স্টাফ রিপোর্টার : দেশে ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে এখনও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ-ভারত-মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে অসংখ্য মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগী তুলনামূলক বেশি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার দেহে পরিবর্তন আসায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি কোনোভাবেই কমছে না। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম বলেছেন, এসব ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাক ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থাসহ সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে একদিন দেশ থেকে ম্যালেরিয়া মুক্ত হবেই। গতকাল রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশনে অনুষ্ঠিত ‘ম্যালেরিয়া: বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক, বাংলাদেশের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. কমর রেজওয়ান ও ব্র্যাকের টিবি, ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও লাইন ডাইরেক্টর (সিডিসি) প্রফেসর ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামছুজ্জামান। জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, সমকাল ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের ওয়াশ ও ম্যালেরিয়া কর্মসূচির প্রোগ্রাম হেড ডা. মোকতাদির কবীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মো. নাসিম এমপি বলেন, গ্রামে-গঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়ায় রাস্তাঘাট তৈরি হওয়ার কারণে মানুষের মাঝে দিন দিন হাঁটার প্রবণতা কমছে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে। এজন্য তিনি মানুষকে অভ্যাস পরিবর্তনের তাগিদ দেন। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে পোলিওমুক্ত করেছি আশা করছি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একদিন বাংলাদেশ ম্যালেরিয়ামুক্ত হবেই। কারণ, এখানে সরকারের পাশাপাশি ব্র্যাকসহ অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম কর্মীরা এবং সর্বস্তরের মানুষ কাজ করছে।
ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামছুজ্জামান ম্যালেরিয়া রোগ, বাহক ও মৃর্ত্যুর ঝুঁকি উল্লেখ করে বলেন, ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত ৫৬৫৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন মাত্র ২ জন। দেখা যাচ্ছে, মৃত্যু কমলেও শনাক্তকরণ ঠিকই উল্লেখযোগ্য হারে থাকছে। তাই ম্যালেরিয়া ঝুঁকি হ্রাসে গেøাবাল ফান্ডের মতো আরো অন্যান্য দাতা সংস্থার আথিক সহায়তা প্রয়োজন।
ব্র্যাকের টিবি, ম্যালেরিয়া ও ওয়াশ কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে দেশের সীমান্তগুলিতে বেশি নজরদারি বাড়ানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার দেহে বা কীটতত্তে¡ কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা-তা নিয়ে পর্যবেক্ষণ বা গবেষণার তাগিদ দেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩২ দশমিক ৫ লাখ লোক ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ঝুঁকির দিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা এখনো ম্যালেরিয়ার উচ্চপ্রবণ হিসেবে বিবেচিত। একই সঙ্গে সরকারের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মুলকরণে ম্যালেরিয়াজনিত স্থানীয় আক্রান্ত ও মৃর্তুর সংখ্যা শূন্যের কাছাকছি নামিয়ে আনা। এজন্য সরকারের সহায়তায় ব্র্যাকের নেতৃত্বে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৭টি দীর্ঘস্থায়ী কীটনাশকযুক্ত মশা বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৭ লাখ ২১ হাজার ৫৩২টি কীটনাশকযুক্ত মশারি কার্যকর রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন