শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রাজশাহীতে ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং

রুখতে মাঠে প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত

রাজশাহী সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩১ পিএম

মুঠোয় মুঠোয় পর্ণ, হাত বাড়ালেই ইয়াবা গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য মিলছে। এসব অসক্তিতে ঝুঁকে পড়ছে তরুন কিশোররা। একসাথে বসে মাদক সেবন কিংবা মুঠোফোনে পর্ণ দেখার দৃশ্য খুব সহজেই নজরে পড়ছে শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে। বস্তী থেকে বিত্তবানদের সন্তানরা সবাই জড়িয়ে পড়ছে। নেশার খরচ মেটাতে প্রথমে নিজ ঘরে চুরি। তারপর বাইরে চুরি, ধর্ষন, খুনের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় এরা ছোট ছোট গ্রুপে গড়ে তুলেছে। ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এই কিশোর গ্যাং। বিত্তবানরা আদূরে কিশোর সন্তানদের আবদার মেটাতে কিনে দিচ্ছেন মোটর বাইক। এসব বাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। ছিনতাই কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বেপরোয়া বাইক চালাতে গিয়ে প্রান হারানোর ঘটনা কম নয়। কিশোর গ্যাং দলবেধে আড্ডা, ইভটিজিং থেকে শুরু করে ধর্ষন, ছিনতাই করছে। 

বিশেষত মেয়েদের স্কুল কলেজের সামনে এদের ইভটিজিং সাধারন খেলাধুলার মত হয়ে গেছে। আবার নিজেদের স্কুল কলেজ ছেড়ে বিনোদন কেন্দ্র বিশেষ করে পদ্মার তীরজুড়ে আড্ডা জমাচ্ছে। স্কুল কলেজের পোশাক পরেই চলে আসছে। কারো কারো সঙ্গে থাকছে জুটিয়ে নেয়া বান্ধবী। এসব বান্ধবীরাও পর্ণো ও মাদকাশক্তিতে আসক্ত হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। অনেকে ধর্ষনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসে দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে পুরানো পথে হাটছে। নগর পুলিশের খাতায় ছিনতাইকারীদের নামের তালিকায় রয়েছে বহু কিশোরের নাম। নগরীতে পুলিশের তালিকাভূক্তি বখাটে রয়েছে ৮১ জন। আর জেলায় ৯৭ জন। তবে এ সংখ্যার চেয়ে বখাটেদের সংখ্যা অনেক অনেক গুন বেশী।
গ্যাং কালচারের সর্বশেষ নির্মম শিকার হয়েছে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ফরদিন ইসনা আশরিয়া রাব্বি (১৮) ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবার জন্য স্টেশনে যাবার পথে বর্নালীর পেছনে তাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ঘটনায় পুলিশ রনক নামে একজনকে গ্রেফতার করে। গত ১৭ আগষ্ট রাজশাহী মহানগর হাকিম এর আদালতে বিচারক সেলিম রেজার কাছে হত্যার ঘটনা সবিস্তারে বর্নণা করে জবানবন্দী দিয়েছে। হেরোইনের টাকা জোগাড় করতে খুনের ঘটনা ঘটায়। সম্প্রতি বখাটেদের হাতে নাজেহাল হন নগরীর প্রানকেন্দ্র সাহেব বাজার মনিচত্ত্বর এলাকায় রুয়েটের শিক্ষক ও তার স্ত্রী।
সবদিক বিশ্লেষন করে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন অসুস্থ রাজনীতি ও কিছু রাজনৈতিক নেতাদের আনুকুল্যে কিশোর গ্যাং কালচার ডালপালা মেলছে। তাছাড়া মানসিক ও শারিরীক বিকাশের সময় বাচ্চারা বাবা-মাকে খুব বেশী সময় কাছে পাচ্ছেনা। বেশীরভাগ বাবা মা সন্তানের সামর্থের চেয়ে বেশী প্রত্যাশা করছেন। ফলে হতাশা মানসিক চাপ থেকে মুুক্তি পেতে মাদকে আশক্ত হচ্ছে। আর এর টাকা যোগাড় করতে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা।
তাছাড়া কিশোরদের মধ্যে সম্প্রতি র্স্মাট ফোন কালচার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমে আশক্ত হচ্ছে পর্নোতে ভেঙ্গে পড়ছে মানবিক মূল্যবোধ সমাজের রীতিনীতি। এরাই ফেসবুকে গ্রুপ সৃষ্টি করে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কাজে। সীমান্ত এলাকায় কিশোর তরুনদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক দ্রব্যের বাহক হিসাবে। এক সময় এরাও মাদকাশক্ত হয়ে পড়ছে।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় বখাটেরা দিন দিন বেপারোয়া হয়ে উঠছে। ছিনতাই খুন ধর্ষন বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করে লাভ নেই বলে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েও বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনের পথে হাটেন না। ভয় উল্টো আরো হয়রানীর।
শিক্ষাবিদরা বলছেন বখাটেরদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশপাশি প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। তাদের সন্তানরা কোথায় যায় কাদের সাথে মেশে তারা খোজ খবর রাখতে হবে। পুলিশেরপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা বখাটেদের গ্যাং কালচারের ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন। ইভটিজিং বন্ধে রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজের সামনে গোয়েন্দা নজরদারী রাখছি।
রুয়েট শিক্ষক লাঞ্চিত হবার পর নড়ে চড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। তারা ইভটিজারদের রুখতে মাঠে নামিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। দুজন ম্যাজিষ্ট্রেট ইভটিজিং বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতের দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মুঠোফোন নম্বর গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। কেউ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে ঐ ফোনে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারবেন। জেলা প্রশাসক হামিদুল হক জানিয়েছেন এ ব্যাপারে জেলা ও মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন