নেয়া অপরিহার্য হিসেবে দেখেছেন ড্যান কোটস। প্রেসিডেন্ট তাকে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে একপেশে করে ফেলেছেন বলে মনে করে থাকতে পারেন তিনি। ড্যান কোটস গত বছর স্বীকার করেন, হেলসিংকিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্প ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বিষয়ে তাকে অবহিত করেন নি। ড্যান কোটস বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট আমাকে বলতেন কিভাবে এটা হওয়া উচিত, তাহলে আমি তাকে একটি ভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে বলতাম। যখন তিনি ভøাদিমির পুতিনের হোয়াইটস হাউজে প্রস্তাবিত সফরের কথা শুনতে পান তখন ড্যান কোটস বিস্ময়ে হেসে ফেলেন এবং একটি পাবলিক ইভেন্টে বলে ওঠেন, ওটা স্পেশাল কিছু হতে যাচ্ছে।
এছাড়া উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ড্যান কোটসের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। তিনি গত জানুয়ারিতে মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছেন, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে বলে মনে হয় না। এটা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের ঠিক উল্টো। কারণ, ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, পিয়ংইয়ং আর কোনো হুমকি নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন