শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

কুড়িগ্রামে এক সপ্তাহে ৫০ বাড়ি তিস্তাগর্ভে

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ১৫ আগস্ট, ২০১৯

প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২০দিন বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার সহ ১৬ নদ-নদী অববাহিকার ৯ লাখ ৫৮ হাজার বানভাসি মানুষ। পানি কমার সাথে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত এক সপ্তাহে ৫০ বাড়ি তিস্তার পেটে চলে গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ২০ কি.মি. দূরে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে খর¯্রােতা তিস্তা নদী। ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে এ বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে। গত ৩/৪ বছরের ভাঙনে ইউনিয়নের তিনভাগের দু’ভাগ এলাকা তিস্তা গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদীতীরে ভাঙন কবলিতদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গত দেড় মাস ধরে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। গত এক সপ্তাহেই অর্ধ-শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিতদের অনেকেই খোলা আকাশে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে নদীতীর রক্ষা বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরানোর অভিযোগ উঠেছে পাউবোর বিরুদ্ধে। ফলে সেই এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বাঁধের পঞ্চাশ ফুট পাশ থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা কতটুকু পরিবেশ বান্ধব তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শনিবার সরজমিনে ভাঙন কবলিত চতুরা ও কালিরহাট এলাকায় দেখা যায়, খোলা আকাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি পরে আছে। কালিরহাট এলাকার পঁচাশি বছরের বৃদ্ধা সোহাগী জানান, বাপ-মায়ে আদর করি নাম রাখছিল সোহাগী। স্বামীও চলি গেল, সেইসাথে সোহাগ-সুখও কাড়ি নিল তিস্তা। দীর্ঘশ^াস ফেলে রোমন্থন করছিলেন তিনি পুরনো দিনগুলি। আর তার চোখের কোল বেয়ে ঝড়ে পরছিল অশ্রæ। সাংবাদিক এসেছে শুনে নারায়ণ চন্দ্র বর্মন (৬৩) ছুটে এলেন। বললেন, ‘বাবারে ২০ বার বাড়ি ভাঙছি। হামরা এ্যালা নি:স্ব হয়া গেছি। হামাকগুলার দেকপের কাঁইয়ো নাই। টেকা পয়সা নাই। জায়গাও কিনবার পাবার নাগছি না। হামরা পথের ভিখারী হয়া গেছি। সরকার হামারগুলার জন্য থাকবার জাগা করি দেউক।’ চতুরা হংসধর বাঁধের মাথা এলাকার আহাম্মদ আলীর রাত কাটে নির্ঘুমে। ঘরের উঠোনে চলে এসেছে নদী। যে কোন মূহুর্তে বিলিন হয়ে যেতে পারে। ফলে আতংক আর উদ্বেগে সময় কাটছে তার পরিবারের। তিনি জানালেন, বিদ্যানন্দ বাজার, তৈয়ব খাঁ, ডাংরা, ডাবুরহালান, ডারিয়া, হংসধর, কালিরভিটাসহ সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙছে তিস্তা। গত এক সপ্তাহে ভেঙে গেছে চতুরার মনতাজ আলী, আমজাদ আলী, হাফিজুর রহমান, আলী মন্ডল, মমতাজ, আইজুল ও জমির হোসেনের বাড়ি।

জয়ন্তী রানী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, বাপুরে বাড়ি আগুনে পুড়লেও ভিটা থাকে। কিন্তু নদী খাইলে কিছুই থাকে না। চতুরা এলাকার আজাদ, কামরুল জানান, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত শ্রমিকরা বাঁধ নষ্ট করে মাটি কেটে জিও ব্যাগে ভরাচ্ছে। এখন এই রাস্তা দিয়ে গাড়ী-ঘোড়া চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের প্রশ্ন করা হলে তারা জানান, বাঁধ থেকে মাটি কেটে জিও ব্যাগ ভরাচ্ছি। আবার ড্রেজার দিয়ে সেটা পুরণ করছি। বাঁধ থেকে মাত্র ৫০গজ দুরেই বসানো হয়েছে ড্রেজার। তাই দিয়েই মাটি পূরণের কথা জানালেন তারা।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, গত এক দশকে আমার ইউনিয়নের এক চতুর্থাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। আগে ভোটার ছিল ২৯ হাজার এখন তা ১৩ হাজার। এগার মৌজার মধ্যে ৭টি মৌজা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বার হাজার ভোটার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। এখানে জিও ব্যাগ ফেলানো হলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। আমরা সরকারের কাছে ভাঙন ঠেকাতে দ্রæত স্থায়ী কাজ চাই।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের লোকজন কালিরহাট এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ করছে। কেউ বাঁধ কেটে মাটি ভরার কাজ করে থাকলে সেটা আমাদের জানা নেই। আমরা চর থেকে নৌকায় বালু এনে কাজ করছি। জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ভাঙন কবলিতদের পূণর্বাসনে সরকার কাজ করছে। আমরা ফিজিবিলিটি দেখে স্থায়ীভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন