সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা
সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন বার্নি স্যান্ডার্সকে পেছনে ফেলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এপি। গত ৬ জুন এপি জানায়, সুপার ডেলিগেটদের বিপুল সমর্থনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২ হাজার ৩৮৩ ডেলিগেটের সমর্থন পেয়ে গেছেন হিলারি। তবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে এখনও মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়নি। এর আগে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থিতা বাছাইয়ে হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তখন এই সাবেক ফার্স্ট লেডি জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। আর এজন্য হিলারি ক্লিনটনকে বারাক ওবামার ২ মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৮৭২ সালে প্রথমবারের মতো কোনও নারী প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েছিলেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা ভোটাধিকার পায়। ওই নারী প্রার্থী একটিও ইলেকটোরাল ভোট পাননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যে চল্লিশজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সবাই ছিলেন পুরুষ। এমনকি মার্কিন দ্বিদলীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনও দলই নারীদের প্রার্থী হিসেবে বাছাই করেনি। আর তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত না হলেও ইতিহাসের হাতছানি রয়েছে হিলারির সামনে। এপি-র প্রতিবেদন প্রকাশের পর ক্যালিফোর্নিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে হিলারি বলেন, ‘খবর অনুসারে, আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের মুখোমুখি। তবে আমাদের এখনও অনেক কাজ করতে হবে, তাই নয় কি? কাল আমাদের ছয়টি নির্বাচন রয়েছে, আর আমরা প্রতিটা ভোটের জন্য জোরদার লড়াই করব।’
প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স শিবির শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, জুলাইয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশনেই কেবল সুপার ডেলিগেটরা তাদের ভোট নিশ্চিত করতে পারবেন। এর আগে এভাবে সুপার ডেলিগেটদের ভোট গণনা করাটা অন্যায় বলে জানান তারা। এক বিবৃতিতে স্যান্ডার্স শিবির জানিয়েছে, ‘কনভেনশন পর্যন্ত আমাদের কাজ হলো, সুপার ডেলিগেটদের উপলব্ধি করানো যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বার্নিই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রার্থী।’ বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে আছেন ১ হাজার ৫২১ জন ডেলিগেট। তবে সুপার ডেলিগেটদের মধ্যে তিনি মাত্র ৪৮ জনের সমর্থন পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সার্বিক দিক বিবেচনায়, যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট হবেন ডেমোক্রেট হিলারি ক্লিনটন। তিনিই জানুয়ারিতে শপথ নিয়ে প্রবেশ করবেন হোয়াইট হাউজে এমনটিই মনে করছেন তত্ত্বাভিজ্ঞমহল। বার্নি স্যান্ডার্স নন, হিলারিই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন। ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন দিয়ে এ কথা বলেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর জেরি ব্রাউন। তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভয়াবহ প্রার্থিতা থামাতে একমাত্র পথ হলো ক্লিনটনকে ভোট দেয়া। তিনি বলেছেন, ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স যদি কোন দুর্বিপাকে মনোনয়ন পেয়ে যান তাহলে তার চূড়ান্ত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি হিলারিকে সমর্থন দিলেন।
ব্রাউনের ভাষ্য, হিলারি বাছাইপর্বে ইতোমধ্যে জয়লাভ করেছেন। এখন সময় এসেছে ট্রাম্পকে পরাজিত করার ব্যাপারে মনোযোগ দেয়ার। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব জিইয়ে রাখার সময় এটি নয়। ব্রাউনের এই সমর্থন, তা যতই উত্তাপহীন হোক না কেন, হিলারির জন্য তা মূল্যবান প্রমাণিত হতে পারে। গত কয়েক সপ্তাহে স্যান্ডার্স হিলারির সঙ্গে তার ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন। কোনো কোনো জনমত জরিপে স্যান্ডার্স এগিয়ে ছিলেন। এই অবস্থায় প্রগতিশীল ও বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্রাউনের এই সমর্থন হিলারি শিবিরকে উৎফুল্ল করেছিল। ব্রাউন এক চিঠিতে হিলারির প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সেই চিঠির কপি হিলারির ক্যাম্পেইন কমিটি দ্রুত বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমের কাছে বিলি করেন।
হিলারির প্রতি ব্রাউনের এই সমর্থন কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ১৯৯২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বাছাই পর্যায়ে হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সে সময় তাদের দুজনের মধ্যে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়, তা বহুদিন টিকে ছিল। বিল ক্লিনটনের অনুরোধে কিছুদিন আগে সাবেক দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। এ থেকে ভাবা হচ্ছে, তারা নিজেদের বৈরিতা মিটিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে চালানো এক জরিপে রিপাবলিকান দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে ফের এগিয়ে গেছেন ডেমোক্রেটিক দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপের ফলাফলে এ ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। মে মাসে অল্প সময়ের জন্য হিলারিকে পেছনে ঠেলে দিয়ে জনমত জরিপে এগিয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। মূলত ট্রাম্পের ঘোষিত নীতির বিরুদ্ধে হিলারির আক্রমণ শাণিত হওয়ার পরই জনসমর্থনে এই পরিবর্তন ঘটে। এছাড়া ট্রাম্পের নিজ নামে কথিত বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সেনাদের জন্য তোলা অর্থের বিতরণ নিয়ে সৃষ্ট সমালোচনাও ট্রাম্পকে পিছিয়ে দিয়েছে। জরিপে সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ জানিয়েছেন তারা হিলারিকে সমর্থন করবেন, অপরদিকে ৩৫ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন করবেন বলে জানিয়েছেন। দুজনের কাউকেই সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছেন ১৯ শতাংশ ভোটার। ৩০ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত ১,৪২১ জন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জরিপটি করা হয়।
এতে আসছে ৮ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পক্ষকালের ব্যবধানে জনসমর্থন ফের হিলারির দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছে বলে জরিপে আভাস পাওয়া গেছে। রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে প্রয়োজনীয় ডেলিগেট সমর্থন ট্রাম্প এরইমধ্যে জয় করে নিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করাই শুধু বাকি। প্রাইমারির এক পর্যায়ে মনে করা হয়েছিল যে, হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করতে সমর্থ হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়া তার জন্য মোটেই সহজ হবে না বরং রিপালিকানদের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের সম্ভাব্য প্রার্থীর বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকা-ের কারণে তিনি অনেকাংশেই মার্কিন জনগণের আস্থা হারিয়েছেন। ফলে মার্কিন জনগণের কাছে এখন আস্থাভাজন প্রার্থী সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি রডহেম ক্লিনটন। আগামী দিনে তিনি হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন