শান্তির প্রতীক কবুতর। অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করেন, আবার কেউ বাডুজ্যিকভাবেও। তেমনি মীরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের মসজিদিয়া এলাকার মাছিমার তালুক গ্রামের নুরুল হক মেস্ত্রী বাড়ির মৃত আমিনুল হক এর ছেলে মো. মাইনুল ইসলাম মিলন শখের বসে কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার সহযোগিতা ও পরামর্শে অনেকেই বাডুজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে তার মত স্বাবলম্বী হয়েছে। আর এতে ভাগ্যের চাকা ঘুরছে স্থানীয় অনেক বেকার যুবকের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাইনুল ইসলাম মিলনের খামারে প্রায় ৫০টিরও বেশি বড় বড় খাঁচায় পালন করা হচ্ছে দেশি-বিদেশি প্রায় ২৫ জাতের কবুতর। যার প্রতি জোড়া কবুতরের দাম দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। তিনি জানান বর্তমানে তার খামারে সকল খরচ বাদ দিয়ে মাসিক প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় হয়ে থাকে।
খামারের মালিক মিলন জানান, ছোট বেলা থেকে তার শখ কবুতর পালন করা। ছোট বেলা থেকে সে উন্নত জাতের কবুতর ক্রয় করে বাড়িতে পালন করতেন। এরপর খুলনার বাগেরহাটের ৩ যুবক শাওন, রিপাত, করিম (আর এস কে গ্রুপ) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণী বিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পাশ করে কবুতর খামার গড়ে তুলেন তাদের ও উক্ত গ্রুপের সভাপতি শীলা মজুমদারের পরামর্শে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাডুজ্যিক ভাবে কবুতর পালন শুরু করেন।
খামারের কবুতর সম্পর্কে জানতে চাইলে মিলন বলেন, বর্তমানে তার খামারে প্রায় ২৫০ জোড়া কবুতর রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। বিদেশি জাতের প্রতিটি কবুতর প্রতি মাসে বাচ্চা দেয়। বর্তমানে তার খামারে আছে, জেকোবিন, গিরিবাজ, সিরাজী, পানখীল ময়ূরী, শো কিং, স্টেচার, গৃয়াচুল্লী, সুয়াচন্দন, আবাল, আর্ক এঞ্জেল, আইসমুক্ষি, মোম্বাইসেটিং, নান, ক্রস দোয়াচলা, পেশওয়ারী, দেশিয় বাংলা, ঝর্ণাশাটিং, জার্মানশীল ইত্যাদি জাতের কবুতর রয়েছে।
বিক্রি করার কলাকৌশল সম্পর্কে তিনি জানান, স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে কবুতরের ছবি তুলে তার ফেসবুক পেইজ (এম পিজিয়ন মীরসরাই বাংলাদেশ) পেইজে আপলোড করে দেন। আর এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা তার সাথে যোগাযোগ করে কবুতর ক্রয় করে থাকেন।
তিনি অনেকটা ক্ষোপ প্রকাশ করে বলেন যে, পোল্টি, মৎস্য, কৃষি সহ বিভিন্ন বিভাগের জন্য ঋণ প্রদান করলেও কবুতর খামারীদের জন্য কোন প্রকার ঋণ প্রদান করা হয় না। যা অত্যান্ত দুঃখ জনক। এই ক্ষেত্রে সরকারী কিংবা বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খুব দ্রুত কবুতর খামার সম্প্রসারণ করে অনেক বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি মনে করেন। বর্তমানে তার খামারে মোট ৫জন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাডুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার জানান, অল্প পুঁজি ও স্বল্প জায়গা নিয়ে কবুতর পালন করা যায়। আমরা উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ কবুতর খামারীদের সকল প্রকার সহযোগিতা ও ভ্যাকসিন প্রদান করে থাকি। এছাড়াও লাইভ স্টক ডায়েরী নামক সফটওয়ারের মাধ্যমে খামারীদের উৎস প্রদান করা হয়। কবুতর পালন এখন লাভজনক হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ বাডুজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে। অনেক বেকার যুবক বাড়িতে কবুতর পালন করে একদিকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, অন্যদিকে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। কবুতর পালনের সরকারী কোন ঋণের কোন ব্যবস্থা না থাকলেও কৃষি ঋণ হিসেবে কবুতর খামারীরা ঋণ নিতে পারেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন